
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘আমি বিরোধীদের চ্যালেঞ্জ করছি, ক্ষমতা থাকলে জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে তারা স্পষ্ট কথা বলুক। নির্বাচনি ইস্তেহারে বিরোধীরা বলুক, ক্ষমতায় এলে তারা ৩৭০ ধারা ও ৩৫-এ ধারা ফিরিয়ে আনবে।’ রোববার (১৩ অক্টোবর) মহারাষ্ট্রে এক নির্বাচনি সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার সময় তিনি একথা বলেন।
মোদি বলেন, ‘আজ আমি বিরোধীদের চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি, যদি আপনাদের সাহস থাকে তবে এই নির্বাচনে এবং আগামী নির্বাচনের ইশতেহারে ঘোষণা করুন যে আমরা ৩৭০ ধারা ফিরিয়ে আনব। আমরা ৫ আগস্টের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করব। অন্যথায় কুমিরের কান্না বন্ধ করুন।’
তিনি বলেন, ‘জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ আমাদের জন্য শুধু একটা জমি নয়, এটা ভারতের মুকুট। নিরাপত্তার কারণে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছি। কিন্তু কিছু দল ও নেতাদের বিরোধিতা দুর্ভাগ্যজনক।’ প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদের সমালোচনা করে জম্মু-কাশ্মীর সম্পর্কে কংগ্রেস-এনসিপি জোটের অবস্থানকে পাকিস্তানের মতো বলে অভিহিত করেন।
তিনি বলেন, ‘কাশ্মীরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে ৪ মাসও লাগবে না। দুর্ভাগ্যের সঙ্গে এটা বলতে হচ্ছে যে আমাদের দেশের কিছু রাজনৈতিক দল, কিছু রাজনীতিবিদ জাতীয় স্বার্থে নেয়া ওই সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজনীতি করতে ব্যস্ত। গত কয়েক মাসে কংগ্রেস-এনসিপি নেতাদের বিবৃতি দেখুন, জম্মু-কাশ্মীর সম্পর্কে গোটা দেশ যা ভাবছে, তাদের চিন্তাভাবনা তার সম্পূর্ণ বিপরীত। প্রতিবেশী দেশটির সাথে তাদের মিল রয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের নহাটা যোগেন্দ্র নাথ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ের সিনিয়র অধ্যাপক ড. শেখ কামাল উদ্দীন বলেন, ‘৩৭০ ধারা সম্পর্কে উনি বা ওনার দল যে কথা বলছে, সেই ৩৭০ ধারা একটা বিশেষ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে গ্রহণ করা হয়েছিল এবং সেদিন যখন ৩৭০ ধারা গ্রহণ করা হয় জাতীয়স্তরের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হয়েই ওই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল।’
তিনি বলেন, ‘এবারে ওরা (বিজেপি) সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে বিশেষ করে কাশ্মীরে যারা ক্ষমতাসীন সরকারের অংশ ছিল তারা এবং জম্মু-কাশ্মীরের জনগণের যারা নেতৃত্ব দেন সেখানকার মানুষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা না করে যে সিদ্ধান্ত (৩৭০ ধারা বাতিল) নেয়া হয়েছে সেই সিদ্ধান্তের মধ্যেই তো রাজনীতি রয়েছে।’
ড. শেখ কামাল উদ্দীন বলেন, ‘বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললেই তার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার তকমা সেঁটে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। অর্থাৎ ভারতীয় সংবিধানে বাক স্বাধীনতার যে অধিকার দেয়া হয়েছে তাতে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে।’ একটা একনায়কতন্ত্রের শাসন চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে যার ফলে স্বাধীন ভারতে বাস করা সত্ত্বেও মানুষ মুখ খুলতে পারছেন না। এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ও শাসক দলের যত্নশীল হওয়া উচিত বলেও ড. শেখ কামাল উদ্দীন মন্তব্য করেন।
৫ আগস্ট ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল করে অঞ্চলটিকে দুই টুকরো করে দেয় দিল্লি। ওই দিন সকাল থেকে কার্যত অচলাবস্থার মধ্যে নিমজ্জিত হয় দুনিয়ার ভূস্বর্গ খ্যাত কাশ্মির উপত্যকা। এই পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে কাশ্মীরজুড়ে মোতায়েন করা হয়েছে বিপুলসংখ্যক অতিরিক্ত সেনা। ঘটনার আগেরদিন থেকে ইন্টারনেট-মোবাইল পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়। গ্রেফতার করা হয়েছে সেখানকার বিপুলসংখ্যক স্বাধীনতাপন্থী ও ভারতপন্থী রাজনৈতিক নেতাকে।
ইসমাঈল আযহার/পাবলিক ভয়েস

