
অপরাধী প্রত্যর্পণ বিল বাতিলের দাবিতে গত জুন মাসে থেকেই উত্তাল হয়ে ওঠে হংকং। আস্তে আস্তে সে আন্দোলন সরকার বিরোধী আন্দোলনে রপ নেয়। এরপর আরা কিছু দাবি যুক্ত হয়ে তা হয়ে ওঠে গণতন্ত্রী আন্দোলন। এবার তাতেই ঘি ঢেলে দিলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এতে করে বেজায় চটেছে চিন।
হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনকারীদের প্রতি কড়া সমর্থন জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ। চিনের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান জানান দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিল পাস হয়েছে।
বিলগুলো আইনে পরিণত হতে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন লাগবে। এরপর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বাক্ষর বা ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে এ প্রক্রিয়ার সমাপ্তি ঘটবে।
এর মধ্যে ‘হংকং ডেমোক্রেসি অ্যাক্ট’, ‘প্রটেক্ট হংকং অ্যাক্ট’, হংকংয়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের স্বীকৃতি সংক্রান্ত বিল অন্যতম। মঙ্গলবার পরিষদের রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেট সদস্যরা কণ্ঠভোটে এ বিলগুলো পাস করেন। জবাবে চিন তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। চিনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে নাক না গলাতে কড়া হুশিয়ারি দিয়েছে বেইজিং।
রয়টার্স বলছে, বাণিজ্যযুদ্ধ নিয়ে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের আলোচনার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদে এ বিলগুলো পাস হল। প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যরা জানান, তারা চিনের বিরুদ্ধে আগ্রাসী অবস্থান নিতে এবং চার মাস চলা হংকংয়ের আন্দোলনে সমর্থন প্রকাশেই বিলগুলোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
বিলগুলো হলো:
১.
‘হংকং হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেমোক্রেসি অ্যাক্ট’ বিলে হংকংকে বিশেষ সুবিধা দেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবছর শহরটির স্বায়ত্তশাসন বলবৎ আছে কি না, সে সম্পর্কে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রত্যয়নপত্র নেয়ার কথা বলা হয়েছে।
২.
‘প্রটেক্ট হংকং অ্যাক্ট’ বিলে শহরটির প্রশাসনের কাছে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হতে পারে এমন সামরিক ও বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণের যন্ত্রপাতি বিক্রি বন্ধে নিষেধাজ্ঞা দিতে বলা হয়েছে।
৩.
তৃতীয় বিলটিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হংকংয়ের সম্পর্কের স্বীকৃতি এবং শহরটির বাসিন্দাদের আন্দোলনের অধিকারে সমর্থন জানানো হয়।
৪.
চতুর্থ বিলটিতে চীনা টেলিকম জায়ান্ট হুয়াওয়ের নির্বাহী মেং ওয়ানঝুকে যুক্তরাষ্ট্রে বহিঃসমর্পণে চীনের বিরোধিতার প্রতিক্রিয়ায় কানাডার ভূমিকার প্রশংসা করা হয়েছে।

ছবি: এইচকেএফপি
হংকংয়ের স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকিতে ফেলার দুষ্ট উদ্দেশ্যে মার্কিন আইনপ্রণেতারা এসব বিল এনেছেন বলে অভিযোগ করেছে চিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। চিনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গ্যাং শুয়াং বলেন, সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও অগ্রগতির স্বার্থ রক্ষায় চীন কার্যকর ব্যবস্থা নেবে। অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়।
এদিকে হংকংয়ের নেতা ক্যারি ল্যাম বুধবার পার্লামেন্টে বার্ষিক ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন’ ভাষণ প্রদানকালে বিভিন্ন প্রশ্নের মুখে তা স্থগিত করতে বাধ্য হন।
বিবিসি জানায়, টানা বিক্ষোভের পর এদিন প্রথমবারের মতো পার্লামেন্ট অধিবেশন বসে। এ অধিবেশনেই প্রত্যর্পণ বিলটি প্রত্যাহারের সুযোগ ছিল। কিন্তু ল্যাম অধিবেশনের শুরুতেই তার বক্তব্য শুরু করেন। এ সময় বিরোধীরা চিৎকার চেঁচামেচি করতে থাকেন। তাদের অনেকে টেবিলের ওপর উঠে যান। এ সময় তারা ‘পাঁচটি দাবি- একটিও কম নয়’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন।
বিরোধী নেত্রী তানিয়া চ্যান হংকংয়ের সংকটের জন্য ল্যামকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ক্যারি ল্যামের দুই হাত রক্তে রঞ্জিত। আমরা তার পদত্যাগ চাই। তার সরকার চালানোর মতো কোনো যোগ্যতা নেই।
বিক্ষোভকারীদের ৫টি দাবি হল: ১. বিক্ষোভকে দাঙ্গা হিসেবে না দেখা। ২. গ্রেফতার নেতাকর্মীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা। ৩. পুলিশি নৃশংসতার নিরপেক্ষ তদন্ত হতে হবে। ৪. সর্বজনীন ভোটাধিকার বাস্তবায়ন করতে হবে এবং ৫. প্রত্যর্পণ বিল প্রত্যাহার করতে হবে।
উল্লেখ্য, ব্রিটিশ উপনিবেশ থাকা হংকংকে ১৯৯৭ সালে চিনের হাতে তুলে দেয়ার পর থেকে স্বায়ত্বশাসনের ভিত্তিতে এক দুই শহর নীতিতে চলে আসছিলো হংকং। সম্প্রতি অপরাধী প্রত্যার্পণ বিল নিয়ে বিরোধীদের তোপের মুখে পড়ে হংকং এর স্থানীয় সরকার। বিরোধীদের দাবি এ আইনের সুযোগে চিন হংকং এর নাগরিকদের ওপর খবরদারি করবে। এ নিয়ে গত জুন মাস থেকে তুমুল আন্দোলন শুরু হয়। যা ৯৭’ এর পর দেশটিতে সর্ববৃহৎ আন্দোলনে পরিণত হয়েছে।
/এসএস

