

আজ ১৯ জুলাই (শুক্রবার) বাংলা সাহিত্যের বরপুত্র হুমায়ুন আহমেদ এর ৭ম মৃত্যৃবার্ষিকী। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই নিউ ইয়র্কের বেলেভ্যু হাসপাতালে চিকিসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।তার জন্ম ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্গত নেত্রকোণা মহুকুমার মোহনগঞ্জে তার মাতামহের বাড়িতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা শহীদ ফয়জুর রহমান আহমদ এবং মা আয়েশা ফয়েজ।
তিনি ছিলেন একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার, চিত্রনাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। তিনি বিংশ শতাব্দীর জনপ্রিয় বাঙালি কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম। তাকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক বলে গণ্য করা হয়। বাংলা কথাসাহিত্যে তিনি সংলাপপ্রধান নতুন শৈলীর জনক। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসাবেও তিনি সমাদৃত। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা তিন শতাধিক। তার বেশ কিছু গ্রন্থ পৃথিবীর নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বেশ কিছু গ্রন্থ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভুক্ত।
১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী তাকে আটক করে এবং নির্যাতনের পর হত্যার জন্য গুলি চালায়। তিনি অলৌকিকভাবে বেঁচে যান। স্বাধীন বাংলাদেশে হুমায়াুন আহমেদ খুব অল্প সময়ে নিজেকে জনপ্রিয় লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তার রচণায় সৃ্ষ্ট মিসির আলী ও হিমু চরিত্র তরুণ-তরুণিদের ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। তার উল্লেখ্য যোগ্য রচনার মধ্যে রয়েছে মধ্যাহ্ন, জোছনা ও জননীর গল্প, শঙ্খনীল কারাগার, নন্দিত নরকে, দেবী, মিসির আলী, ময়ূরাক্ষী, দারুচিনি দ্বীপ, দরজার ওপাশে, হিমু, পারাপার, শ্রাবণ মেঘের দিন ইত্যদি।
হুমায়ূন আহমেদ ১৯৭৬ সালে গুলতেকিন খানকে বিয়ে করেন। গুলতেকিন প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁর নাতনী। এই দম্পতির তিন মেয়ে এবং এক ছেলে। বড় মেয়ে নোভা আহমেদ, মেজো মেয়ে শীলা আহমেদ এবং ছোট মেয়ে বিপাশা আহমেদ। তার বড় ছেলের নাম নুহাশ আহমেদ। বাবার মত নুহাশও পরিচালনায় মনোনিবেশ করেন। রাশেদ হুমায়ূন নামে তার এক ছেলে অল্প বয়সেই মারা যান।
১৯৯০ সালের মধ্যভাগ থেকে তার কন্যা শীলার সমবয়সী এবং তার বেশ কিছু নাটক-চলচ্চিত্রে অভিনয় করা অভিনেত্রী শাওনের সাথে হুমায়ূন আহমেদের ঘনিষ্ঠতা জন্মে। এর ফলে সৃষ্ট পারিবারিক অশান্তির অবসানকল্পে ২০০৩ সালে গুলতেকিনের সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদ হয় এবং ঐ বছরই শাওনকে বিয়ে করেন। শাওনের ঘরে হুমায়ুনের তিন ছেলে-মেয়ে জন্মগ্রহণ করে। প্রথম ভূমিষ্ঠ কন্যাটি মারা যায়। এ কন্যার নাম তিনি রাখতে চেয়েছিলেন লীলাবতী। ছেলেদের নাম নিষাদ ও নিনিত হুমায়ূন।
প্রথম উপন্যাস নন্দিত নরকে ১৯৭২ সালে প্রকাশিত হয়। বাংলা সাহিত্যের উপন্যাস শাখায় অসামান্য অবদানের জন্য তিনি ১৯৮১ সালে বাংলা একাডেমি প্রদত্ত বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে তার অবদানের জন্য ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে।
১৯৯৪-এ তার নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভিত্তিক আগুনের পরশমণি মুক্তি লাভ করে। চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার সহ আটটি পুরস্কার লাভ করে। তার নির্মিত অন্যান্য সমাদৃত চলচ্চিত্রগুলো হলো ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ (১৯৯৯), ‘দুই দুয়ারী’ (২০০০), ‘শ্যামল ছায়া’ (২০০৪), ‘নয় নম্বর বিপদ সংকেত’ (২০০৭), ‘আমার আছে জল’ (২০০৮) ও ‘ঘেটু পুত্র কমলা’ (২০১২)। ‘শ্যামল ছায়া’ ও ‘ঘেটু পুত্র কমলা’ চলচ্চিত্র দুটি বাংলাদেশ থেকে বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে অস্কারের জন্য দাখিল করা হয়েছিল। এছাড়া ঘেটু পুত্র কমলা চলচ্চিত্র পরিচালনার জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পরিচালনা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
তার লেখা উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র। এর মধ্যে ২০০৬ সালে মোরশেদুল ইসলাম পরিচালিত দূরত্ব, বেলাল আহমেদ পরিচালিত নন্দিত নরকে এবং আবু সাইয়ীদ পরিচালিত ‘নিরন্তর’। ২০০৭-এ শাহ আলম কিরণ পরিচালিত ‘সাজঘর’ এবং তৌকির আহমেদ নির্মাণ করেন বহুল আলোচিত চলচ্চিত্র ‘দারুচিনি দ্বীপ’।
/এসএস