

কাশ্মীর সংকট কাটেনি এখনো। তবে কাশ্মীর ইস্যু সংকট বাড়িয়ে তুলছে ভারত জুড়ে। কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা বিলুপ্তির ফলে কেন্দ্রীয় সরকারের অযাচিত হস্তক্ষেপের আশঙ্কা চেপে বসছে অন্যান্য রাজ্যেও। জেগে উঠছে স্বাধীনতাকামীরা। গতকাল মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) যুক্তরাজ্যে বসেই মনিপুরের দুই নেতা তাদের রাজা লেইশেম্বা সানাজাওবার ‘পক্ষ থেকে’ মণিপুর রাজ্যের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, লন্ডনে বসবাসরত দুই মনিপুরী নেতা ইয়ামবিন বিরেন ও নরেংবাম সমরজিৎ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে ‘প্রবাসী মণিপুর সরকার’ গঠনের ঘোষণা দেন। বিরেন নিজেকে মণিপুর স্টেট কাউন্সিলের মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন। আর সমরজিৎ দাবি করেন, তিনি নবগঠিত সরকারের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী।
এ দুই নেতা দাবি করেন, তারা তাদের রাজা লেইশেম্বা সানাজাওবার পক্ষ থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন।
তবে তাদের এ দাবিকে অস্বীকার করেছেন মণিপুরের রাজা লেইশেম্বা সানাজাওবা। আজ বুধবার প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় রাজা লেইশেম্বা বলেন, লন্ডনে বসে ইয়ামবিন বিরেন এবং নরেংবাম সমরজিৎ নামের যেই দুইজন মনিপুর নিয়ে বিতর্কিত দাবি করেছেন তাদের অনুরোধে কিছু কাগজে স্বাক্ষর করেছিলেন তিনি।
লন্ডনে কিছু ঐতিহাসিক দলিল ও ছবি নিয়ে গবেষণার জন্য ওই কাগজে রাজার স্বাক্ষর দরকার বলে জানিয়ে তার থেকে সই নেয়া হয়েছিল বলে দাবি করেছেন রাজা লেইশেম্বা। তিনি বলেন, এই সংবাদ শুনে আমি খুবই বিস্মিত ও অবাক হয়েছি
এর আগেও স্বাধীনতা দিবসের একদিন আগে জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে যখন উত্তেজনা চরমে, ঠিক তখনই ভারতের আরেকটি রাজ্যের ইঙ্গিত চিন্তার মধ্যে ফেলে দেয় মোদি সরকারকে। গত ১৪ আগস্ট ওই রাজ্যেজুড়ে উড়তে দেখা যায় নাগা জাতীয় পতাকা। বিশেষ করে নজর কেড়েছে রাজ্যের সেনাপতি জেলা।
সংশ্লিষ্ট খবর:
নিজেদের পতাকা প্রদর্শন করে ভারতের ৫ রাজ্যে স্বাধীনতার ইঙ্গিত
সেখানে গোটা দেশ থেকে কয়েক হাজার নাগা জনগোষ্ঠীর মানুষ একত্রিত হয়ে ‘নাগা স্বাধীনতা দিবস’ পালন করেন। এ নিয়ে ভারতের পাঁচ রাজ্য নাগাল্যান্ড, মণিপুর, অরুণাচল, মিজোরাম ও আসামে স্বাধীনতার ইঙ্গিত পাওয়া গেল।
এই ঘটনায় উদ্বেগ ছড়িয়েছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে। ফের উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যটি অশান্ত হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নাগাল্যান্ড, মণিপুর, অরুণাচল প্রদেশ, মিজোরাম, আসাম ও মিয়ানমারের বিস্তীর্ণ অঞ্চল নিয়ে নাগা স্বাধীনভূমি বা ‘নাগালিম’ গড়ার ডাক বহুদিনের পুরোনো। এই দাবিতে অনেক দিন ধরেই সহিংস আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে নাগা বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন এনএসসিএন।
তবে সংগঠনটি দুভাগ হয়ে যাওয়ার পর মুইভা গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। ফলে বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ছাড়া আপাতত শান্ত নাগাল্যান্ড। কিন্তু গতকালের পতাকা উত্তোলনে ফের ছড়িয়েছে উদ্বেগ। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগে পর্যন্ত ভারতের সংবিধানের ৩৭০ ধারার জন্য বিশেষ মর্যাদা ভোগ করত জম্মু-কাশ্মীর।
একইভাবে নাগাল্যান্ড-সহ উত্তর-পূর্ব ভারতের বাকি রাজ্যগুলিও ৩৭১ ধারার ফলে বিশেষ কিছু সুবিধা পায়। তাই ৩৭০ ধারা বিলুপ্ত হওয়ায় উদ্বেগ ছড়িয়েছে সেখানকার মানুষের মধ্যেও। ফলে নাগা জাতীয় পতাকা উত্তোলন একপ্রকার বিচ্ছিন্নতাবাদী পদক্ষেপ বলেই মনে করা হচ্ছে। কিংবা নাগা পতাকা প্রকাশ্যে নিয়ে আসার অর্থই হচ্ছে তারা স্বাধীনতাকামী মানুষ।
/এসএস