ছাত্রলীগের দাবি না মানায় শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা দিতে পারেনি স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত ছাত্র

প্রকাশিত: ১:০২ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১, ২০১৯

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত ছাত্র এমদাদুল হক। কিন্তু পরীক্ষার কিছুক্ষণ আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতা পরিচয়ের কয়েকজন তার এসে বলেন,

“আপনি আমাদের সাথে কথা বলে আসেননি তাই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। ছোট ভাইদের কিছু দাবি দাওয়া আছে সেটা আগে মিটিয়ে নিতে হবে পরীক্ষা দিতে হলে”


ঘটনাটি গত ২৭ মার্চের। এমদাদুল গত ২৭ মার্চ নিজ বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষার দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন। এসময় ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করে। পরে পরীক্ষার সময় শেষ হয়ে এলে শিবির কর্মী আখ্যা দিয়ে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয় ছাত্রলীগ। যদিও পরে পুলিশ তার বিরুদ্ধে এমন কোন সংশ্লিষ্ঠতা পাননি। তাই তাকে ছেড়ে দিয়ে অভিভাবকদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে।

এদিকে ওই সময়ের মধ্যে নিয়োগ পরীক্ষার ভাইভা শেষ হয়ে গেছে। এতে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্নও ভেস্তে গেছে এমদাদুলের। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে মৌখিক পরীক্ষা হয়ে গেছে তাই এ বিষয়ে আর কোন সুযোগ নেই। এর ফলে শিক্ষক হওয়া স্বপ্ন ভেঙ্গে গিয়েছে এমদাদের।

এমদাদের স্বপ্ন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার। সেভাবেই নিজেকে প্রস্তুত করেছেন তিনি। তিনি ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণীবিদ্যা বিভাগে ভর্তি হয়ে বিভাগের সর্বোচ্চ ৩.৮৮ সিজিপিএ পেয়ে ফার্স্টক্লাস ফার্স্ট হন। মাস্টার্সে ৩.৯৬ সিজিপিএ পেয়ে আবারও ফার্স্টক্লাস পান তিনি। ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক র্জানালে তার তিনটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। শিক্ষা জীবনের সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদকও পেয়েছেন তিনি ২০১৫ সালে। এছাড়া ২০১৫ সালে বাংলাদেশ জুলজিক্যাল সোসাইটি পদকও পেয়েছেন তিনি। এতো কিছুর পরেও তিনি শিক্ষক হতে পারেননি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার শিক্ষক হওয়ার এ স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

তবে এ নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাত নেতাকর্মীকে আসামি করে আদালতে মামলা করেছেন তিনি। মূলত হাটহাজারী থানায় মামলা না নেয়ায় ভুক্তভোগী এমদাদুল রোববার (৩১ মার্চ) চট্টগ্রামের মুখ্য বিচারিক হাকিম কামরুন্নাহার রুমীর আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।

মামলার আসামিরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের আনোয়ার হোসেন, একই বিভাগের আসিফ মাহমুদ শুভ, মোকসেদ আলী ওরফে মীলু প্রামাণিক, একই বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের জাহিদুল হাসান, রফিকুল ইসলাম, একই বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের আসির উদ্দিন ও ইসলামের ইতিহাস বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শরিফ উদ্দিন। এছাড়া এই মামলায় আসামি হিসেবে আরও ৫-৬ জনকে অজ্ঞাতনামা হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এদিকে আদালত অভিযোগটি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।


এমদাদুল হক সেদিনের ঘটনার বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, গত ২৭ মার্চ সাড়ে নয়টার দিকে মৌখিক পরীক্ষা দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের এ আর মল্লিক প্রশাসনিক ভবনে আসেন তিনি। এসময় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ছাত্র আনোয়ার হোসেন ও মোকসেদ আলি তার দিকে এগিয়ে আসে এবং কুশলাদি জিজ্ঞেস করে। তাদের সাথে ছিলেন, আনোয়ার হোসেন, আসিফ মাহমুদ শুভ, মোকসেদ আলি ওরফে মীলু প্রামানিক, জাহিদুল হাসান, রফিকুল ইসলাম, আসির উদ্দিন, শরীফ উদ্দিন। পরে তারা আমাকে বলে আপনি আমাদের সাথে কথা বলে আসেননি তাই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। ছোট ভাইদের কিছু দাবি দাওয়া আছে সেটা মিটাতে হবে পরীক্ষা দিতে হলে। আমি দিতে অনিহা প্রকাশ করলে তারা আমাকে মারধর করতে থাকে এবং কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে নিয়ে যায়। সেখান থেকে প্যাগোডায় নিয়ে গিয়ে মারধর করে। এসময় মাথায় পিস্তল ধরে বলে এ কথা কাউকে বললে মেরে ফেলবে। পরে বেলা ১২ টার দিকে পুলিশে দেয় আমাকে।

প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. মো: ইসমাইল মিয়া বলেন, ওই ছাত্র কোন ছাত্র সংগঠনের সাথে জড়িত ছিল এটা আমার জানা নেই। তবে আমার মনে হয়েছে সে যাতে শিক্ষক না হতে পারে এই জন্যই এমন কাজ করা হয়েছে।

এমদাদুলের সাথে শিবিরের কোন সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বেলাল উদ্দিন জাহাঙ্গীর সাংবাদিকদের বলেন, ওই ছাত্রকে জিজ্ঞাসাবাদ করে অভিবাবকের হাতে তুলে দিয়েছি।

মন্তব্য করুন