এদেশে ইসলামী আলোচকরাই সর্বোচ্চ দেশপ্রেমিক

প্রকাশিত: ৮:৪০ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৩, ২০১৯

সাধারণত মানুষকে ইসলামী আদর্শ ধারণ করে জীবন যাপন করার আহ্বান জানানো হয় ওয়াজ মাহফিলে। এটা এতদাঞ্চলের বহু দিনের রেওয়াজ। মানুষকে উপদেশ দেয়ার সমাবেশ যা ‘মাহফিল’ নামে পরিচিত। আর এ মাহফিলে তরিকতপন্থী শায়েখগন আল্লাহকে স্মরণ করার নিয়ম বাতলে দেন এবং প্রাক্টিস করান। যা হালকায়ে জিকির নামে পরিচিত। সম্মিলিত জনতা এক মজলিসে জিকির করে থাকেন।


এই তো ওয়াজ মাহফিল ও হালকায়ে জিকির। যারা এখানে নসীহত করেন, তাঁদেরকে আয়োজক কমিটি কিছু টাকা দেন যাতায়াত ও হাদীয়া হিসেবে। এখন বলবেন, চুক্তি করে উনারা আসেন। হেলিকপ্টার দিয়ে আনতে হয়। হ্যাঁ, এটি ব্যতিক্রম। চুক্তিবদ্ধ হয়ে ওয়াজ করা হারাম। উভয় পক্ষই দায়ী। কেউ যদি শরীয়তের হুকুম না মানে সে জন্য দায়ী ঐ ব্যক্তি। অন্য কেহ নয়। চুক্তি করে টাকা নিয়ে ওয়াজ করনেওয়ালারা দেশের আইন ও ইসলাম পরিপন্থী কাজ করেন। সেজন্য যারা চুক্তি করেন না, তাঁদেরকে এক রশিতে বেঁধে ফেলার প্রক্রিয়া চলছে। সরকারের পক্ষ থেকে ওয়াজ মাহফিল নিয়ন্ত্রণের একটি প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিছু সংখ্যক বক্তার নাম উল্লেখ করে একটি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কিছু পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সরকার।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয় থেকে ১৫ বক্তার উপর আপত্তিপত্র

যারা ওয়াজের উদ্দেশ্যকে ম্লান করে, ভাবগাম্ভীর্যতা নষ্ট করে সে ক্ষেত্রে ওয়ারর্নিং দেয়া যায়। কতকে ওয়াজের নামে নিজস্ব বাতিল বা বিতর্কিত মতবাদ প্রচার করে তাঁদেরকেও ওয়ার্নিং দেয়া যায়। এ ওয়ার্নিং দিবে কে? সরকার? অবশ্যই নয়। এটা বাস্তবায়ন হতে পারে একটি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে। ঐ কর্তৃপক্ষ হতে হবে জ্যেষ্ঠ আলেমদের সমন্বয়ে। এক কথায় যারা ইসলামের ধারক ও বাহক। এমন আলেমদের সমন্বয়ে একটি বোর্ড বা অথরিটি গঠন করা যেতে পারে। যারা লাগাম ছাড়া বক্তাদের লাগাম টেনে ধরবেন। সরকার এখানে সূত্রধরের ভূমিকার বেশী করতে গেলে বুঝতে হবে তাদের মতলব খারাপ। তারা ওয়াজ মাহফিলের টুঁটি চেপে ধরতে চায়।

একজন অতি গুরুত্বপূর্ণ রোগীর সুচিকিৎসা সঠিকভাবে করতে হলে ‘মেডিকেল বোর্ড’ গঠন করা হয়। যারা বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। চিকিৎসকরাই তো ভালো সেবা দিবেন। যে সব বক্তারা রুগ্ন টাইপের ও লাগাম ছাড়া, তাদের লাগাম টেনে ধরবে এ অঙ্গনের মুরুব্বীরা। কই? খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য হিসেবে কোন এমপি মন্ত্রী কে দেখলাম না। এটাই স্বাভাবিক।

