ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কর্মী সমর্থক : একটি মতামত

প্রকাশিত: ৩:৪১ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৯, ২০১৯

মুফতী শাইখ মাহমূদ হাসান

মতামত: জীবনে চলার পথে মানুষ কাউকে না কাউকে অনুসরণ করে। অনুসরণ করে তার সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তির। যাদের জীবনে লক্ষ্য নির্ধারিত তারা অনুসরণ করে আদর্শবান নেক মানুষকে। আর লক্ষহীন জীবনে অনুসরণের নির্দিষ্ট কোন মানুষ থাকে না। যখন যাকে পছন্দ হয় তখন তার ইত্তেবা করা হয়। এমনকি গোমরাহ ব্যক্তিকেও অনুসরণ করে সমাজের একশ্রেণীর মানুষ নিজেকে অনুসারী দাবী করে। ক্ষেত্র বিশেষ অনুসরণের মানুষটি হয় নিজের যোগ্য পিতা। কখনো হয় পিতৃতুল্য প্রিয় উস্তাদ। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোন দলের লিডারও হয়ে থাকে উসওয়া। ডিজিটাল যুগে যুবক- যুবতীরা নিজস্ব অঙ্গনের সবচেয়ে বেশি সেলিব্রেটী ব্যক্তিকে আইডল হিসাবে গ্রহণ করে।

কওমী অঙ্গনে বিপ্লবের স্বপ্ন দেখা ছেলে মেয়েরা ফয়জুল করীম ও মামুনুল হক সাহেবদ্বয়ের মত প্রতিভাবান আলেমদেরকে উসওয়া (অনুকরণীয়) মনে করে। জেনারেল অঙ্গনে প্রগতিশীলরা জাফর ইকবাল ও তসলিমার মত ইসলাম বিদ্বেষীকে নিজেদের আইডল বানায়। যে যার আদর্শ গ্রহণ করে সে তার ভক্ত হয়। যে যাকে আইডল মনে করে সে তার লাইফ স্টাইল গ্রহণ করে। ভক্তের চলা- ফেরা ও কথাবার্তায় নিজের প্রিয় ব্যক্তির আদর্শ ও চিন্তা- চেতনা প্রকাশ পায়। ফলে উস্তাদের মন্দ কাজও তখন শিষ্যের কাছে ভাল লাগে। সাধারন ভক্তের কাছে গুরুর সব কাজই সঠিক মনে হয়। এমনকি পথহারা মানুষকে অনুসরণ করার কারণে নিজের ক্ষতির দিকটাও একশ্রেণীর দলান্ধরা অনুধাবন করতে পারে না। অন্ধভক্তগণ গুরু সম্পর্কে অহেতুক যুক্তি পেশ আর অযথা তর্ক করার বেয়াদবিকে কিছুই মনে করে না বিদায় আদব- আখলাখ ও মানবিক শিষ্টাচারের বিষয়ে তারা একদম বেফিকির থাকে।

সমাজে সচেতন ভক্তের সংখ্যাই বা কত! সত্য- মিথ্যার পার্থক্য করতে পারে এমন মানুষ সমাজে কজন আছে? কে আছে এমন যে নিজের অনুসরণীয় মানুষটির নিন্দা শুনতে ইচ্ছুক? এমন কোন গোষ্ঠী কি আছে যারা নিজ দলের সমালোচনা পছন্দ করে? অন্ধের মতো যাদের অনুসরণ অতীতে করা হয়েছে আজও কি তাদের ভুল সংশোধনে কোন পর্যালোচনা হয়েছে? যারা স্বজাতীর সাথে গাদ্দারী করে অন্ধভক্তদেরকে বারবার বিপদে নিক্ষেপ করেছে তাদের সাজা কখনো কেউ কি দিয়েছে? জনসম্মুখে এসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মত কাউকে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। পর্দার আঁড়ালে উত্তর দেওয়ার যোগ্য ব্যক্তি থাকলেও তার থেকে উপরোক্ত প্রশ্নের সঠিক জবাব পাওয়া মুশকিল। কারণ যারা উত্তর দেওয়ার যোগ্যতা রাখে তাদের অধিকাংশই এসব প্রশ্ন শুনতে অনিচ্ছুক ও অনাগ্রহী। আর শুনলেও উত্তর দেয় দিল্লী ঘুরিয়ে। তবে সাধারন অনুসারী ও দলান্ধদেরকে মহা বিপদ থেকে বাঁচাতে মাঝে মধ্যে হাতেগোনা কয়েকজন মুত্তাকী বিশ্লেষক মুখ খুলেন। তারা পর্দার আড়ালে থাকা সারুজীদের কাল চেহারা উন্মোচন করেন। একশ্রেণীর পর্যালোচকগণ নিঃস্বার্থভাবে তাদের আসল রূপ জাতির সামনে প্রকাশ করলেও অপরশ্রেণীর দলান্ধ পর্যালোচকরা বিভিন্ন সময় স্বপক্ষের গুণাগুণ বর্ণনা করে অন্যদল সম্পর্কে নিন্দার বর্ণনাই বেশি করেন।

