

মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রণ করা বাংলাদেশের জনগণ শুরু থেকে ভালোভাবে নেয়নি। সম্প্রতি দিল্লি দাঙ্গার পর এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ্য হয়েছে। মোদির সফর বাতিলের দাবিতে ক্ষমতাসীন সরকার দল ছাড়া বাংলাদেশের প্রায় সব দল মতের লোকেরা একাট্টা হয়েছেন।
বিশেষ করে ইসলামী ঘরানার রাজনৈতিন দলগুলো প্রতিবাদে সরব হয়েছেন। মিছিল, মিটিং, বিক্ষোভসহ রাস্তায় নামার কর্মসূচিও দিয়েছেন। এরই মধ্যে আগামী ৪ ও ৬ মার্চ ঢাকাস হ সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। সম্প্রতি চরমোনাই এর বার্ষিক মাহফিলে অনুষ্ঠিত ওলামা মাশায়েখ সম্মেলনে চরমোনাই এর পীর ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর আমীর মুফতী সৈয়দ রেজাউল করীম মোদির বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণের প্রতিবাদের তীব্র হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।
নরেন্দ্র মোদির সফর নিয়ে বাংলাদেশে এই প্রতিবাদে শঙ্কিত ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। এমনটাই জানিয়েছে কলকাতার জনপ্রিয় দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা। আজ রোববার (১ মার্চ) এক প্রতিবেদনে চরমোনাই পীর মুফতী সৈয়দ রেজাউল করীম এভং হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা আহমদ শফীর কথা উল্লেখ্য করে এমন শঙ্কার কথা জানিয়েছে আনন্দবাজার পত্রিকা।
আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে; সিএএ-এনআরসি নিয়ে ক্ষোভ ছিলই। এর পরে দিল্লির সাম্প্রতিক হিংসার জেরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে ক্ষোভের মেঘ গভীর হচ্ছে বাংলাদেশে। ১৭ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মদিনে বর্ষব্যাপী অনুষ্ঠানের সূচনা হচ্ছে বাংলাদেশে।
সেই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে মোদীকে। কিন্তু সেই আমন্ত্রণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। এত দিন সোশ্যাল সাইটে এই প্রতিবাদ সীমাবদ্ধ ছিল। দিল্লির ঘটনার পরে মোদীর সফরের বিরোধিতায় সরব হয়েছেন চরমোনাই পীর এবং হেফাজতে ইসলামীর নেতা আল্লামা শফির মতো ধর্মীয় নেতারাও।
বিষয়টি নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী শঙ্কিত। কারণ মোদী বিরোধিতার নামে আসলে ভারত-বিরোধিতাই তীব্র হচ্ছে বাংলাদেশে। এনআরসি-র পরে লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশিকে ধাক্কা দিয়ে নিজের দেশে পাঠানো হবে, এমন প্রচার কৌশলে ছড়িয়েছিল একটি প্রভাবশালী মহল। তার পরে বিএসএফের গুলিতে চোরাকারবারি-পাচারকারীদের মৃত্যু কেন বেড়েছে, তা নিয়েও বিস্তর প্রচার চালানো হয়।
দিল্লিতে সংঘর্ষের ঘটনার পরে এ বার ধর্মীয় বিভাজনের খেলাটিও শুরু হয়েছে। কট্টরপন্থী ইসলামী সংগঠন হেফাজতে ইসলামীর আমীর আল্লামা শফী বৃহস্পতিবার বিবৃতিতে সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, ‘যার হাতে গণহত্যার দাগ লেগে আছে, তার উপস্থিতি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশের জনগণ মেনে নেবে না। অবিলম্বে মোদীর রাষ্ট্রীয় আমন্ত্রণ বাতিল করা হোক।’
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, ‘‘মোদীর সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড ধর্মনিরপেক্ষ দেশটিকে উগ্র-সাম্প্রদায়িক দেশে রূপান্তর করেছে। এ ধরনের সাম্প্রদায়িক প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশে অতিথির বেশে প্রবেশ করানোর পরিকল্পনা ছাত্র-জনতা রুখে দেবে।’’ বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ নামে একটি সংগঠনও রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
যদিও শাসক দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিরোধীতা নস্যাৎ করে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা অস্বীকার করলে তা হবে কৃতঘ্নতা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবেই মোদীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
সূত্রের বক্তব্য, শুধুমাত্র বিরোধী সমর্থকরাই নন, আওয়ামী লীগের তরুণ প্রজন্মও মোদীকে আমন্ত্রণ জানানোয় ক্ষুব্ধ। তবে দলীয় নেতা-কর্মীদের বিষয়টি নিয়ে সংযত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হাসিনার বক্তব্য, ভারতের প্রধানমন্ত্রী সম্মানিত অতিথি। এমন কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি যেন তৈরি না-হয়, যাতে তিনি সফরই বাতিল করে দেন।
মোদী ছাড়াও ভারতের বিভিন্ন নেতাকে আমন্ত্রণের প্রক্রিয়া চলছে ওই অনুষ্ঠানে। আওয়ামী লীগের নেতা এবং সাংসদ শেখ হেলালউদ্দিন ভারতীয় নেতাদের নিমন্ত্রণের দায়িত্বে রয়েছেন। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, বিজেপি সভাপতি জেপি নড্ডা, কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গান্ধী, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে সিপিএম এবং সিপিআই-এর কিছু নেতাকে।
/এসএস