সংবাদ মাধ্যমের সংগঠন ক্ষমতাসীনদের নিয়ন্ত্রণে : ফখরুল

প্রকাশিত: ৫:২৩ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৮, ২০১৯

সংবাদ মাধ্যমের সংগঠনে ক্ষমতাসীনরা পুরোপুরিভাবে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ রোববার জাতীয় প্রসক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ‘বিএফইউজে’ বার্ষিক কাউন্সিলে তিনি এ মন্তব্য করেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে রাজনীতিটা হচ্ছে না। অনেকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, ব্যবসা-বাণিজ্য, বাড়ি-ঘর শেষ হয়েছে এবং অনেককে প্রাণও দিতে হয়েছে। এই ফ্যাসিবাদি সরকার রাষ্ট্র যন্ত্রকে পুরোপুরিভাবে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সব ব্যবস্থা করছে।

বিচার ব্যবস্থা ও প্রশাসন দখল করে নিয়েছেন, গণমাধ্যমের মালিকানা পুরোপুরিভাবে তারা ‘ক্ষমতাসীন আ.লীগ’ নিয়ন্ত্রণ করছে এবং সংবাদ মাধ্যমের যে সংগঠন- সেই সংগঠনকে বিভক্তি করে দিয়ে তারা সেখানেও পুরোপুরিভাবে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন।

সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনাদের কাছে আমার একটা অনুরোধ, রাজনীতিবিদরা সব সময় খারাপ নন। রাজনীতিবিদরা সব সময় শুধু মাত্র স্বার্থের জন্য কাজ করেন না। রাজনীতিবিদরা ত্যাগ স্বীকার করেন। আর ত্যাগ স্বীকার করেন বলেই বড় জিনিস অর্জন করা সম্ভব হয়। তাই সাংবাদিক ভাইদের প্রতি অনুরোধ থাকবে, আমরা যেমন আপনাদের সমস্যা বুঝি। ঠিক একইভাবে আমাদের সমস্যাগুলো আপনা অনুধাবন করার চেষ্টা করেন।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ন্যায়’র জয় অবশ্যই হবে। অন্যায় পরাজিত হবে। সত্যের জয় হবেই। আর বাংলাদেশের যে রাজনৈতিক ইতিহাস এবং জনগণের সংগ্রামের যে ইতিহাস-সেটা কখনো ব্যর্থ হয়নি। সুতরাং জয়ী আমরা হবোই, জয়ী আমরা হবোই।

গণমাধ্যমের কর্মীদের উদ্দেশ্য করে তিনি আরো বলেন, আপনারা পত্রিকার এক কলাম লেখে দিলেই আমার সারাজীবনের ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যেতে পারে ‘রাজনীতির যে ক্যারিয়ার আছে’। তার আগে আপনি আমার সঙ্গে কথা বলবেন। কিন্তু অনেকে কষ্ট করে সেটুকুও করেন না। বোঝার চেষ্টা করেন না। নিজের একটা ধারনা থেকে সেটা বলে দেন। এটা দল, রাজনীতি এবং দেশের যে অবস্থা- সেই অবস্থার ক্ষতি করছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি খুব ব্যক্তিগতভাবে জানি, আপনাদের অনেক সংবাদ কর্মীর কাজ নেই। আমি ব্যক্তিগতভাবে জানি যে, অনেক সংবাদ কর্মী অত্যন্ত আর্থিক কষ্টে আছেন। এটাই হচ্ছে, এখনকার রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও রাজনীতির পরিণতি। আমাদের বহু ছেলে আছেন, যারা ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল বা বিএনপি করেন- তারা ঢাকার রিক্সা চালাচ্ছে, হকারের কাজ করছে এবং অনেকে কাজ না পেয়ে আত্মহত্যা করছে। এটা বাস্তবতা।

সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে মির্জা আলমগীর বলেন, আমরা যারা রাজনীতি করছি, আমরা অনেক আরাম-আয়েশে রাজনীতি করছি। এই কথা যদি ভেবে থাকেন তাহলে ভুল করছেন। এই গণতন্ত্রের জন্য ১৯৫২ সাল থেকে এদেশের রাজনীতিবিদরা অনেক অনেক কষ্ট, ত্যাগ স্বীকার করেছেন, কারাগারে গেছেন এবং নিহতও হয়েছেন। বর্তমার সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেই নির্যাতন আরো বেড়েছে। গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার জন্য সেই প্রক্রিয়াকে আরো ত্বরান্বিত করে গণমাধ্যমের ওপরে পুরোপুরিভাবে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।

তিনি বলেন, গণতন্ত্র কখনো সুষ্ঠ ও অবাধ হতে পারে না, যদি একটি শক্তিশালী, মুক্ত ও স্বাধীন গণমাধ্যম না থাকে। দুর্ভাগ্য স্বাধীনতার ৪৮ বছর পার হলেও বাংলাদেশে গণতন্ত্র স্বাধীন করতে পারি নাই এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতাও আমরা অর্জন করতে পারি নাই। এটা কোন বিছিন্ন ঘটনা নয়। কারণ দেশে গণতন্ত্র না থাকলে সংবাদ মাধ্যমেও স্বাধীনতা থাকবে না।

বিএফইউজে’র সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে কাউন্সিলে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান, সাংবাদিক নেতা এম এ আজিজ, এম আব্দুল্লাহ, কামাল উদ্দিন সবুজ, কাদের গনি চৌধুরী, শহিদুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্যে রাখেন।

জিআরএস/পাবলিক ভয়েস

মন্তব্য করুন