কাদিয়ানীদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণার দাবি: স্থানীয় এমপির একাত্মতা

প্রকাশিত: ১০:৪৩ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ৩০, ২০১৯

খতমে নবুওয়াত সংরক্ষণ কমিটি বাংলাদেশের উদ্যোগে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানের কুচিয়ামোড়া কলেজ ময়দানে আয়োজিত খতমে নবুওয়াত মহাসম্মেলনে কাদিয়ানিদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন বক্তারা। এসময় কাদিয়ানিরা যে কাফের এ ব্যাপারে একাত্মতা ঘোষণা করেন স্থানীয় এমপি মাহি বি চৌধুরী।

সম্মেলনে প্রধান মেহমান হিসেবে আমীরে হেফাজত আল্লামা শাহ আহমদ শফীর উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও অসুস্থতার কারণে তিনি আসতে পারেননি। তবে তিনি সার্বিক নির্দেশনা দিয়েছেন। বিশেষ করে সম্মেলন থেকে জানানো হয় আল্লামা শাহ আহমাদ শফী সকলকে একসাথে কাদিয়ানী বিরোধী আন্দোলন জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং বিভাগওয়ারী মহাসমাবেশের মাধ্যমে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চূড়ান্ত মহাসমাবেশের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। খতমে নবুওয়াত সংরক্ষণ কমিটি বাংলাদেশকে সে উদ্যোগ গ্রহণ করতে নির্দেশনা দিয়েছেন।

আল্লামা আহমদ শফীর নির্দেশনার আলোকে খতমে নবুওয়াত কেন্দ্রিক যতোগুলো সংগঠন আছে সবগুলো খতমে নবুওয়াত সংরক্ষণ কমিটির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করা হয়। নেতৃবৃন্দ খতমে নবুওয়াত সংরক্ষণ কমিটির মধুপুর পীর সাহেবের নেতৃত্বে আগামী দিনের চূড়ান্ত কর্মসূচি প্রদানের জন্য নিজেদের মতামত তুলে ধরেন।

গতকাল শুক্রবার মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে কুচিয়ামোড়া কলেজ ময়দানে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব ও দারুল উলুম হাটহাজারীর প্রধান মুহাদ্দিস শায়খুল হাদিস হাফেজ আল্লামা জোনায়েদ বাবুনগরী।

এসময় বক্তারা বলেন, কাদিয়ানীরা কাফের। এ ব্যাপারে সকল মুসলমান একমত। যারা তাদের অমুসলিম মনে করে না তারাও কাফের। তাদের কুফরির ব্যাপারে নতুন করে কিছু বলার নাই। পৃথিবীর সব মুসলিম দেশেই রাষ্ট্রীয়ভাবে তারা কাফের। একমাত্র বাংলাদেশ এর ব্যতিক্রম। বাংলাদেশে তাদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে।

এসময় সম্মেলনে যোগ দিয়ে মুন্সিগঞ্জ ১ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য মাহী বি চৌধুরী বলেন, আমরা যে নবীর মাধ্যমে দীন পেয়েছি তিনি আমাদের শেষ নবী। খতমে নবুওয়াত না মানলে কোনো মানুষ মুসলমান থাকতে পারে না। সুতরাং তারা কাফের।

বক্তারা বলেন, প্রিয় নবী মুহাম্মাদুর রাসূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খতমে নবুওয়াতকে অস্বীকার করবে আবার নিজেদের মুসলিম পরিচয় দিবে এ হঠকারীতা সহ্য করা যায় না। তারা যা ইচ্ছা তাই করুক কিন্তু মুসলিম পরিচয় দিতে পারবে না। নিজেদের মুসলিম দাবি করলে বিশ্বনবীর খতমে নবুওয়াতকে স্বীকার করতে হবে। এজন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে খতমে নবুওয়াত অস্বীকারকারী কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে।

বক্তারা আরো বলেন, তারা এদেশে একটা কাদিয়ানী রাষ্ট্র কায়েম করতে চায়। সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। সারাদেশে তাদের ১০০ এর অধিক কেন্দ্র রয়েছে। রাষ্ট্রের বিভিন্ন সেক্টরে লোক থাকার ফলে তারা বাধাহীন কাজ করছে। প্রাথমিকভাবে পঞ্চগড়কে নিজেদের টার্গেট বানিয়েছে। কাদিয়ানী নেতা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আমজাদ খান চৌধুরী প্রাণ-আরএফএল এবং সিজান এর মাধ্যমে কাদিয়ানীবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন।

বক্তারা তাদের বক্তব্যে আরো বলেন, পীর সাহেব মধুপুর খতমে নবুওয়াত আন্দোলনের এক সিপাহসালার। তিনি ময়দানের বীর। তার নেতৃত্বে ভণ্ড নবী বরকতুল্লাহসহ অনেক আন্দোলন সফল হয়েছে। তিনি ডাক দিলে এ দেশের সব ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা সাড়া দিবেন। তাই তাকেই এ দায়িত্ব নিতে হবে। আমরা তার পাশে থাকবো ইনশাআল্লাহ।

খতমে নবুওয়াত সংরক্ষণ কমিটি বাংলাদেশের আমীর আল্লামা আবদুল হামিদ পীর সাহেব মধুপুর এর সভাপতিত্বে ও মাওলানা আবুল কাশেম আশরাফী, হাফেজ মাওলানা আহমাদুল্লাহ ও মাসউদুর রহমান আইয়ূবীর পরিচালনায় বিশেষ মেহমান হিসেবে আরো বক্তব্য রাখেন বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা আব্দুল কুদ্দুস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী, আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়াত বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী।

সভাপতির বক্তব্যে আল্লামা আবদুল হামিদ পীর সাহেব মধুপুরী বলেন, এ সরকারের কাছে আমাদের এক দফা এক দাবি কাদিয়ানীদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করা। সরকার প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি এ কাজটি করেন তাহলে চিরদিনের জন্য অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন মহাসচিব মুফতি মুহাম্মদ ইমামুদ্দিন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক, আল্লামা আহমাদ শফী এর খাস শাগরিদ ও খলীফা মাওলানা নুরুল আমিন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলহাজ্ব নুরুজ্জামান শিকদার, কেয়াইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জনাব মোঃ আশরাফ আলী, মাওলানা জাফরুল্লাহ খান,শাইখুল হাদীস মাওলানা আজিজুল হক, খতমে নবুওয়াত আন্দোলনের আমীর মুফতি নূর হোসাইন নুরানী, আমরা ঢাকাবাসীর সভাপতি আলহাজ্ব শামসুল হক ও মহাসচিব জনাব জামাল নাসের চৌধুরী, খতমে নবুওয়াত সংরক্ষণ কমিটি বাংলাদেশের নায়েবে আমীর মাওলানা রশীদ আহমাদ, মাওলানা আবু আম্মার আব্দুল্লাহ, সহ- সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা উবায়দুল্লাহ কাসেমী, প্রচার সম্পাদক আলহাজ্ব নাসির মাহমুদ, ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা রশিদ আহমাদ, মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজী,হাফেজ মাওলানা আব্দুল খালেক শরীয়তপুরী, মুফতি মাসউদুল কারীম, মাওলানা আব্দুল্লাহ বিক্রমপুরী, মাওলানা ইমদাদুল ইসলাম, মাওলানা মিনহাজ উদ্দিন, মুফতি ইউনুস কাসেমী, মুফতি মাহবুবুর রহমান জিয়া ও মাওলানা ওমর ফারুক জিহাদী প্রমুখ।

/এসএস

মন্তব্য করুন