তিস্তার পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপরে

প্রকাশিত: ১০:৫৩ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১২, ২০১৯

উজান থেকে ধেয়ে আসছে পানির স্রোত। গত চারদিনের ভারি বৃষ্টি উজানের পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তিস্তার পানি প্রবাহ বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে লালমনিরহাটে প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৬২ সেন্টিমিটার। যা স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার। বিপদসীমার দুই সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। পানি বেড়ে বিকাল ৩টায়  তিস্তা ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ (রেকর্ড করা হয়)  বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তিস্তার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নদী তীরবর্তী নীলফামারী জেলার ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের অন্তত ১৫টি চরগ্রামের পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড নীলফামারীর ডালিয়া ডিভিশনের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্র জানায়, উজানে বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর থেকে তিস্তা নদীর পানি বাড়তে থাকে। যা সকাল ৬টায় তিস্তা ব্যারাজের নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীরা দুই সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রাবহিত হয়। সকাল ৯টায় দুই সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমা বরাবর প্রবাহিত হলেও বেলা ১২টা থেকে পানি বেড়ে বিকেল ৩টা থেকে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

তিস্তার পানি বাড়ায় ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশাচাঁপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী, গয়াবাড়ি ও জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা ইউনিয়নের ১৫টি চরগ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে এসব গ্রামের পাঁচ সহস্রাধিক পরিবার হাঁটু সমান পানিতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানেরা।

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খাঁন বলেন, বুধবার দিনগত রাত থেকে তিস্তা নদীর পানি বাড়তে শুরু করে। যা গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ইউনিয়নের ঝাড়সিংহেরশ্বর ও পূর্ব ছাতনাই মৌজার প্রায় ৯শ’ পরিবারের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করে। দুপুরের দিকে এসব পরিবারগুলোর বাড়ি ঘরে হাঁটু সমান পানি হয়ে পড়ে।

উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী পনিবন্দি মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে আসতে বলা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

একই উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের দুইটি মৌজা চরখড়িবাড়ি ও পূর্বখড়িবাড়ি মৌজা প্লাবিত হয়ে দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানি যেভাবে বাড়ছে তাতে যেকোনো সময় চরখড়িবাড়ি মৌজায় স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত দুই কিলোমিটার বালুর বাঁধটি ভেঙে যেতে পারে। যেকোনো সময় বাঁধটি বিধ্বস্ত হয়ে অনেক মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

খালিশা চাপনী ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, ইউনিয়নের ছোটখাতা ও বাইশপুকুর গ্রামের প্রায় সাড়ে চার’শ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড নীলফামারীর ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই নদীর পানি বাড়তে থাকে। বেলা ১২টায় বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। ৩টায় ১৩ সেন্টিমিটার বেড়ে বর্তমানে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

তিনি জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তিস্তা ব্যারেজের সব কয়টি (৪৪টি) জলকপাট খুলে দিয়ে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এছাড়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের দুর্বল স্থানগুলো শক্তিশালী করণে জরুরি রক্ষণা-বেক্ষণ কাজ করা হচ্ছে।

জিআরএস/পাবলিক ভয়েস

মন্তব্য করুন