প্রস্তাবিত ওলামা মাশায়েখদের বোর্ডে সরকারের কোন আমলা বা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব থাকতে পারবে না। যদি সে প্রচেষ্টা করা হয় তাহলে বুঝতে হবে সরকার বিরোধী দলের মত বক্তাদেরকেও সাইজে আনতে চায়। বক্তারা মঞ্চে উঠে সরকারের মানবাধিকার, তথাকথিত উন্নয়ন, গনতন্ত্র, দুর্নীতি, চুরি-চামারি ও দূঃশাসনের বিরুদ্ধে যেন কোন কথা না বলেন, সেটা নিশ্চিত করতে চায়। এক কথায়, সরকারের গুনগান গাওয়ার জন্য একদল ভাঁড় তৈরী করতে চায়। এ ধরনের খায়েশ সরকারের আছে কিনা এখনো নিশ্চিত জানি না, তবে লক্ষণ ভালো ঠেকতেছি না।

একটি পোর্টালে নিউজ এসেছে, বক্তারা নাকি জঙ্গীবাদ প্রচার করে, নারী শিক্ষার বিরোধীতা করে, গণতন্ত্র ও নির্বাচনের বিরোধীতা করে, রবীন্দ্রনাথকে কাফের বলে, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করে ইত্যাদি ইত্যাদি।

না, বক্তারা এসব করেনা। তাঁরা ইসলামের আদর্শ প্রচার করে। উগ্রতাকে আশ্রয় প্রশ্রয় দেয় না। নারী শিক্ষার বিরোধীতা করে না বরং নারীর জন্য যা ফরজিয়াত অর্থাৎ বোরকা বা শালীন পোষাক পরার জন্য বলে, চলাফেরায় বেহায়ায়িপনার বিরোধীতা করে, কোন কোন বক্তা গনতন্ত্রের নামে মানুষের মৌলিক অধিকার হরণের কথা বলে, দেশের দুর্নীতি, খুন, গুমসহ বিদ্যমান অনাচারের বিরুদ্ধে বলে। তাঁরা আল্লাহর রাসূল সঃ প্রদর্শিত পথে চলতে মানুষকে উজ্জীবিত করে।

ওয়ায়েজগন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলের ট্রাংকের মধ্যে নয়া বাচ্চা কাঁদে কেন? এটার কারণ নিয়ে কথা বলে, ডাস্টবিনে নবজাতকের দেহ কেন পাওয়া যায়, সে বিষয়ে কথা বলেন। এ সব কিছু কুরআন হাদীসের বিধানমতো না চলার কারণে ঘটছে। জাতিকে এ থেকে পরিত্রাণের উপায় বলে দেন।

যেসব বক্তার মধ্যে আকীদাগত সমস্যা আছে, তাদের জন্য এ লেখা না। ওরা বরাবরের বাতিল। আকীদাগত সমস্যা নাই, তবে ত্রুটিযুক্ত বক্তাদেরকে সংশোধনের জন্যই দরকার আলেমদের নিয়ে একটি স্বতন্ত্র বোর্ড। যারা বক্তাদেরকে লাইনে রাখবে।

আমরা বিস্মিত হয়েছি, সরকারের উক্ত তালিকায় দুজনের নাম দেখে, যারা দ্বীনের প্রকৃত দা’ঈ। নায়েবে আমির মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীমমাওলানা মামুনুল হক। তাদের নাম থাকা মানে সরকারের উদ্দেশ্য ভালো না। তাঁরা এ দেশের রাহবার। লক্ষ লক্ষ আলেমের নয়নমনি। লাখ লাখ শিক্ষার্থী তাঁদের শিক্ষা ও তালীমে প্রকৃত মানুষে পরিণত হয়েছেন। তাঁরা সমাজকে শুদ্ধিকরনের পাইওনিয়ার। ঐ তালিকায় তাঁদের নাম থাকাটা চরম অসম্মানের। তাঁদের নামে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ থাকলে তা দেখাক। গয়রাহোভাবে দাওয়াতের ময়দান থেকে বিরত রাখা বা তাঁদেরকে নিয়ন্ত্রণ করার প্রচেষ্টা এ দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা কখনো মানবে না। অন্য দেশের অন্য ধর্মের লোকদের স্বার্থে ব্যাঘাত ঘটলে করার কিছু নাই।

