

বিশ্বের রাজনীতি সচেতন বেশিরভাগ মানুষই বিশেষ করে মুসলমানরা আফগানিস্তানের তালেবান ও আফগান সরকারের মধ্যে হতে যাওয়া শান্তি আলোচনার দিকে উম্মুখ হয়ে আছেন। কারণ এই আলোচনা ও সিদ্ধান্ত এ অঞ্চলে এক নতুন রাজনীতির দিক উম্মোচন করবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তালেবানের দাবি অনুসারে আফগান সরকারের সাথে শান্তি আলোচনার জন্য আফগান সরকার কর্তৃক তাদের সকল বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার পর থেকে গত তিনদিনে তালেবান বেশ কিছু রাজনৈতিক দক্ষতাসূলভ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সম্প্রতি শান্তি আলোচনায় তালেবানের পক্ষ থেকে প্রধান ব্যক্তি নিয়োগেও তারা দূর্দান্ত সফলতা দেখিয়েছে।
- তালেবানের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি ও তালেবানের বিভিন্ন যুদ্ধ কৌশলের ‘চেঞ্জমেকার’ নামে পরিচিত তালেবানের প্রধান বিচারপতি বা মুফতী মাওলানা আবদু্ল হাকিমকে সামনে নিয়ে এসেছেন তারা। তিনিই হচ্ছেন এ আলোচনার তালেবান অংশের প্রধান ব্যক্তি।
অপরদিকে এই ইস্যুতে আফগান সরকার শুরু থেকেই অত্যন্ত ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। আফগান সরকারের পক্ষ থেকে শান্তি আলোচনায় অংশগ্রহণকারীদের বিষয়ে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি ও জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের প্রধান আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ মধ্যকার দূরত্ব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। দু জনের পক্ষ থেকে বিবৃতি, পাল্টা বিবৃতির ঘোষনাও এসেছে। এমনকি এই দূরত্বের কারণে তাদের কাতার সফরও বিলম্বিত হচ্ছে।
- নাইন-ইলেভেনের পর তথাকথিত সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ আফগানিস্তানে হামলা করা আমেরিকা নেতৃত্বাধীন ন্যাটোকে পরাজিত করে পূর্নদ্যমে ফিরছে তালেবান। ইতোমধ্যে আফগান সরকারও তাদের সাথে সকল শর্ত পূরণ করে শান্তি আলোচনায় বসতে চাচ্ছে।
খুব শীগ্রই কাতারের রাজধানী দোহায় এই আলোচনা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এরই মধ্যে তালেবানের নেতৃত্বে কাতারে তাদের ২১ সদস্যের আলোচনা দলের প্রধান হিসাবে তালেবানের প্রধান বিচারপতি (প্রধান মুফতী) মাওলানা আবদুল হাকিমকে নিয়োগ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। একই সাথে প্রাক্তন প্রধান আলোচক আব্বাস ইসহাকজাই তার উপ-পরিচালক ঘোষনা করা হয়েছে।
এছাড়াও তালিবানদের পক্ষ থেকে মোহাম্মদ নাঈম ওয়ারদাককে তাদের আলোচনার দলের মুখপাত্র নিয়োগ করেছেন।
তালেবানদের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রের বরাতে আফগান রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে যে তালেবানদের বেশিরভাগ সিদ্ধান্ত (বিশেষত যুদ্ধের বিষয়ে) আবদুল হাকিমই জারি করেছেন এবং তিনিই এবার পুরো কর্তৃত্ব নিয়ে আলোচনার টেবিলে অংশ নেবেন।
তবে মৌলভি আবদুল হাকিম দীর্ঘ সময় পর্যন্ত একদম পর্দার আড়ালে ছিলেন। এমন একজন বিচক্ষণ ও সর্বোচ্চ কুটনৈতিক জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিতে শেষ পর্যন্ত সামনে নিয়ে আসাটা তালেবানের দূরদর্শীতা বলেই মনে করছে আফগানিস্তানের রাজনীতিবিদরা।
- তালেবান সূত্রে জানা গেছে, মাওলানা আবদুল হাকিম অনেক উচ্চপদস্থ তালেবান সদস্যের পরামর্শদাতা ছিলেন এবং দলটির সাবেক প্রধান মোল্লা মনসুরের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। সূত্রটি জানায়, ২০১০ সালে মোল্লা মনসুর শহীদ হওয়ার পরে আবদুল হাকিমকে মনসুরকে পদে বসানোর সম্ভাবনাও ছিলো। কিন্তু তিনি সামনে না এসে তালেবানের মূল পরামর্শদাতা হিসেবে ভূমিকা রাখতেই পছন্দ করেছেন।
তালেবানের বিশেষ কমান্ডার সাইদ আকবর আগা খান তার ব্যাপারে বলেন – “কাজী আবদুল হাকিম একজন ভাল আলেম এবং তিনি আমার সাথে দুই বছর ধরে হক্কানিয়া মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছেন এবং অনেক তালিবান (সদস্য) তার ছাত্র ছিলেন।”
মাওলানা আবদুল হাকিম ইসহাকজাই এলাকায় থাকেন এবং তিনি কান্দাহার প্রদেশের পাঞ্জাব জেলার বাসিন্দা।
অপরদিকে আন্ত আফগান এই শান্তি আলোচনায় কাতারে অংশ নিতে আফগান সরকারের দলটির দোহা সফরটি বিভিন্ন কারণে বিলম্বিত হয়েছে। উভয় পক্ষের আলোচনার দলটি গত সপ্তাহের শেষের দিকে দোহায় যাওয়ার কথা ছিলো।
তবে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মতে মার্কিন বিশেষ রাষ্ট্রদূত জালমাই খালিলজাদ কাতারে গিয়েছেন।
আফগান সরকারের শান্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাজিয়া আনোয়ারী বলেছেন, আলোচনার দলটি কাতারের আলোচনার আয়োজনের প্রস্তুতি শেষ করার অপেক্ষায় রয়েছে।
নাজিয়া আনোয়ারী বলেছেন, “কাতারে আফগানিস্তানের আলোচক দলের উপস্থিতির সকল বিষয় প্রস্তুত হয়েছে এবং তালেবানদের কিছু প্রস্তুতি এখনও চলছে এবং তারা এটি সম্পন্ন করার উপায় নিয়ে আলোচনা করছেন। এদিকে, আমাদের আন্তর্জাতিক কিছু অংশীদার দেশ এবং আয়োজক দেশটিরও আলোচনা শুরুর জন্য কিছু প্রস্তুতি দরকার।
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন – মূলত আফগান সরকারের পক্ষ থেকে আলোচক দলের কাতার যাওয়া বিলম্বিত হচ্ছে তাদের অভ্যন্তরিণ অনৈক্যের কারণে।
অপরদিকে শান্তি আলোচনার প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলি জানিয়েছে যে দোহায় আন্তঃ-আফগান আলোচনার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতীয় পুনর্মিলন সম্পর্কিত হাই কাউন্সিলের প্রধান আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও অংশ নেবেন। তবে ওয়াশিংটন এখনও পম্পেওর অংশগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করেনি।
[আফগান গণমাধ্যম থেকে পাবলিক ভয়েসের অনুবাদ]