
ইসমাঈল আযহার: মৃত্যু যে এতো চমৎকার হতে পারে; এতোটা সুখকর হতে পারে তা কল্পনাও করিনি এর আগে। কেমন যেন ভৃত্য তার মনিবের সাক্ষাতের অপেক্ষায় বাংলোতে বসেছিলেন আর মনিবের পক্ষে থেকে ডাক পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার দিদারে প্রবেশ করলেন।
প্রতিদিনের মতো মসজিদে গিয়ে ফজরের নামাজ জামাতের সাথে আদায় করে তাসবীহ তাহলীল পাঠ করছিলেন। ঠিক ওই সময় মালিকের ডাক পড়ে যায়। চলে যান দুনিয়ার মায়া ছেড়ে দয়াময়ের সাক্ষাতে।
এমনই এক সুখকর মৃত্যুতে পরম প্রেমিকের সানিধ্যে চলে গেছেন রাজধানীর বারিধারার নর্দ্দা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা সিদ্দিকুর রহমান বেপারী (৭০)।
জানা যায়, নর্দ্দার আজিজ সড়কে চার তলার একটি ফ্লাটে ভাড়া বাসায় থাকতেন সিদ্দিক বেপারী। বাসার পাশের বিল্ডিং ছিলো স্থানীয় জামে মসজিদ।
প্রতিদিনের মতো গতকাল বৃহস্পতিবার ফজরের নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে মসজিদে যান সিদ্দিক বেপারী ও তার সেজো ছেলে শাহিন। ছেলে শাহিন নামাজ পড়ে টঙ্গী চলে যান কোনো একটা কাজে। বাবা সিদ্দিক বেপারী বসে ছিলেন মসজিদেই। নামাজ শেষে জিকির-আজকার ও তাসবীহ-তাহলীল করছিলেন। এমন সময় শরীর ঘর্মাক্ত হয়ে যায় তার। কিছুটা অসস্তিবোধ করেন। তখনো পর্যন্ত মসজিদে উপস্থিতরতদেরকে ফ্যান ছাড়তে বলেন। ফ্যান ছেড়ে উপস্থিতজনরা এগিয়ে আসেন। ছেলেদের খবর দেয়া হলে অদূরে নিজের প্রতিষ্ঠিত মাদরাসা থেকে ছোট ছেলে মাওলানা আল আমিন ও বাসা থেকে আমিন ছুটে আসেন।
দুই সন্তান এসে দেখেন বাবা ছটফট করছেন আর বলছেন, ‘আমার ভালো লাগছে না। আমি চলে যাবো, আমার সময় শেষ’। কথাগুলো বলছিলেন আর তাওবা ইস্তেগফার করছিলেন। মুহুর্তের মধ্যেই অন্য সবার চোখের সামনেই নিস্তেজ হয়ে যান সিদ্দিকুর রহমান। মুসুল্লিদের সহায়তায় ছেলেরা মিলে বাবাকে নিয়ে যান স্থানীয় একটি হাসপাতালে। হাসপাতালের ডাক্তার জানান মসজিদে থাকতেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন।
মৃত্যুকালে সিদ্দিকুর রহমান দুই স্ত্রীসহ ৫ ছেলে, ১ মেয়ে, নাতী-নাতনী ও আত্মীয় স্বজন রেখে যান।
নিহতের আত্মীয় পাবলিক ভয়েস টোয়েন্টিফোর ডটকম এর যুগ্ম সম্পাদক শাহনূর শাহীন জানান, নিহতের ছেলে শাহিন তার ছোট বোনের স্বামী। তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সোয়া ৭টার দিকে ছোট বোন আমাকে ফোন করে। কেটে দিয়ে কল ব্যক করি। রিসিভ করেই শুনি কান্নার আওয়াজ। কাঁদতে কাঁদতে বোন বলল, আব্বা মারা গেছে। জিজ্ঞেস করলাম কোন আব্বা? বলল- আমার শশুর। সঙ্গে সঙ্গে তাদের বাসায় ছুটে যাই। সেখানে গিয়ে এমন সুখকর মৃত্যুর কথা জানতে পারি’।
শাহনূর শাহীন বলেন, ‘পরিপূর্ণ সুস্থ ছিলেন তিনি। সর্বশেষ ছ’মাস আগে ডাক্তারের স্বরনাপন্ন হয়েছিলেন। উল্লেখ্য করার মতো কোনো অসুখে ভুগছিলেন না। একদম সুস্থ একজন মানুষ প্রতিদিনের মতো ঘুম থেকে উঠে মসজিদে গিয়ে ফজরের নামাজ পড়ে মৃত্যু বরণ করলেন। যেন প্রিয় পরম প্রেমিক রব্বে কারীমের সাথে এমন একটা সাক্ষাতের অপেক্ষাতেই ছিলেন। তার ডাকের অপেক্ষাতেই যেন নামাজ শেষে বসে ছিলেন মসজিদে’। শাহনূর শাহীন বলেন, ‘উনার মৃত্যু যতোটা বিষাদের ছিলো; ঠিক ততোটাই সুখকর ছিলো’।
তিনি জানান, নিহতের গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুর জেলার ডামুড্যা উপজেলায়। নর্দ্দার আজিজ সড়ক বালুর মাঠে ছেলে মাওলানা আল আমিনের ইমামতিতে নামাজে জানাযা শেষে বৃহস্পতিবার সকালেই লাশ গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। উপজেলার পূর্ব ডামুড্যা ইউনিয়নের নিজ বাড়িতে দ্বিতীয় নামাজে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে রাত সাড়ে দশটায় তাকে দাফন করা হয়।
কাউকে আপনজনের মৃত্যুর সংবাদ জানানোর চেয়ে পৃথিবীতে কঠিন কোনো কাজ নেই
আই.এ