বক্তাদের উপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের আপত্তির বিষয়ে যা বলছেন বক্তারা

এ দেশ ওলী আউলিয়াদের দেশ। দেশের মানুষ খুব ধার্মিক না হলেও অধার্মিকতা ও অপসংস্কৃতি বিরোধী। কোন মা-বাবা চান না, তাঁর মেয়ে ওরনা ফেলে বুক চিতিয়ে হেঁটে যাক। কোন অভিভাবকই চান না, মেয়েটা কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়ে বিবাহপূর্ব যৌনকর্মের প্রাক্টিস করুক। আর ছেলেটা গাঁজাখোর, ধর্ষক বা চাঁদাবাজ গুন্ডা হোক। কারণ প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় এমন পরিবেশের দেখা মিলে। ওয়াজ মাহফিলের ফলে মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়ে। তারা পাপের কাজ ছাড়ে,আর নেকের কাজে ব্রতী হতে শুরু করে। দ্বীনি উপদেশ গ্রহনের ফলে মানুষের মাঝে পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগে। ফলে চরিত্রটা উন্নত হয়। সচ্চরিত্রবান মানুষের খুব অভাব। প্রকৃত শিক্ষা আজকাল প্রচলিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নাই বলা চলে। ওখান থেকে নীতি নৈতিকতা বিদায় নিয়েছে।

ওয়াজ মাহফিলের মাধ্যমে মানুষকে ধর্মের পথে ডাকা হয়। ইসলামের সৌন্দর্য যারা উপভোগ করে, তারা কখনোই খারাপ নাগরিক হয় না। সরকারকে দেখতে হবে, ভাল নাগরিক কারা তৈরী করে? প্রকৃত দেশপ্রেমিক কারা? যারা সচ্চরিত্রবান নাগরিক তৈরী করে যাচ্ছেন তাঁদেরকে নিয়ন্ত্রণ করার সিদ্ধান্ত আদৌ ঠিক হবে না। যদি করা হয়, তাহলে তা বুমেরাং হয়ে ফিরে আসবে। সকল বক্তার সাফাই গাওয়া আমার কাজ না। বিতর্কিত ও তামাশাকারী বক্তা যারা আছেন, তাঁদেরকে জন্য বোর্ড গঠন করা যেতে পারে। বাতিল আকীদার ও মুক্তিযুদ্ধ বা দেশবিরোধী বক্তা যদি থাকে, তাদেরকে প্রচলিত আইনেই নিষিদ্ধ করতে হবে। তবে সে সংখ্যাও খুব বেশী না।

দু’একজন বিপথগামী বক্তার জন্য পুরো ময়দান ফাঁকা করা যাবে না।

মনে রাখতে হবে, যদি দু’একটা কাক সাদা দেখা যায়, তাহলে সেটা ব্যতিক্রম। সব কাকগুলো কিন্তু সাদা রঙয়ের হয় না। একটা কাউয়া সাদা হতেই পারে! আর ব্যতিক্রম কিছুর জন্য কোন কিছুর আমূল পরিবর্তন করতে নেই। এক কথায়- বক্তাদেরকে নিবর্তন, নিয়ন্ত্রণ বা নিবন্ধন, কোনটাই করা যাবে না।

লেখক, এক্টিভিস্ট, বিশ্লেষক।

আরও পড়ুন : 

বক্তাদের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের পদক্ষেপের জবাবে যা বললেন চরমোনাই পীর

নির্দিষ্টভাবে কোনো বক্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তখন ব্যবস্থা নিন: আল্লামা মাসঊদ

মন্তব্য করুন