ঢাকা উত্তরে সিটি কর্পোরেশনে কে হচ্ছেন আ.লীগ প্রার্থী

প্রকাশিত: ১১:২৬ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২৪, ২০১৯
আ.লীগ লোগো

পাবলিক ভয়েস: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ না হতেই উপজেলা নির্বাচন ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে ভোটের হাওয়া লেগে গেছে সর্বত্র। চায়ের কাপে ঝড় তুলছে এ নিয়ে আলোচনা।বিশেষ করে আ.লীগ শিবিরে এই দুটি নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ বেশি।

বিএনপি নির্বাচনে না আসার পক্ষেই একরকম সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে। তাই আ.লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা দলীয় টিকিট পেতে লবিং-তদবিরে দিন রাত পার করছেন। তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগের চেয়ে গুরুত্ব পাচ্ছে কেন্দ্রে লবিং। কারণ আ.লীগ নেতাদের কাছে এটি স্পষ্ট যে, মনোনয়নেই জয়। কোনো রকমে মনোনয়ন বাগিয়ে নিতে পারলে জয় ঠেকায় কে? কারণ প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি তো মাঠেই নেই।

এই যখন অবস্থা তখন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে উপ-নির্বাচনে এবং উত্তর ও দক্ষিণের ৩৬টি সাধারণ এবং ১২টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা দিন রাত ব্যয় করছেন কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতাদের দ্বারে দ্বারে। নিজেদের শক্তিমত্তার জানান দিচ্ছেন।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেনে ক্ষমতাসীন আ.লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। ইতিমধ্যে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের কাছে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে দলটি।

আগামী ২৬ জানুয়ারি দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন আ.লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এই মুহূর্তে আ.লীগে আলোচনার বিষয়বস্তু কে হচ্ছেন ঢাকা উত্তরে আনিসুল হকের উত্তরসূরী।

২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক মারা গেলে ওই পদটি শূন্য হয়। মেয়র পদে উপনির্বাচনসহ দুই সিটিতে নতুন যুক্ত হওয়া ৩৬টি ওয়ার্ড এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর নির্বাচনের তফসিল দেয় ইসি।

এতে গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের দিন নির্ধারণ করেছিল। কিন্ত এর বিরুদ্ধে রিট করলে আদালত নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেন। গত ১৬ জানুয়ারি উচ্চ আদালত রিট খারিজ করে দিলে নির্বাচনের সুযোগ তৈরি হয়। এরপর ২২ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশন ফের তফসিল ঘোষণা করে।

স্থগিত হওয়ার আগে এ পদে আ.লীগের প্রার্থী ছিলেন আতিকুল ইসলাম। এবারও তিনিই মনোনয়ন কিনেছেন।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনে আ.লীগের প্রস্তুতি প্রায় শেষ। ২০১৮ সালে তফসিলের পরে দলীয়ভাবে প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দলটি। সে সময় মেয়র পদে ১৮ প্রার্থীর মধ্যে থেকে যাচাই-বাছাই শেষে বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলামকে মনোনয়ন দেয়া হয়। একই সঙ্গে সেসময় ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদেও প্রার্থিতা চূড়ান্ত করে রেখেছিল দলটি। কিন্তু নির্বাচন বাতিলের রিট আবেদন করায় সে তালিকা আর প্রকাশ করা হয়নি।

গতকাল বুধবার প্রথম দিন মেয়র পদে আতিকুল ইসলাম ছাড়াও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আদম তমিজি হক এবং সাবেক সেনা কর্মকর্তা ইয়াদ আলী ফকির আ.লীগের দলীয় মনোনয়ন তুলেছেন। মনোনয়ন বিক্রির এই কার্যক্রম চলবে শুক্রবার পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত আ.লীগ সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় দলীয় মনোনয়নের আবেদনপত্র সংগ্রহ করা যাবে। মনোনয়ন ফরম জমা দেয়ার শেষ সময় ২৫ জানুয়ারি বিকাল ৫টা।

