এনায়েতুল্লাহ আব্বাসীর প্রতি কোরআন অপব্যাখ্যা করার অভিযোগ

প্রকাশিত: ১১:৫২ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৮, ২০১৯

শবে-বরাত নিয়ে পরিচিত ইসলামী আলোচক মাওলানা এনায়েতুল্লাহ আব্বাসীর এক আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তার উপর কোরআন অপব্যাখ্যার অভিযোগ এনেছেন অনেকেই। ফেসবুকে এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

বিশিষ্ট অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ও তরুণ আলেম আতাউল করীম মাকসুদ ফেসবুকে এ বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা লিখেছেন। এনায়েতুল্লাহ আব্বাসীর আলোচনার কোথায় কোথায় ভুল রয়েছে তা স্পষ্টরুপে বর্ননা করেছেন তিনি।

পাঠকদের জন্য পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো;

জনাব এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী সাহেবের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তিনি দাবি করেছেন, সুরায়ে দোখানের লাইলাতুম মোবারাকাহ দ্বারা শবে বরাত উদ্দেশ্য। তারপর তিনি স্পষ্ট বলেছেন যে, কুরআনে কারীম শবে বরাতে নাযিল হয়েছে। (নাউজুবিল্লাহ)

লোকটা অনেক বিতর্ক সৃষ্টি করে। নিজেকে ইলমের বরপুত্র দাবি করে কুরআন ও হাদিস বিরোধী অনেক বকত্ব্য সে প্রসব করে। দেখুন তার পূর্বেোক্ত বক্তব্যের হাকিকত!
আল্লাহ তাআলা বলেন-

…انا انزلناه في ليلة مباركة

পবিত্র কুরআনকে আমি লাইলাতুম মুবারাকাহে (বরকতময় রাত্রিতে) নাজিল করেছি।(সুরা দুখান আয়াত নং ৪)

লাইতুম মুবারাকাহ দ্বারা শবে কদর উদ্দেশ্য৷ কারন, তার আগে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে কারীমের শপথ করেছেন৷ তার পরে বলছেন আমি তাকে লাইতাম মুবারাকাহে অবতীর্ণ করেছি৷ আর কুরআনে কারীম শবে কদরে অবতীর্ণ হওয়া অকাট্য দলীল তথা স্বয়ং কুরআনে কারীম দ্বারা প্রমাণিত৷

পবিত্র কুরআনে কারীমে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন-

….انا انزلناه في ليلة القدر

পবিত্র কুরআনে কারীমকে আমি শবে কদরে নাযিল করেছি।(সুরা কদর আয়াত নং ১)

তাই প্রথম আয়াতে ‘লাইতুম মুবারাকাহ’ দ্বারা শবে কদর উদ্দেশ্য হওয়া স্পষ্ট৷ বিশ্বখ্যাত মুফাসিসিরীনে কেরামের বক্তব্য দেখুন-

১. প্রাচীনতম তাফসীর গ্রন্থ’তাফসীরে ইবনে আবি হাতিমে’সুরায়ে দুখানের আয়াটির ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে-

….يعني في ليلة القدر

অর্থাৎ লাউলাতুম মোবারাকাহ দ্বারা শবে কদর উদ্দেশ্য।
(তাফসীরে ইবনে আবু হাতিম ১৩/২১৪)

২. ফখরুদ্দীন রাযী রহ,বলেন-

فوجب ان تكون هذه الليلة المباركة هي تلك المسماة بليلة القدر لئلا يلزم التناقض

লাইলাতুম মুবারাকাহ দ্বারা শবে কদর উদ্দেশ্য হওয়া জরুরী৷ অন্যথায় কুরআনে কারীমের আয়াতের মধ্যে বৈপরিত্য হয়ে যাবে৷ (তাফসীরে কাবীর ১/৪০৯)

৩. ইবনে আরাবী রহ. বলেন-

وجمهور العلماء علي انها ليلة القدر

জমহুর উলামায়ে কেরামের মতে লাইলাতুম মুবারাকাহ দ্বারা উদ্দেশ্য শবে কদর৷ (আহকামুল কুরআন ৭/১৩০)

৪. বিখ্যাত মুফাসসিরে কুরআন ইমাম কুরতুবীর মতেও লাইলাতুম মুবারাকাহ দ্বারা উদ্দ্যেশ্য শবে কদর৷ (তাফসীরে কুরতুবী ২০/১২৯)

৫. সুয়ুতী রহ,আয়াতের ব্যখ্যায় বলেন-

…يعني في ليلة القدر

আয়াত দ্বারা উদ্দ্যেশ্য শবে কদর৷ (আদ দুররুল মানসুর ৭/৩৪৮)

এভাবে কয়টি কিতাবের হাওয়ালা দিব?

হাতের নাগালে বিদ্যমান সকল তাফসীরগ্রন্থে বিষয়টি স্পষ্ট লেখা আছে যে, লাইলাতুম মোবারাকাহ দ্বারা শবে কদর উদ্দেশ্য। দু একজন মুফাসসির ‘ليلة مباركة’ দ্বারা শবে বরাতের কথা বলেছেন৷ কিন্তু তা প্রত্যাখ্যাত৷

বিশ্ব নন্দিত মুফাসসির হাফেয ইবনে কাসীর রহ. বলেন,যে বলবে লাইতাম মুবারাকাহ দ্বারা উদ্দ্যেশ্য শবে বরাত,

فقد ابعد النجعة فإن نص القرآن انها في رمضان

সে সঠিক রাস্তা থেকে অনেক দুরে৷ কারণ কুরআন বলছে তা পবিত্র রমজানে৷ (তাফসীরে ইবনে কাসীর 7/246)

আর শবে বরাত রমজানে হয় না৷ হয় শাবান মাসের মধ্য দশকে৷

ইবনে আরাবী বলেন-

ومنهم من قال انها ليلة النصف من شعبان وهو باطل

যারা বলবে এই আয়াত দ্বারা উদ্দ্যেশ্য শবে বরাত,তা প্রত্যাখ্যাত৷ ( আহকামুল কুরআন ৭/১২০)

আরো বিভিন্ন তাফসীরগ্রন্থে তাদেরকে শক্তভাবে খন্ডন করা হয়েছে৷ সংক্ষেপের জন্য কেবল দুটি হাওয়ালা উল্লেখ করলাম৷ পবিত্র কুরআনে স্পষ্ট বলা হয়েছে কুরআন কারীম শবে কদরে নাযিল করা হয়েছে, অথচ আব্বাসী সাহেব বলছেন কুরআনে কারীম শবে বরাতে নাযিল করা হয়েছে৷ কুরআনে কারীম শবে কদরে নাযিল হওয়ার কথা মুতাওয়াতিরভাবে প্রমাণিত৷ আব্বাসী সাহেব মুতাওয়াতিরকে কীভাবে অস্বীকার করলেন? মুতাওয়াতিরের অস্বীকারকারীর হুকুম আমি উল্লেখ করছি না তার সম্মান রক্ষার জন্য৷ যদিও তিনি এসব ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের প্রতি সামান্য সম্মানজনক ভদ্রতার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয়ে যান।

মন্তব্য করুন