
শেখ নাসির উদ্দিন, খুলনা: খুলনা মহানগরীতে সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে ২০১৩ সালে আড়াই হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্প হাতে নেয় ওয়াসা। প্রকল্পের আওতায় মধুমতি নদী থেকে পাইপলাইনে পানি এনে পরিশোধন (ট্রিটমেন্ট) করে তা খুলনা শহরে সরবরাহ করা হবে। ২০১৭ সালের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও দু’দফায় সময় বাড়ানোর পরও প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি।
এদিকে গ্রীষ্মের প্রচন্ড দাবদাহে মহানগরীতে সুপেয় পানির সঙ্কট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বাসাবাড়িতে খাবার পানি নেই, রান্নার পানি নেই, নেই গোসলের পানি। পানির জন্য মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত। বিভিন্ন স্থানে দিন-রাত পাম্প চালিয়েও ভূগর্ভস্থ পানি উঠছে না। এছাড়া অনেক এলাকায় ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ ও ময়লা থাকায় তা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। পানির এমন সঙ্কটে নগরবাসীর অসন্তোষ বাড়ছে। ওয়াসা বলছে, পানির স্তর স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক নিচে নেমে যাওয়ায় এ সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, খুলনা মহানগরীতে বর্তমানে প্রতিদিন পানির চাহিদা রয়েছে ১১ কোটি লিটার। চাহিদার মাত্র ৪০ ভাগ পানি খুলনা ওয়াসা সরবরাহ করে। কিন্তু ভূগর্ভস্থ পানির লেয়ার ৩৩ থেকে ৩৫ ফুট নিচে নেমে যাওয়ায় তাও সরবরাহ করতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত কয়েকদিন নগরীর সোনাডাঙ্গা, গোবরচাকা, শেখপাড়া, বসুপাড়া, ফারাজিপাড়া, মির্জাপুর রোড, বাইতিপাড়া, আহসান আহমেদ রোড, টুটপাড়া, বসুপাড়া, পশ্চিম বানিয়াখামার, বাবু খান রোড এলাকায় পানির ভয়াবহ সমস্যা রয়েছে। পানির জন্য প্রতিদিনই এসব এলাকার বাসিন্দাদের ছুটতে হচ্ছে এ বাড়ি থেকে ও বাড়ি।
ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ জানান, ওয়াসার পুরাতন লাইনের সংযোগ শহরের অনেক স্থানে নেই। সেখানে ব্যক্তিগত নলকূপগুলোতেও পানি পাওয়া যায় না। ফলে নগরীতে পানির সঙ্কট বেড়েছে। তবে ওয়াসার পানি সরবরাহ প্রকল্পের কাজ আগামী জুন মাসে শেষ হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে প্রতিদিন গড়ে ১১ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা যাবে।
তবে ওই প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রিতায় ক্ষোভ রয়েছে নগরবাসীর। বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন আন্দোলনের মহাসচিব জিএম সজীব মোল্লা বলেন, ওয়াসার কাজে সড়কে খোঁড়াখুঁড়িতে মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামত হয়নি, আবার কাঙ্খিত সুপেয় পানিও সরবরাহ করতে পারেনি। ২০১৭ সাল থেকে ওয়াসা নতুন পাইপলাইনে পানি দেওয়ার কথা বললেও অনেক গ্রাহকের বাড়িতে এখনো সংযোগ পর্যন্ত দিতে পারেনি।
ওয়াসার প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী এম ডি কামাল উদ্দিন আহম্মেদ জানান, কয়েকটি এলাকায় গ্রাহকরা নতুন করে আবেদন করায় তাদের বাড়িতে পাইপলাইনের সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। তবে পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় এরই মধ্যে মধুমতি নদী থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে রূপসা শোধনাগারে পানি আনা হয়েছে।
এই শোধনাগার থেকে রূপসা নদীর তলদেশ হয়ে খুলনা শহরের ৭টি রিজার্ভারে পানি আনা হবে। বর্তমানে এলাকাভিত্তিক ওয়াসার পানি সরবরাহ মিটার (ডিএমএ) বসানো হচ্ছে। আগামী মাসেই পরীক্ষামূলকভাবে গ্রাহককে সুপেয় পানি সরবরাহ করা হবে। তিনি বলেন, ওয়াসার পুরানো পানির লাইন অধিকাংশ ক্ষেত্রে ‘ড্রেন ক্রস’ করে যাওয়ায় ‘স্কেভেটর’ দিয়ে ময়লা পরিষ্কারের সময় অসচেতনতায় তা ফেটে যায়। এতে পানিতে দুর্গন্ধ ও ময়লা আসতে পারে। তবে এলাকাভিত্তিক সমস্যা চিহ্নিত করতে ওয়াসার কর্মীরা কাজ করছেন। নতুন পাইপলাইনে পানি সরবরাহ করা হলে এ ধরনের সমস্যা থাকবে না।
জিআরএস/পাবলিক ভয়েস