এছাড়া ঢাকা উত্তর ও দক্ষির সিটি কর্পোরেশনের নতুন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের একটি প্যানেল তৈরির জন্য ওয়ার্ড আ.লীগের কার্যনির্বাহী সদস্যদের নিয়ে সভা করতে বলা হয়েছে।

সভায় আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে কমপক্ষে তিনজনের একটি প্যানেল সুপারিশ করবে। প্যানেলটি মহানগর, থানা ও ওয়ার্ড আ.লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের যৌথ স্বাক্ষরে প্রার্থীদের যোগ্যতা, নেতৃত্বের গুণাবলি ও জনপ্রিয়তা ইত্যাদি বিষয় উল্লেখ করে আ.লীগ সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আগামী ২৫ জানুয়ারির মধ্যে পাঠাতে বলা হয়েছে। সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচনেও একই নিয়ম প্রার্থী বাছাই করবে দলটি।

ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনে আ.লীগের বিগত সময়ের মনোনীত প্রার্থী আতিকুল ইসলামের আশা দল আবারও তাকেই মনোনয়ন দেবেন। মনোনয়নপত্র ওঠানোকে তিনি বলছেন, ‘আনুষ্ঠানিকতা মাত্র’। এ বিষয়ে আতিকুল ইসলাম গতকাল বুধবার বলেন, নিয়ম অনুযায়ী আমাকে দলীয় মনোনয়নপত্র তুলতে হয়েছে।

এবার আপনি কতটা আশাবাদী- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার জন্য এটা নতুন করে শুরু নয়। আমি এক বছর সময় পেয়েছিলাম। এই সময়ে অনেক নেতা, নেত্রী, কর্মীর সঙ্গে আমার পরিচয় আরো মজবুত হয়েছে। অনেকে বন্ধু হয়ে গেছে। রক্তের আত্মীয় হয়তো হয়নি, কিন্তু আত্মার আত্মীয় হয়ে গেছে। আমি জনসভা করেছি, পথসভা করেছি। এটা আমার জন্য আরও পজেটিভ (ইতিবাচক) হয়েছে। আমি মাঠটা গোছানোর সুযোগ পেয়েছি।

আ.লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ২৬ জানুয়ারি দলের মনোনয়ন বোর্ডের সভায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন উপ-নির্বাচনের প্রার্থী ঠিক করা হবে। মেয়র পদে আগের প্রার্থী থাকবেন কিনা, সে সিদ্ধান্ত মনোনয়ন বোর্ডেই নেয়া হবে বলেও জানান তিনি। কাদের বলেন, এরই মধ্যে সিটি কর্পোরেশন ওয়ার্ডে দলীয় প্রার্থী ঠিক করা হচ্ছে। আগামী ২৬ জানুয়ারির বৈঠকেই ঢাকা মহানগরীর সব ওয়ার্ডের দলীয় প্রার্থীও ঠিক করা হবে।

এদিকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নবগঠিত ৩৬টি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর এবং ১২টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে দল-সমর্থিত প্রার্থী হতে লবিং তদবির শুরু করেছেন আগ্রহীরা। বিগত সময়ে আ.লীগ প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করলেও তা প্রকাশ না করায় কেউ সেখানে দলীয় প্রার্থী হিসেবে নিজেকে দাবি করতে পারছেন না। ফলে নিজ নিজ এলাকায় পোস্টার ব্যানার-ফেস্টুন দিয়ে আগেই জানান দিয়েছেন প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে আছেন তারাও।

এ বিষয়ে আ.লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং বিগত সময়ে ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনে দলের সমন্বয়ক লে. কর্নেল (অব.) মুহম্মদ ফারুক খান বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচন নিয়ে আমরা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। দলের নেতাকর্মীরাও প্রস্তুত ও ঐক্যবদ্ধ। দলীয় প্রার্থী বাছাই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দলের মনোনয়ন বোর্ডের সভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

মন্তব্য করুন