
চবি প্রতিনিধি: দখলদারিত্বমুক্ত গনতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য চাকসু নির্বাচন নিশ্চিত করার দাবিতে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সংবাদ সম্মেলন করেছে।
আজ বুধবার চাকসু ভবনের ৩য় তলায় বেলা ১২টায় আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাইমা আখতার নিশু। এসময় উপস্থিত ছিলেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আবিদ খন্দকার, সাংগঠনিক সম্পাদক জান্নাতুল মাওয়া মুমু, দপ্তর সম্পাদক সুব্রত মন্ডল সহ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দীর্ঘ ২৯ বছর ধরে অচল থাকা কেন্দ্রীয় ও হল ছাত্র সংসদগুলো নির্বাচন দিয়ে সচল করার যে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাকে আমরা সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট স্বাগত জানাচ্ছি।
দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তচিন্তার চর্চা ও সাধারণ ছাত্রস্বার্থ বান্ধব একটি গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস নিশ্চিত করতে যে সংগ্রাম আমরা অব্যাহত রেখেছি তারই অংশ হিসেবে চাকসুসহ ছাত্র সংসদসমূহ কার্যকর করার দাবি জানিয়ে এসেছি। কারণ ছাত্র সংসদের মাধ্যমেই কেবলমাত্র সাধারণ ছাত্রদের যৌক্তিক দাবি-দাওয়া ও চাহিদা কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছাতে পারে।
কিন্তু বর্তমানে যে পরিস্থিতিতে চবি প্রশাসন চাকসু নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে তা একটি সুষ্ঠূ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সত্যিকার অর্থে ছাত্রদের ভোটাধিকারের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা নিশ্চিত করতে পারছে না। দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন সারাদেশের মতো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও তাদের ভিত শক্তিশালী করেছে দিনদিন। প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর কর্মীরা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠনটির হামলা-নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে যদি চাকসু নির্বাচন দেওয়া হয় সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠনগুলো, যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিন্ন কোন মতামত সহ্য করছে না এবং মনে করে যে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃত্ব তাদের এবং তাদের কথামতোই সব চলবে, তারা যে তা বলে-কৌশলে দখল করে নিয়ে ছাত্রদের গণতান্ত্রিক অধিকারকে ভূ-লুণ্ঠিত করবে না, তার কী নিশ্চয়তা প্রশাসন দেবে?
তাছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংসদ নির্বাচনের যে দৃষ্টান্ত আমাদের সামনে এসেছে আমরা দেখেছি ছাত্রলীগের দখলদারিত্বকে প্রতিষ্ঠা দিতে কীভাবে প্রশাসন ভূমিকা রেখেছে। কীভাবে সাধারণ ছাত্রদের গণতান্ত্রিক অধিকারকে পদদলিত করেছে। এটি কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।
বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার যে স্বৈরাচারী বৈশিষ্ট্য নিয়ে দাঁড়িয়েছে, তারই ফলশ্রুতিতে সে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে তার করাল থাবার তলে নিয়ে এসেছে এবং দিনদিন সে থাবা আরো সুদৃঢ় করছে। আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও তার আক্রমণ থেকে মুক্তি পায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সরকারের অনুগত প্রশাসন তাদের সমস্ত স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিফলন ঘটাচ্ছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের প্রশাসনিক স্বৈরতন্ত্রকে আরো মজবুত করতে সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠনকে জিতিয়ে দিতে তাদের সহযোগী ভূমিকা যে পালন করবে না, তার সম্ভাবনা সমন্ধে আমরা পুরোপুরি অনিশ্চিত। প্রশাসনের অতীত ভূমিকা আমাদেরকে এই অনিশ্চয়তায় ঠেলে দিয়েছে।
এ পরিস্থিতে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নির্বাচনের উপযোগী পরিবেশ তৈরিকল্পে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে নিম্ন লিখিত দাবিসমূহ পূরণের আহ্বান জানাচ্ছে-
(১) বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল সমস্ত ছাত্রসংগঠনের অবাধ কার্যক্রম পরিচালনার স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।
(২) হলগুলোতে দখলদারিত্বের অবসান ঘটাতে হবে এবং মেধার ভিত্তিতে আসন বরাদ্দ দিতে হবে।
(৩) নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নির্বাচন পরিচালনা করতে হবে।
(৪) অবিলম্বে বিভিন্ন সময়ে প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মীদের উপর হামলাসহ নানান সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সাথে যুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার এবং নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে।
আমাদের দেশের জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যে গৌরবউজ্জ্বল ভূমিকার ইতিহাস রয়েছে তার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে উপরোক্ত দাবিগুলো পূরণ করতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট আন্তরিক আহ্বান জানাচ্ছে।
		
