
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, এটা তাদের গায়ের জোরের কথা, প্রকৃত ঘটনা মানুষ প্রতিদিন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। এদেশে আইনের উর্ধ্বে উঠে ব্যক্তির হুকুমই শেষ কথা। আইন আছে, প্রশাসন আছে, আদালত আছে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আছে; কিন্তু সবই সরকারের কথায় উঠবস করে। ক্ষমতাসীনদেরকে জনগণ কী মনে করছে সেই তোয়াক্কা না করে সরকারের লোকেরা বলে বেড়াচ্ছে দেশে গণতন্ত্র আছে। সরকার কোথাও হস্তক্ষেপ করছে না।
আজ রোববার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন রিজভী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতারা অপরাধ করার পরেও কখনো কখনো আদালত কর্তৃক শাস্তি পেলেও নির্বিঘ্নে
মন্ত্রীত্ব করতে পারেন। বিরোধী দলের লোকদের হত্যা করার পরেও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমা পেয়ে যায়। অথচ দেশের জনপ্রিয় নেত্রী ও তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় আটকে রেখে জামিনে বাধা দেয়া হচ্ছে।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, আওয়ামী নেতারা বলে বেড়ান বিএনপিকে নাকি উপড়ে ফেলা হবে। গণতন্ত্র হত্যা করে রাজনীতিকে ধ্বংস করার হুমকি দিচ্ছেন আ.লীগ নেতারা। আমরা সেই কথারই বাস্তবায়ন সর্বক্ষেত্রে দেখতে পাচ্ছি। তবে অতীতে এই হুমকিদাতারা নিজেরা হারিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, সাংবাদিক দম্পতি হত্যায় প্রভাবশালীদের জড়িতের আভাস ভেসে আসার কারণে সেই হত্যা মামলার আর অগ্রগতি হয় না। দেশব্যাপী নারী-শিশু-কিশোরী নির্যাতনসহ অন্যের সম্পত্তি দখলের পরেও কেবলমাত্র ক্ষমতাসীন দলের লোক হওয়ার কারণে তাদের টিকিটি ছুঁতে ভয় পায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকেরা, অথবা তাদের দুস্কর্মের সঙ্গী হয়।
রিজভী বলেন, আ.লীগ এমনই দল যেখানে নিজেদের লোকেরা পাপ করার পরেও তা মোচন হয়ে যায়। আ.লীগ কখনোই গণতন্ত্রের অনুশীলনের কোন ঐতিহ্য সৃষ্টি করতে দেয়নি। আ.লীগ একদলীয় মানসিকতা থেকে কখনো বের হতে পারেনি। সেইজন্য এদের হাতে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার বারবার ধ্বংস হয়েছে। সুযোগ ও মর্যাদার সমতা, চিন্তা, মত প্রকাশ, সংগঠন ও আন্দোলন করার ক্ষমতা, জীবন-যাপনের অধিকার, ব্যক্তি স্বাধীনতা, সম্পদের মালিকানা রক্ষার স্বাধীনতা-অর্থাৎ নাগরিক স্বাধীনতাসহ সব স্বাধীনতাই বারবার বিপজ্জনক হুমকির মুখে পড়েছে।
রিজভী বলেন, সব মামলায় জামিন লাভ করা সত্ত্বেও জেলগেট থেকে আবারও নতুন মামলা দিয়ে গ্রেফতার আ.লীগের এক মহা আবিষ্কার, বিএনপিসহ বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে নতুন নতুন মামলা দিয়ে পূণঃগ্রেফতার বর্তমান আওয়ামী নাৎসীবাদী সরকারের বিরোধী দল দমনের আরেকটি পৈশাচিক দৃষ্টান্ত। এটি একটি চরম বেআইনী পন্থা, এই পন্থা অবলম্বন করা হয় শুধুমাত্র বিরোধী দলকে পর্যুদস্ত করার জন্য।
তিনি বলেন, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি, যুবদলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে গত বছর গ্রেফতারের পর তাকে বেশ কিছু সময় গুম করে রাখা হয়। গ্রেফতারের পর গুরুতর অসুস্থ হওয়ার পরেও অসংখ্যবার রিমান্ডে নেয়া হয়। এক কারাগার থেকে অন্য কারাগারে স্থানান্তরের মাধ্যমে দৈহিক ও মানসিক নির্যাতন অব্যাহত রাখা হয়। যেমনভাবে করা হচ্ছে দলের যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেলকে।
এই বিএনপি নেতা বলেন, ভোটারবিহীন এই মধ্যরাতের সরকারের কাছ থেকে কল্যাণকর কিছু হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ এই সরকার জনগণের কাছে জবাবদিহিতাকে ঘৃনা করে। এই কারণেই নুসরাত, শাহীনুর, তনু, মিতুর মতো অসংখ্য নারী-কিশোরী প্রতিনিয়ত হত্যার শিকার হচ্ছে।
রিজভী বলেন, মানুষের চোখের পানিতে বাংলাদেশের মাটি কর্দমাক্ত, সেই কাদামাটিতে বর্তমান সরকারের উন্নয়নের রথ আটকে গেছে। আওয়ামী উন্নয়নের জিকিরে জনমনকে বিভ্রান্ত করা যায়নি। কারণ আওয়ামী উন্নয়নের আড়ালে যে রক্তউৎসব চলছে তাতে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত।
জিআরএস/পাবলিক ভয়েস