এমনকি ইদানিং একশ্রেণীর পর্যালোচকগণ ইসলামের হিতাকাঙ্খী সেঁজে গুজবের বাজারে প্রচার করছে যে, চরমোনাইর মুরিদগণ নিজেদের পীরকে অন্ধের মতো মুহাব্বত করে। তাদের অনুসরণ কর্মীরা সত্য- মিথ্যার তাহকীক না করেই করে। চরমোনাইর পাগলা মুরিদরাই একদিন দলের জন্য কাল হবে। এদের কারণেই একসময় চরমোনাই কুলষিত হবে। চরমোনাই ওয়ালারা আওমীলীগের দালালী করলেও মূর্খ মুরিদরা এসব বুঝে না। এরা আকাবির উলামাদের গীবত করে। এরা সবাই দলান্ধসহ গুজবের বাজারে তারা আরো কত কথা প্রচার করে তার কোন হিসাব নেই।

আরও পড়ুন : কর্মীদের অন্ধ অনুসরণই কাল হতে পারে ইসলামী আন্দোলনের

আমি এমন গুজব প্রচারকারী ও এমন ধারণা পোষণকারীর কাছে আদবের সাথে জানতে চাই যে, আপনি চরমোনাইর দল ও মুরিদগণের ক্ষেত্রে এমন খারাপ ধারণা কেন করেন? কেন আপনি চরমোনাই নিয়ে সবসময় অহেতুক পেরেশানি অনুভব করেন? কোন মাকসাদে আপনি চরমোনাইর কর্মীদেরকে দলান্ধের কাতারে দাঁড় করাতে চান? ক্ষেত্রবিশেষ চরমোনাইর সকল কর্মীকে মূর্খও বলে ফেলেন? কেন? আপনার কি আশা যে, বর্তমান তাবলীগ জামাতের যে অবস্থা সে অবস্থা ভবিষ্যতে চরমোনাইরও হোক? একলা চলো নীতিতে যে দল এদেশে ইসলামী রাজনীতিতে সফলতা অর্জনের সর্বাত্মক চেষ্টা ও সাধনা করছে সে দল নারীর আঁচলে লুকিয়ে জোটবদ্ধ রাজনীতি করার ইরাদা কি আপনার দিলে চিৎকার করে? চরমোনাই ওয়ালারা ধর্মদ্রোহী ও নাস্তিকদের সাথে মিশে ইসলামের সৌন্দর্য ও স্বকীয়তা নষ্ট করুক- এমন সংকল্প বাস্তবায়নের মাকসাদে কি আপনি তাদের বিরুদ্ধে গুজবের বাজারে হকারের ভূমিকা পালন করছেন? দিনদিন চরমোনাইর সফলতা ও অগ্রগতি দেখে কি আপনার দিলে নিজ দল ভাঙ্গা- গড়ার কষ্ট একটু বেশিই কি অনুভব হয়?

জানি না চরমোনাইর নিন্দা প্রচারকারীদের শেষ মতলব কি। অনেক বিশ্লেষকগণ চরমোনাই সম্পর্কে এত বিষদাগার কেন করেন তা জানা নেই। তবুও সবার জ্ঞাতার্থে বলি যে, বর্তমানে ইসলামী রাজনীতিতে চরমোনাইর সফলতা ও কওমী অঙ্গনে তাদের ব্যাপক সাড়া দেখে কিছু মানুষ চিন্তিত। চিন্তার প্রতিফলণে তারা অনেক কিছু করে। দুদিন পরপর গুজব ছড়িয়ে জনগণের কাছে চরমোনাইকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করে। তারা চায় তাবলীগের সা’দী ফেতনার মত চরমোনাই- এ নতুন কোন ফেতনার সৃষ্টি হোক। ইসলামী রাজনীতিতে চরমোনাই যেন বিজয়ী না হতে পারে সে অপকৌশল তারা সবসময় করে। তবে যেসকল পর্যলোচকগণ বাস্তবিকপক্ষেই ইসলাম ও চরমোনাইর শুভাকাঙ্ক্ষী হয়ে নিজেদের মতামত মিডিয়ায় ও ফেইসবুকে প্রকাশ করেন সে সকল মহান ভাইদের উদ্দেশ্যে বলব যে, দূর থেকে স্বগোত্রের সমালোচনা না করে দীন বিজয়ের মাকসাদে চরমোনাইর দলে প্রবেশ করুন। বড়ত্ব ভুলে কাছ থেকে দলটাকে দেখুন ও জানুন। বিপ্লবীদের ভুলত্রুটি দীনি স্বার্থে সংশোধন করুন। শুধু দূর থেকে অগ্রগামীদের নিন্দাবাদ করবেন না। এতে তাবলীগের মত চরমোনাই-এও হিতে বিপরীত হবে। কারণ, তাবলীগের প্রচলিত নিয়মে দাওয়াতের কাজে সময় না দিয়ে মাদরাসায় বসে বসে এমন সমালোচনা ও পর্যালোচনা অতীতেও ঘরোয়া পরিবেশে হয়েছিল। কিন্তু ঐ ফিকিরে ইসলাম ও মুসলমানদের তেমন কোন ফায়দা হয়নি। বরং এখন যেমন আলেমগণ তাবলীগ নিয়ে ফিকির ও কাজ করছেন, বছর তিনেক আগেও যদি বর্তমান অবস্থা পরিলক্ষিত হতো এবং অতীতে প্রচুর সময় তাবলীগে দেওয়া যেতো তবে আজকের দিনটা এত লম্বা হত না। বর্তমানে দাওয়াত ও তাবলীগে আলেমদের নেতৃত্বে যতটুক কাজ হচ্ছে এবং তাবলীগ বিষয়ে আলেমদের পক্ষ থেকে যে পরিমাণ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে নিকটতম অতীতে যদি এসবকে সামান্যও বাস্তবায়ন করতেন তবে মনে হয় বাংলার বুকে সা’দী ও এতায়াতীদের ফেতনা আজ এত ভয়ংকর রূপে মাথাচাড়া দিয়ে দাঁড়াতে পারত না।

