নাগরিকত্ব আইন নিয়ে সৌরভ কন্যার পোস্ট নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে!

প্রকাশিত: ১:১০ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৯

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সম্প্রতি পাশ করা নাগরিকত্ব আইন নিয়ে সমালোচনার অন্ত নেই। লেখক, গায়ক, ফিল্ম স্টার, শিক্ষাবিদ থেকে শুরু করে সেলিব্রেটি সন্তানরাও সরব হয়েছে এই আইনের সমালোচনায়। সর্বশেষ এই তালিকায় যুক্ত হয়েছেন বাঙালি ক্রিকেটার ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান সৌরভ গাঙ্গুলির মেয়ে সানা গাঙ্গুলি।

ইনস্টাগ্রামে ভারতের প্রখ্যাত লেখক খুশবন্ত সিং এর লেখা থেকে একটি ফটো কার্টেসি শেয়ার করেন সানা। আর এতেই সোস্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে রাজনৈতিক মহুল পর্যন্ত আলোচনার ঢেউ পড়েছে। কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা এ নিয়ে লম্বা প্রতিবেদন করেছে। বক্তব্য দিয়েছেন সৌরভ গাঙ্গুলিও। মেয়েকে না জড়াতে অনুরোধ করেছেন সৌরভ।

আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, নিজস্ব কোনও মন্তব্য নয়, সবটাই খুশবন্ত সিংহের লেখা থেকে উদ্ধৃত। ইনস্টাগ্রামে সেই ‘উদ্ধৃতি’ পোস্ট করেই সাড়া ফেলে দিয়েছেন সানা গঙ্গোপাধ্যায়। কারণ, ওই উদ্ধৃতির গোটাটাই কেন্দ্রীয় সরকার, বিজেপি এবং সঙ্ঘ পরিবারকে কটাক্ষে ঠাসা। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট তথা প্রাক্তন ক্রিকেটার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মেয়ে সানা সদ্য আঠেরো পেরিয়েছেন। সম্প্রতি তিনি তাঁর ইনস্টাগ্রামে ওই পোস্ট করেছেন।

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ-প্রতিবাদ চলছে। এ রাজ্যেও কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে পথে নেমে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ দেখানো হচ্ছে। কোথাও কোথা ছড়িয়েছে অশান্তিও। সেই আবহেই সৌরভ-কন্যার এমন ‘পোস্ট’ রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছে। কী লিখেছেন সানা? ইনস্টাগ্রাম স্টোরি হিসেবে পোস্ট করতে গিয়ে তিনি ২০০৩ সালে প্রকাশিত খুশবন্ত সিংহের ‘দ্য এন্ড অব ইন্ডিয়া’কে বেছে নিয়েছেন।

সানা সেই বই থেকে তুলে ধরেছেন যে অংশ, সেখানে লেখা হয়েছে, ‘প্রতিটা ফ্যাসিস্ট সরকারের একটা দল বা গোষ্ঠীর প্রয়োজন হয়। নিজেদের বেড়ে ওঠার জন্য তারা ওই দল বা গোষ্ঠীগুলিকে ব্যবহার করতে তাদের শয়তানেও পরিণত করে। দু’একটা দল দিয়ে এটা শুরু হয়। কিন্তু সেটা কখনওই সেখানে শেষ হয় না। ঘৃণার উপর নির্ভর করে যে আন্দোলন, সেই আন্দোলন নিজেকে ধরে রাখতে পারে অবিরাম একটা ভয় বা দ্বন্দ্বের বাতাবরণ তৈরি করে’।

View this post on Instagram

Dammn respect and kudos to her @sanaganguly

A post shared by shudha orgasm (@shudha_orgaaaasm) on

রাজনৈতিক মহলের মতে, সানা এই উদ্ধৃতির মাধ্যমে আসলে বিজেপি এবং সঙ্ঘ পরিবারকেই নিশানা করতে চেয়েছেন। এখানেই থেমে থাকেননি সানা। খুশবন্তের লেখার আরও কিছু অংশ তিনি পোস্ট করেছেন। সেই অংশে লেখা হয়েছে, ‘আজ যারা আমরা নিজেদের নিরাপদ মনে করছি, ভাবছি আমরা তো মুসলমান বা খ্রিস্টান নই, তারা মূর্খের স্বর্গে বাস করছি। সঙ্ঘ ইতিমধ্যেই বামপন্থী ইতিহাসবিদ এবং পশ্চিমি সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী যুবসমাজকে টার্গেট করেছে। কাল তাদের ঘৃণা গিয়ে পড়বে স্কার্ট পরিহিত মহিলা, যাঁরা মাংস খান, মদ্যপান করেন, বিদেশি সিনেমা দেখেন, বছর বছর তীর্থে যান না, দাঁতনের পরিবর্তে টুথপেস্ট ব্যবহার করেন, আয়ুর্বেদিকের বদলে অ্যালোপ্যাথি ওষুধ পছন্দ করেন, দেখা হলে ‘জয় শ্রী রাম’ বলার বদলে হাত মেলান বা চুম্বন করেন, তাঁদের উপর। কেউ নিরাপদ নয়। ভারতকে বাঁচাতে হলে এগুলি আমাদের ভীষণ ভাবে অনুধাবন করতে হবে’।

নেট দুনিয়ায় ইতিমধ্যেই সানার এই পোস্ট বহু আলোচিত। তাদের একটা অংশের মতে, গোটা পোস্টটাতে যে ভাবে খুশবন্তের লেখার মাধ্যমে সানা ভারতের বর্তমান পরিস্থিতিকে তুলে ধরেছেন, তা প্রশংসনীয়। কেউ কেউ আবার সানার বয়সকে উল্লেখ করে লিখেছেন, রাজনীতি বোঝার জন্য বড়ই অল্প বয়স। সেখানেই অপর পক্ষ মনে করিয়ে দিয়েছেন, ভারতে ভোট দেওয়ার বয়স কিন্তু ১৮। সানার বয়স ১৮ পেরিয়ে গিয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন তাদের একাংশ।

সৌরভ নিজে সব সময়েই রাজনৈতিক মন্তব্য থেকে নিজেকে দূরে রেখেছেন। তার মুখে রাজনৈতিক বিতর্কমূলক কোনও মন্তব্য কখনওই শোনা যায়নি। কিন্তু সানার পোস্ট রাজনৈতিক বার্তায় ভরপুর বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

/এসএস

মন্তব্য করুন