মায়ের মামলায় সন্তান কারাগারে, সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি মায়ের

প্রকাশিত: ৬:৫৯ অপরাহ্ণ, জুলাই ৫, ২০১৯

চট্টগ্রাম জেলার পাঁচলাইশ থানাধীন আল মাদানী রোড শোলকবহর এর মৃত সিরাজুল হকের স্ত্রী খালেদা বেগম। ৭০ বছরের বৃদ্ধ মহিলা। তারই ঔরসজাত সন্তান সাইফুল হক। বর্তমানে মা ও ছেলে আলাদা ভাবে ভিন্ন জায়গায় বসবাস করেন। পুত্র সাইফুল হক ও তার স্ত্রী নাজমা আক্তার এবং আরেক আসামি মোঃ আলমগীরের বিরুদ্ধে মারধর শ্লীলতাহানি ও গলা টিপে হত্যা করবে বলে হুমকি দেওয়ার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নং ৩ আমলী আদালত, পাঁচলাইশ জোনে ফৌজদারি অভিযোগে মামলা করেন খালেদা বেগম।

মামলার বিচারে বিজ্ঞ আদালত ২৭ জুন ১নং আসামি সাইফুল হককে গ্রেফতারের আদেশ জারি করেন এবং ৩ জুলাই রাতে বাসা থেকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। গতকাল (৪ জুলাই) বৃহস্পতিবার আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে জেলে পাঠিয়ে দেন। আদালত সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৭ জুলাই মামলার শুনানি রয়েছে।

নথি সূত্রে জানা গেছে, বাদী খালেদা বেগমের স্বামী ২০১১ সালে দুই পুত্র এক কন্যা সন্তান সহ স্ত্রীকে ওয়ারিশ রেখে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর আগে চট্টগ্রাম নগরের রাজা পুকুর লেইনস্থ আধুনিক প্রকাশনী বুকস দুইটি দোকান মাতৃসদন হাসপাতালের গলির মুখে প্রায়ই ০.১৫৭শতাংশ জায়গায় লাইব্রেরী নামে চতুর্থ তলা বিশিষ্ট এবং খালেদা বেগম এর নামে শোলক বহর মৌজা ৩ হাজার বর্গফুট জায়গায় ২ ইউনিট বিশিষ্ট দোতলা পাকা ইমারত নির্মাণ করেন তা ছাড়াও অন্যান্য স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রেখে যান।

নথি সূত্রে আরও জানা যায়, খালেদা বেগমের স্বামী সোনালী ব্যাংক সিরাজদৌল্লা শাখা (৪৫৯/এ)য় ৪০ লক্ষ টাকা আমানত হিসেবে রেখে যান। উক্ত টাকা খালেদা বেগমের পুত্র ১নং আসামি সাইফুল হক জাল জালিয়াতির মাধ্যমে মায়ের অগোচরে সমস্ত টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করে। শুধু তাই নয়, ছেলে এবং ছেলের বউ মিলে খালেদা বেগম কে প্রলুব্ধ করে তার নামে থাকা দোতলা ভবন ব্যাংক কর্তৃক লোন স্যাংশন করে বহুতল ভবন নির্মাণ করার আশ্বস্ত করে খালেদা বেগম হতে হেবা দলিল হাসিল করেন। বিষয়টি বুঝতে পেরে খালেদা বেগম হেবা দলিল বাতিল করার জন্য মাননীয় বিজ্ঞ তৃতীয় যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালত, চট্টগ্রাম ৩৭৮/২০১৩ মামলা দায়ের করেন যাহা বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে।

নথি সূত্রে আরও জানা যায়, আসামীগণ পরস্পর যোগসাজশে খালেদা বেগম এর নামে শোলকবহর মৌজা স্থিত দোতলা বিল্ডিংটি ১নং আসামি সাইফুল হক কর্তৃক সৃজিত হেবা দলিল মূলে জনৈক নাসিম চৌধুরীর নিকট বিক্রয়ের নিমিত্তে ১২জুন ২০১৯ ইংরেজি তারিখ দৈনিক পূর্বকোণ পত্রিকায় আইনগত বিজ্ঞপ্তি প্রচার করলে তা খালেদা বেগমের দৃষ্টিগোচর হলে তিনি ১৮জুন ২০১৯ তারিখে দৈনিক পূর্বকোণ পত্রিকায় উক্ত আইনগত বিজ্ঞপ্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ লিপি প্রচার করলে আসামিরা ক্ষেপে যায়।

এরই প্রেক্ষিতে সকল আসামি (১নং সাইফুল হক, ২নং নাজমা আক্তার, ৩নং মো:আলমগীর) মিলে ২৩ জুন ২০১৯ ইংরেজি তারিখ বিকেল চারটার সময় খালেদা বেগমের ঘরে ঢুকে তাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং ১২ জুন বিজ্ঞপ্তির বিরুদ্ধে কেন প্রতিবাদ দিয়েছ বলে বৃদ্ধা মা খালেদা বেগম কে মারধর করার চেষ্টা করে।

এ সময় খালেদা বেগমের অপর ছেলে মুজিবুল হক প্রতিবাদ করায় আসামি সাইফুল হক ও মুহাম্মদ আলমগীর মিলে তাকে কিল-ঘুষি মারে এবং ওড়না দিয়ে পেঁচিয়ে বেঁধে রাখে। তাছাড়া আসামী সাইফুল হক মায়ের চুলের মুঠি ধরে টান মেরে মেঝেতে ফেলে দিয়ে উপর্যুপরি কিল ঘুষি মারতে থাকে। পাশাপাশি ছেলের বউ নাজমা আক্তার তার শাশুড়িকে টানাহেঁচড়া করে শ্লীলতাহানি করে।

শুধু তাই নয় অপর আসামি মোঃ আলমগীর ঘরে থাকা জগ গ্লাস ভাঙচুর করে এক ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। এরই মাঝে পুত্র আসামী সাইফুল হক ১০০ টাকা দামের তিনটা নন-জুডিশিয়াল অলিখিত স্ট্যাম্পে মাকে স্বাক্ষর দেওয়ার জন্য জোর জবরদস্তি করলে মা স্বাক্ষর দেওয়ার জন্য অনীহা প্রকাশ করায় ছেলে সাইফুল হক মাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করে, এই অবস্থা চলাকালে খালেদা বেগম ও তার ছেলে মুজিবুল হকের শৌর চিৎকারে আশেপাশের লোকজন খালেদা বেগম ও তার ছেলে মুজিবুল হককে উদ্ধার করে।

আসামিরা চলে যাওয়ার সময় খালেদা বেগম কে গলা টিপে হত্যা করবে বলে হুমকি দিয়ে চলে যায়। তৎমুহুর্তে খালেদা বেগম এর সারা শরীর ও গলায় প্রচন্ড যন্ত্রনায় ছটফট করলে খালেদা বেগম কে মামলার সাক্ষীগণ চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যায় ও চিকিৎসা নেয়। এই বিষয়ে স্থানীয় থানায় মামলা করতে গেলে থানা কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞ আদালতে মামলা দায়ের করার পরামর্শ দেন তাই মামলা করতে একটু বিলম্ব হয় বলে নথি সূত্রে জানা গেছে।

এই বিষয়ে খালেদা বেগম প্রতিবেদককে জানান, আমার ওপর এই অত্যাচার নিপীড়ন ও হত্যার হুমকি দেওয়ার সর্বোচ্চ শাস্তি চাই এবং আমার জীবদ্দশায় তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেখে যেতে চাই।

জিআরএস/পাবলিক ভয়েস

মন্তব্য করুন