উইঘুর সংখ্যালঘুদের হত্যা করে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে নিচ্ছে চীন

প্রকাশিত: ৯:১৭ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৯

উইঘুরসহ অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ থেকে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে নিচ্ছে চীন। বিশ্বজুড়ে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বিশাল বাজার ও এর চাহিদা পূরণে প্রতি বছর রাষ্ট্রীয়ভাবে হাজার হাজার মানুষ হত্যা করছে। চোখ, হৃদযন্ত্র, কিডনি, ফুসফুসসহ মূল্যবান নানা অঙ্গ সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং সেগুলো অন্যান্য রোগীদের শরীরে লাগোনো হচ্ছে।

সংখ্যালঘু বিশেষ করে উইঘুর মুসলিমদের ওপর রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের অংশ হিসেবে ভয়াবহ ও মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে চীন সরকার। জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের তদন্তকারীদের এক রিপোর্টে বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনা হয়েছে। খবর আলজাজিরা, রয়টার্স ও সিডনি মর্নিং হেরাল্ডের।

গত কয়েক দশকে চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিশ্বজুড়ে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রতিস্থাপন হল, শল্যচিকিত্সার মাধ্যমে একটি স্বাস্থ্যবান অঙ্গকে অন্য কোনো রোগীর দেহে প্রতিস্থাপন করা যাতে সেই রোগীর দেহে অঙ্গটি সচল হয় এবং রোগীর জীবন বেঁচে যায়। যকৃত প্রতিস্থাপন, কিডনি প্রতিস্থাপন, হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন এবং ফুসফুস প্রতিস্থাপন এখন এসব অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া শেষ পর্যায়ের রোগীদের চিকিৎসা করার একমাত্র কার্যকর উপায়।

চীনের সংবাদ মাধ্যম সিজেআর জানিয়েছে, দৈহিক অঙ্গ উৎসের অভাব চীনে অঙ্গ প্রতিস্থাপন ক্ষেত্রে এক বড় সমস্যা। বর্তমানে জীবন বাঁচানোর জন্য চীনে প্রতিবছর ১৫ লাখ রোগীরঅঙ্গ প্রতিস্থাপনের দরকার হয়। কিন্তু এসব প্রতিস্থাপনের জন্য যত সংখ্যক অঙ্গের প্রয়োজন হয়, তার মাত্র ১ শতাংশের সরবরাহ পাওয়া যায়। চীন সরকার একদিকে স্বেচ্ছায় এবং বিনামূল্যেদান নীতিতে ধাপে ধাপে বিজ্ঞানসম্মত ও স্বচ্ছ অঙ্গ প্রদান ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা বলছে। অন্যদিকে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অভাব পূরণে অবৈধ উপায়ও অবলম্বন করছে।

চীনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ বহুদিনের। উইঘুর মুসলিমদের নির্যাতনের খবর বর্তমানে বিশ্বজুড়ে আলোচিত। বন্দিশিবিরে আটক করে তাদের ওপর চালানো নির্যাতনের খবর ওঠে এসেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। বিবিসির এক সামপ্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়, উইঘুর মুসলিম শিশুদের তাদের পরিবার থেকে আলাদা করে ফেলা হচ্ছে। শতশত শিবিরে বন্দি করে রাখা হয়েছে প্রাপ্তবয়স্কদের। বন্দির সংখ্যা ১০ থেকে ১২ লাখ। শিশুদের শেখানো হচ্ছে না ইসলামী বা তাদের ধর্মীয় সংস্কৃতি। শেকড় থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হচ্ছে পুরো একটা প্রজন্মকে। নারীদের জোরপূর্বক ইনজেকশনের মাধ্যমে বন্ধ্যা করে দেয়া হচ্ছে।

চীন সরকারের এই ইসলাম দমন কেবল উইঘুর মুসলিমদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। পুরো চীনজুড়েই এমন অভিযান চলছে। সরকারের সরাসরি নির্দেশনায় এসব অভিযান চালানো হচ্ছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের এসব ঘটনা তদন্তে ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক কোয়ালিশন টু অ্যান্ড ট্রান্সপ্ল্যান্ট অ্যাবিজ অফ চীন (ইটিএসি) ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। এ ট্রাইব্যুনাল জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর এমন নৃশংস নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ করেছে। ট্রাইব্যুনালের প্রধান স্যার জিওফ্রে নিস কিউসি এ অপরাধের প্রমাণ পেয়েছেন বলে জানান।

তিনি কাউন্সিলকে বলেন, ‘জুনের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চীনের বন্দী এবং ফালুন গং ও উইঘুর সংখ্যালঘুদের ওপর মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণ আমরা পেয়েছি। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে চীন সরকার সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর লোকদের হত্যা করে তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে আসছে।’

ট্রাইব্যুনালের চূড়ান্ত রায়ে বলা হয়, জীবিত অথবা মৃত ব্যক্তির কিডনি, লিভার, হার্ট, ফুসফুস, কর্নিয়া এবং ত্বকের চামড়া অপসারণ করা হয় বিক্রির জন্য। যার মধ্যে বন্দী ও সংখ্যালঘুদের সংখ্যাই বেশি। অঙ্গ প্রতিস্থাপন শিল্পের মাধ্যমে চীনা সরকার প্রতি বছর এক বিলিয়ন ডলারেরও বেশি আয় করে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ট্রাইব্যুনালের রায় প্রকাশের পর লন্ডনে চীনা দূতাবাসের এক মুখপাত্র এ প্রতিবেদনটিকে গুজব বলে আখ্যায়িত করেছেন।

জিআরএস/পাবলিক ভয়েস

মন্তব্য করুন