

বিশ্ব হিজাব দিবস উপলক্ষে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের হিজাবের অধিকার রক্ষায় ‘৭ দফা দাবি সম্বলিত কয়েকটি ব্যানার’ সরিয়ে ফেলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ছাত্র মিলনায়তন (টিএসসি) কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ব হিজাব দিবস উপলক্ষে পাবলিক ভয়েসের বিশেষ একটি প্রতিবেদন পড়ুন :
– বিশ্ব হিজাব দিবস : পর্দা পালনে হিজাব ও বোরকার বিধান
বিশ্ব হিজাব দিবস পালন উপলক্ষে ইশা ছাত্র আন্দোলন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পয়েন্ট ব্যানারগুলো বসান। বিশেষ করে রাজু ভাস্কর্যসহ টিএসসি ও কয়েকটি জায়গায় ব্যানার বসান তারা। সকাল থেকে ব্যানারগুলো সেখানে থাকলেও কর্তৃপক্ষ দুপুর সাড়ে এগারোটার দিকে ব্যানারগুলো সরিয়ে ফেলে।
ব্যানার সরিয়ে ফেলার বিষয়টি জানিয়ে ইশা ছাত্র আন্দোলন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন – ‘টিএসসি থেকে বের করে দিলো আমাদের ব্যানার। রাজুতেও (রাজু ভাস্কর্য) নাকি সমস্যা! সমস্যা কি? তাদের কি ক্ষতি করে এই ব্যানারগুলো? যেখানে ছাত্রলীগের কয়েকটা ব্যানার ঝুলছে! শুধু কি একটা সমস্যা যে আমাদের নামের সাথে ইসলামী যুক্ত?’
তবে এ বিষয়ে টিএসসির পরিচালক আলী আকবর পাবলিক ভয়েসকে বলেছেন – “আজ পহেলা ফেব্রুয়ারি ভাষার মাস শুরু হয়েছে এবং টিএসসির সামনে ভাষার মাস নিয়ে কিছু প্রোগ্রাম রয়েছে। তবে ব্যানার অপসারন করা হয়নি বরং সামনে রাস্তায় নিয়ে রাখা হয়েছে যাতে বেশি মানুষ দেখতে পারে। এবং টিএসটি গেট থেকে ব্যানার সরানোর কাজও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর করেছেন।”
[এখান থেকে সরিয়ে ব্যানারটি রাস্তায় নিয়ে রাখা হয়েছে।]
প্রসঙ্গত : হিজাবের প্রতি বৈষম্য রোধে সচেতনতা তৈরি ও আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন, ঢাবি শাখা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রচারণা চালিয়েছে।
একই সাথে “হিজাব নারীর অহংকার-হিজাব নরীর অধিকার” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বিশ্ব হিজাব দিবস-২০২১ উদযাপনের উদ্যোগ দিয়েছে।
এ উপলক্ষ্যে আজ ১ ফেব্রুয়ারী’ (সোমবার) ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাহমুদুল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক আল আমীন এক যৌথ বিবৃতিতে সকলকে বিশ্ব হিজাব দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
এসময় ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কৃতির অংশ হিজাবের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধ এবং নারীদের হিজাবের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ৭ দফা দাবী উপস্থাপন করেন-
১। শিক্ষা, চাকুরি, কর্মক্ষেত্রে নারীর জন্য হিজাব পরিধানের শর্তহীন অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
২। ড্রেসকোডের নামে বিদ্যালয়ে হিজাবের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে দিতে হবে।
৩। সকল ধরণের পরীক্ষায় হিজাব পরিহিতাদের হেনস্তা করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪। বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও দেশের সকল প্রতিষ্ঠানের ড্রেসকোডে হিজাবকেও যুক্ত করতে হবে।
৫। হিজাব পরিহিতাদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ ও হয়রানি পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে।
৬| হিজাব পরিধান করার কারণে নারীর সাথে কোনোরূপ বৈষম্যমূলক আচরণ ও ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে শাস্তিমূলক আইন পাশ করতে হবে।
৭| ক্লাস প্রেজেন্টেশন ও ভাইবায় হিজাবকে ফরমাল পোশাক হিসেবে গণ্য করতে হবে।
দিবসটি উপলক্ষে তারা বলেন, হিজাব নারীর স্বাধীন ইচ্ছা ও মৌলিক অধিকারের। কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হিজাবের উপর অযাচিত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে নারীর পোষাক পরিধানের ব্যাক্তিগত ও ধর্মীয় স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। তাছাড়া বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হিজাব পরিহিতা নারীরা নানাভাবে বৈষম্যমূলক আচরণ ও অসৌজন্যমূলক ব্যবহারের শিকার হচ্ছে। যা অন্যায়ই শুধু নয়, মানবাধিকারেরও মারাত্মক লংঘন।
২০১৩ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারী থেকে এ দিবসটি উদযাপিত হয়ে আসছে। নানা প্রতিকূলতা ও বিতর্কের মোকাবিলায় বাংলাদেশী বাংশোদ্ভূত নিউইয়র্ক বাসিন্দা নাজমা খান প্রথম বিশ্ব হিজাব দিবস উদযাপনের ডাক দিয়ে বিশ্বের মুসলিম- অমুসলিম সকল নারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। যা বর্তমানে প্রতিবছর ১৯০টিরও বেশী দেশের মুসলিম-অমুসলিম নারীরা ঘটা করে পালন করছে।
তারা আরো বলেন, হিজাবের প্রতি বৈষম্য বন্ধে সামাজিক সচেতনা ও আইনগত পদক্ষেপের বিকল্প নেই। তাই সরকারি-বেসরকারি সকল ক্ষেত্রে নারীদের নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষায় সকলকেই এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।