

ভূ-স্বর্গখ্যাত কাশ্মীর নিয়ে ভারতের হিন্দুত্ববাদী বিজেপিশাসিত মোদি সরকারের বিতর্কিত সাংবিধানিক অধিকার হরণ করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে কলকাতা, দিল্লি, হাওড়াসহ বিভিন্ন রাজ্যে বিক্ষোভ, মিছিল ও সমাবেশ করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। রাজনীতিসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল অঙ্গনের নেতারা এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে কঠোর বার্তা দিয়েছেন। খবর প্রথম আলোর।
গতকাল সোমবার ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-এর নেতৃত্বে অন্যায় ভাবে ভারতের সাংবিধানে থাকা কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া ৩৭০ ধারা বাতিল ও জম্মু কাশ্মীরকে আলাদা করে ফেলার কেন্দ্রীয় সরকারের বিতর্কিত ও অন্যায় সিদ্ধান্তের পর কলকাতা প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে কলকাতার ভাষা ও চেতনা সমিতি। সমাবেশের পর তারা বিক্ষোভ মিছিলও করেন।
সমাবেশে কলকাতা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র বিকাশ ভট্টাচার্য, ভাষা ও চেতনা সমিতির সম্পাদক ইমানুল হক, হকার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি শক্তিমান ঘোষ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ কেন্দ্রীয় সরকারের এ সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
বিকাশ ভট্টাচার্য বলেন, সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে বিজেপি সরকার ভারতের গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। অধ্যাপক ইমানুল হক বলেন, এভাবে গণতন্ত্রকে হত্যা করা যায় না। এটা বিজেপি সরকারের সংবিধানের ওপর ন্যক্কারজনক হামলা। এদিন কলকাতায় ফরোয়ার্ড ব্লকও প্রতিবাদ মিছিল করেছে। প্রতিবাদ মিছিল বের করেছে এসইউসিআই ও সিপিআই এমএল-লিবারেশনসহ অনেক দলই।
এছাড়াও ৩৭০ ধারা বাতিলের প্রতিবাদ করেছে সিপিএম ও কংগ্রেস। গতকাল বিকেলে সিপিএম ধর্মতলা থেকে একটি প্রতিবাদ মিছিল বের করে। মিছিলে যোগ দেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, পলিটব্যুরো সদস্য সাবেক সাংসদ মহম্মদ সেলিম প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
এদিন দিল্লিতেও বামফ্রন্ট প্রতিবাদ মিছিল বের করে। মিছিলে ছিলেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, প্রকাশ কারাত, বৃন্দা কারাত, হান্নান মোল্লা, ডি রাজা প্রমুখ। গতকাল কলকাতার মহাজাতি সদনে কমরেড মুজাফফর আহমেদের (কাকাবাবু) ১৩১তম জন্মদিনে আয়োজিত সমাবেশের মূল বিষয় হয়ে দাঁড়ায় জম্মু ও কাশ্মীর। সেখানে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, ‘কাশ্মীরে যা করল বিজেপি সরকার, যেকোনো দিন বাংলাকে ভেঙে দিতে তাদের কত সময় লাগবে?’
সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, ‘গণতন্ত্র, সংবিধান ও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে রক্ষা করতে আমাদের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। এটা সংবিধান ও গণতন্ত্রের ওপর হামলা। এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ বেআইনি। রাজনৈতিক স্বার্থে বিজেপি এই পদক্ষেপ নিয়েছে। সংসদে নতুন বিল আনতে গেলে দুদিন আগে সবার কাছে বিলের প্রতিলিপি দিতে হয়। কিন্তু এই সরকার সেটা দেয়নি। এতে বিজেপি সরকার কাশ্মীর পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলল।’
সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম রাজনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করতে। কিন্তু মোদি সরকারের হঠকারী সিদ্ধান্তে কাশ্মীর আরও অশান্ত হলো।’ বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেছেন, ‘এই ঘটনা ভারতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ওপর ভয়ংকর আক্রমণ। এর কারণে দেশের ঐক্য ও নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে পড়বে।’ কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি সোমেন মিত্র বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ধ্বংস করে মোদি সরকার নির্বাচিত রাজ্য সরকারগুলোর ক্ষমতা দখল করতে চাইছে। তাঁর প্রশ্ন, ‘সাংবিধানিক ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে আগামী দিনে পশ্চিমবঙ্গের অখণ্ডতার ওপরে মোদি সরকার কি আঘাত হানতে চলেছে?’
অপরদিকে সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের ঘোষণার পর গতকাল বিকেলে দক্ষিণ কলকাতার হাজরায় বিজেপি বিজয় সমাবেশ করে। সেখানে বিজেপির কর্মী–সমর্থকেরা আবির মেখে আনন্দ-উৎসব করে। মিষ্টি বিতরণ করে।
তবে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের বামেরা ঘোষণা দিয়েছেন, ৭ থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত তারা রাজ্যব্যাপী প্রতিবাদ সমাবেশ ও মিছিল করবে। দাবি তুলবে ভারতের অখণ্ডতা রক্ষার।