সেজন্য সকল শ্রেণী পেশার বিশ্লেষকগণের কাছে সাধারন মানুষের হৃদয় আকুতি হল তাবলীগের মত চরমোনাইর ক্ষেত্রেও আপনারা দূর থেকে সমালোচনা না করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ- এর সদস্য হোন। এবং ইসলাম ও রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দলের ভিতরে যে সমস্যাগুলো আছে সেগুলো সংশোধনের যথাযথ উদ্যোগ ও ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। কারণ এতে চরমোনাইর যতটুক ফায়দা হবে তার চেয়ে বেশি ফায়দা হবে ইসলাম, দেশ, মানবতা ও মুসলমানদের।

আরেকটি নিবেদন হল দল, মত, ধর্ম সম্পর্কে পর্যালোচনা ও মতামত ব্যক্ত করার অধিকার সবার আছে। যারা বিশ্লেষণ করার যোগ্যতা রাখেন তাদেরকে তাদের কাজ করতে বাঁধা দেওয়া অনুচিত হলেও তারা যেন নাযির সেঁজে কোন দল বা ব্যক্তি সম্পর্কে অহেতুক সমালোচনা না করেন। কারো হিতাকাঙ্কী সেঁজে তার গীবত যেন সুশীল সমাজ সাধারন মানুষের কাছে প্রচার না করেন। কারো ভক্তকে হেয় করা এবং কোন দলের কর্মীদেরকে ছোট চোখে না দেখার আহবান রইল তাদের দরবারে। বিশেষত নিজে কারো অন্ধভক্ত হয়ে চরমোনাইর সকল কর্মীকে দলান্ধ বলবেন না। কারণ, চরমোনাইর সাধারন সদস্যই যখন দলান্ধ নয় তখন সে দলের বিপ্লবী কর্মীবাহিনী ও যোগ্য মুবাল্লীগগণ কিভাবে দলান্ধ হয়? বাস্তবে যদি চরমোনাইর সকল কর্মীরা দলান্ধ হয় তবে তাদের দ্বারা কি এদেশে ইসলাম কায়েম সম্ভব হবে? হবে না। অন্ধভক্ত দ্বারা কখনো বিশেষ কিছু হয়না। শুধুমাত্র মূর্খ অনুসারী দিয়ে কোন আদর্শ বা কোন রাজনৈতিক দলের চূড়ান্ত বিজয় অসম্ভব। তাই চরমোনাইর সাথে সংশ্লিষ্ট সকল ইসলামী রাজনীতির বিপ্লবী কাফেলার কাছে ১৬ কোটি মাযলুম মানুষের ফরিয়াদ হল একলা চলো নীতিতে নিজেকে দলান্ধহীন সংগ্রামী সাধক হিসাবে গঠন করুন। আর দ্বিনী স্বার্থে কেউ যদি চরমোনাইর বাস্তবিক পর্যালোচনা করে তবে তার কথাগুলো মনে প্রানে মেনে নিতে সদা প্রস্তুত থাকুন। এমনকি তার জন্য মঙ্গলের দোয়া করবেন। যাতে এমন বিশ্লেষকগণ চরমোনাইর ভুলত্রুটি শুধু ফেইসবুকে প্রচার না করে সরাসরি সর্বপ্রথম দলের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গকে জানানোর ব্যবস্থা করেন। যাতে আমার মত হাজারো সাধারন মানুষ দাজ্জালী ফেতনা থেকে সহজে বাঁচতে পারি। এবং চরমোনাই সম্পর্কে বিভ্রান্তির কবল থেকে সাধারন মানুষকে রক্ষা করতে পারি। চরমোনাই সম্পর্কে মিথ্যা সংবাদ ও ভুল তথ্য মুখস্থ ও প্রচার করার গোনাহ থেকে আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুক।

লেখক : মুফতী ও শিক্ষা পরিচালক, কওমী মাদরাসা।

[ব্যক্তিগত মতামত আকারে লেখাগুলো একান্তই লেখকের ব্যক্তিগত চিন্তা ধারা। এ লেখার কোন দায় পাবলিক ভয়েস কর্তৃপক্ষ নেবে না।]

মন্তব্য করুন