র্যাবের রিমান্ডে থাকা ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ওরপে ক্যাসিনো সম্রাট রিমান্ডে থাকা অবস্থায় বিস্ফোরক প্রশ্ন ছুড়েছেন কর্মকর্তাদের প্রতি। এসময় সম্রাট অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাট বলেছেন, ‘ক্যাসিনোর টাকার ভাগ তো অনেকেই পেয়েছেন। শুধু তাকে কেন দায়ী করা হচ্ছে? তাকে কেন গ্রেফতার করা হয়েছে? অন্যদের কেন নয়?’। এভাবেই বিস্ফোরক প্রশ্ন ছুড়েন সম্রাট।
গত মঙ্গলবার রিমান্ড মঞ্জুরের পর সম্রাট ও তার সহযোগী এনামুল হক আরমানকে প্রথমে ডিবি হেফাজতে রাখা রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়- ক্যাসিনো বাণিজ্য, অবৈধ মার্কেট, দোকান, ফুটপাত, মাদক ব্যবসার কমিশনসহ বিভিন্ন খাত থেকে উপার্জিত টাকা কোথায় রাখা হয়েছে?
মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার পর্যন্ত আলাদাভাবে সম্রাট ও আরমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এসময় ডিবি কর্মকর্তাদের পাল্টা প্রশ্ন করেন সম্রাট।
এর আগে পৃথক পৃথক দুই মামলায় পুলিশের ২০ দিনের রিমান্ড আবেদনে মঙ্গলবার অস্ত্র ও মাদকের দুটি মামলায় সম্রাটকে ৫ দিন করে ১০ দিন এবং তার সহযোগী আরমানকে মাদক মামলায় ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
ঢাকায় ক্লাব ব্যবসার আড়ালে অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনার অভিযোগে সম্রাট এখন রিমান্ডে র্যাবের হেফাজতে আছে। অস্ত্র ও মাদক আইনে মামলায় বুধবার দিনভর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর আগে মঙ্গলবার দুই মামলায় আদালত তাকে ১০ দিনেরন রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে মঙ্গলবার রাতে সম্রাটের মামলা দুটি র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া অস্ত্র ও মাদক আইনের দুই মামলাতেই এখন র্যাব তদন্ত করছে। মঙ্গলবার রাতে মামলা দুটি র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মো. আবদুল বাতেন। পরে বুধবার তাকে র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে দল ও দলের বাইরে আড়ালে থেকে এসব অপকর্মে কারা সহযোগিতা করতেন? কাকরাইলে ভূঁইয়া ম্যানশন দখল এবং সেখানে কারা যাওয়া-আসা করতেন, ক্যাসিনো ও টেন্ডার সিন্ডিকেটে কারা রয়েছেন- এসব বিষয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু ডিবির অনেক প্রশ্নের জবাব দেননি সম্রাট।
উল্টো ডিবি কর্মকর্তাদের কাছে প্রশ্ন রেখেছেন- ‘শুধু আমি একা কেন? ক্যাসিনোর টাকা তো অনেকেই পেয়েছেন। তারা কেন বহাল তবিয়তে?’।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, যুবলীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা ক্যাসিনো থেকে মাসে ১০ লাখ টাকা নিতেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক সদস্য ও পদস্থ সরকারি কর্মকর্তারাও সম্রাটের কাছ থেকে নিয়মিত টাকা নিতেন।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) লিগ্যাল মিডিয়া উইংয়ের উপপরিচালক মিজানুর রহমান বুধবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমকে বলেন, সম্রাট ও তার সহযোগী আরমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে র্যাব। তাদের আজ (বুধবার) রাতে অথবা বৃহস্পতিবার সকালে ডিবি থেকে র্যাব হেফাজতে নেয়া হবে।
এরপর দেশে-বিদেশে থাকা সম্পদসহ বিস্তারিত বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানা গেছে।
এদিকে ডিবি সূত্র জানিয়েছে, ক্যাসিনো, মাদক, অবৈধ মার্কেট-দোকান থেকে মাসে সম্রাটের একশ’ কোটি টাকার বেশি আদায় হতো। ভাগবাটোয়ারা শেষেও বিপুল টাকা থাকত তার। এসব বিষয়ে সম্রাটকে কিছুটা জিজ্ঞাসাবাদ করলেও তিনি মুখ খোলেননি। কোন দেশে কত টাকা রেখেছেন, এ বিষয়ে কোনো তথ্য দেননি সম্রাট। বারবার এক কথাই বলছেন, তার কাছে টাকা নেই।
ডিবি সূত্র জানায়, উপার্জিত অর্থের উৎস এবং তার সঙ্গে পর্দার আড়ালে থেকে যারা ভাগ নিতেন, সহযোগিতা করতেন তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সম্রাট একেক বার একেক তথ্য দেন। অনেক প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান। নীরবতা পালন করেন।
জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে উপাজির্ত অর্থ দলের প্রয়োজনে ব্যবহার করতেন বলে জানান সম্রাট। তিনি সুবিধাভোগী একাধিক সংসদ সদস্য, রাজনৈতিক নেতা ও সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পর্কে তথ্য দিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে বিদেশে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান ও অস্ত্র প্রসঙ্গে প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান।
/এসএস
