

চলছে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের উত্তর ও দক্ষিণের নির্বাচন। ব্যাপক নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে নির্বাচন হলেও বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে দিনের শুরুতেই বেশ কিছু অনিয়মের সংবাদ পাওয়া গেছে। বিশেষ করে তুলনামূলক দুর্বল প্রতীক হাতপাখার এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন হাতপাখার নির্বাচন পরিচালনা করা নির্বাচন সমন্বয়কারীরা।
কামরাঙ্গীচর থানায় হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী আলহাজ্ব আ. রহমানের নির্বাচন বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী হারুণ বাদশা অভিযোগ করে বলেছেন, কামরাঙ্গীচর থানার বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে হাতপাখা প্রতীকের এজেন্টদের মারধর করে তাদের বের করে দেওয়া হয়েছে। অনেকের কাগজপত্র রেখে তাদেরকে নাজেহাল করারও অভিযোগ করেছেন তিনি।
অভিযোগে তিনি জানান, ৫৫ নং ওয়ার্ডের ঝাউচর কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে এবং ভোটাররা স্মার্টকার্ড দেখিয়ে ভোট দিতে গেলে তাদেরকে জোর করে নৌকা প্রতীকে ভোট দিতে বাধ্য করা হচ্ছে এবং যারা নৌকা প্রতীকে ভোট দিতে অস্বিকৃতি জানাচ্ছেন তাদেরকে মারধর করারও অভিযোগ করেছেন তিনি। একই ভাবে ৫৬ নং ওয়ার্ডের কয়েকটি কেন্দ্র থেকেও এজেন্ট এবং পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। এছাড়াও ৫৭ নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে ২৩ জন এজেন্টকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন তারা।
একইভাবে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে আরও অভিযোগ এসেছে হাতপাখা সমর্থকদের মারধর করা এবং এজেন্টদের বের করে দেওয়ার ব্যাপারে। ঢাকা উত্তর সিটির দারুসসালাম এলাকায় একজন হাতপাখার ভোটারকে মারধর করে রক্তাক্ত করা হয়েছে বলেও জানা গেছে। এছাড়াও ৪৮ নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন কেন্দ্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কার্জন হল কেন্দ্র ও ধানমন্ডি সিটি কলেজ কেন্দ্রে হাতপাখা প্রতীকের এজেন্ট ও ভোটারদের প্রবেশ করতে না দেওয়ার অভিযোগ এসেছে।
আজ সকাল ৮টা থেকে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে রিটানিং অফিসার আবুল কাশেম ও মো. আব্দুল বাতেন।
বিরতিহীনভাবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা জানান, নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রয়েছে। ভোটাররা নির্ভিঘ্নে ভোট দিচ্ছেন বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন কারও সহায়ক না, কারও পক্ষে বা বিপক্ষেও না। সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে আইন অনুযায়ী কমিশন দায়িত্ব পালন করছে।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেন, ভোটার, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, ভোট কেন্দ্রে প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টসহ সংশ্লিষ্ট সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। টানা ২০ দিন প্রচারণা শেষে নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় সকল প্রকার প্রচারণা শেষ হয়েছে। ভোট উপলক্ষে রাজধানীতে ইতোমধ্যে মটরসাইকেল চলাচল বন্ধ হয়েছে।
শুক্রবার রাত ১২টা থেকে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়াও শুক্রবার রাত ১২টা থেকে আজ রাত ১২টা পর্যন্ত নৌ চলাচলও বন্ধ রয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ৫০ হাজার সদস্য মোতায়েন করেছে ইসি। এদের মধ্যে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ ও আনসার নিয়োজিত রয়েছে এবং বিজিবি, র্যাব ও নৌ-পুলিশ নির্বাচনী এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী বিভিন্ন বাহিনী বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ভোটের দায়িত্বে নিজ নিজ সদস্যদের নির্দিষ্ট জায়গায় মোতায়েন করেছেন।
ইসির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দুই সিটিতে ২ হাজার ৪৬৮ কেন্দ্রের মধ্যে ১ হাজার ৫৯৭টি কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ। আর সাধারণ কেন্দ্র রয়েছে ৮৭১টি। নিরাপত্তার স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে ৬ জন অস্ত্রসহ পুলিশ (একজন এসআই, একজন এএসআই ও চারজন কনস্টেবল), ২ জন অস্ত্রসহ অঙ্গীভূত আনসার এবং ১০ জন লাঠিসহ অঙ্গীভূত আনসার/ভিডিপি সদস্য (চারজন নারী ও ছয়জন পুরুষ) মোতায়েন রয়েছে। আর সাধারণ ভোটকেন্দ্রে অস্ত্রসহ চারজন পুলিশ (এসআই/এএসআই ১ জন ও ৩ জন কনস্টেবল), ২ জন অস্ত্রসহ অঙ্গীভূত আনসার, ১০ জন লাঠিসহ অঙ্গীভূত আনসার/ভিডিপি সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
এই হিসেবে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়োজিত থাকছে আনসার ও পুলিশের ৪২ হাজার ৬৮২ জন সদস্য। আর ভোটের এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ৭৫ প্লাটুন বিজিবির ২ হাজার ২৫০ জন জোয়ান নিয়োজিত রয়েছেন। এছাড়া পুলিশ ও এপিবিএন সমন্বয়ে ১২৪টি ভ্রাম্যমাণ ও ৪৩টি স্ট্রাইকিং টিম, র্যাবের ১২৯টি টিম নিয়োজিত রয়েছে। অর্থাৎ র্যাব, পুলিশ, এপিবিএন, স্ট্রাইকিং ও ভ্রাম্যমাণ টিম মিলিয়ে প্রায় ৪ হাজারের মতো ফোর্স মোতায়েন রয়েছে। সব মিলিয়ে এ নির্বাচনে ৫০ হাজারের মতো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত আছেন। ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বাসসকে জানান, নির্বাচন কমিশন প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক যেখানে যেমন দরকার সে অনুযায়ী যেকোনো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়োজিত করার নির্দেশনা দিয়ে রেখেছে। নির্বাচনী আচরণ বিধি প্রতিপালন ও অপরাধের বিচার কাজের জন্য দুই সিটিতে ১২৯ জন নির্বাহী হাকিম ও ৬৪ জন বিচারিক হাকিম নিয়োগ করা হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটিতে ৫৪ জন ও দক্ষিণ সিটিতে ৭৫ জন নির্বাহী হাকিম ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে থাকবেন।
এছাড়া উত্তর সিটিতে ২৭ জন ও দক্ষিণে ৩৭ জন বিচারিক হাকিম ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দেশবাসী ও বিদেশিরা ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। এ নির্বাচনে মোট ২২ প্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ১৩ জন স্থানীয় পর্যবেক্ষক কাজ করছেন। এদের মধ্যে উত্তরে ৫০৩, দক্ষিণে ৪৫৭ এবং কেন্দ্রীয়ভাবে ৫৩ পর্যবেক্ষক পর্যবেক্ষণ করছেন। আর বিদেশী পর্যবেক্ষক হিসেবে কাজ করছেন মোট ৭৪জন। তাদের মধ্যে ৪৬ বিদেশী এবং ২৮ বাংলাদেশী নাগরিক রয়েছেন।
ইসি সূত্র জানায়, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে ভোটার সংখ্যা ৩০ লাখ ১০ হাজার ২৭৩ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ৫৬৭ জন এবং নারী ১৪ লাখ ৬০ হাজার।
কামরাঙ্গীচর থেকে ভিডিও লাইভে অভিযোগ জানাচ্ছেন একজন (ভিডিও)