হিলি দিয়ে দেশ ত্যাগের চেষ্টা নয়ন বন্ডের

প্রকাশিত: ৯:২৬ পূর্বাহ্ণ, জুন ৩০, ২০১৯
নয়ন বন্ড

বরগুনায় সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে কুপিয়ে চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যার ৪ দিনেও গ্রেফতার হয়নি প্রধান দুই খুনি নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজী। পুলিশ ৫ জনকে গ্রেফতার করলেও তাদের মধ্যে এজাহারনামীয় আসামি মাত্র তিনজন। তবে গতকাল শনিবার বরগুনা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বলেছেন, মামলার সব আসামিকে ২ দিনের মধ্যেই গ্রেফতার করা হবে।

এদিকে একটি সূত্র জানায়, প্রধান আসামি নয়ন বন্ড দিনাজপুরের হিলি সীমান্ত দিয়ে দেশ ত্যাগের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সীমান্তে রেড অ্যালার্ট থাকায় সে পালাতে ব্যর্থ হয়। তবে পুলিশ বলছে, তাদের কাছে এ ব্যাপারে কোনো তথ্য নেই। অপর এক সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের সোর্স হিসেবেও কাজ করত এ নয়ন বন্ড।

ওই আত্মীয় আরও জানান, ২৬ জুন হত্যার ঘটনার পর নয়ন বন্ড পাথরঘাটার সুন্দরবন এলাকা হয়ে দেশ ত্যাগ করতে পারে ভেবে পুলিশ যখন পাথরঘাটা এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে নয়ন তখন পুরাকাটা ফেরি পার হয়ে আমতলী গলাচিপা হয়ে পৌঁছে গেছে দশমিনায়। সেখানে বুধবার রাত কাটায় সে। এরপর নৌ ও সড়ক পথে ভেঙে ভেঙে চলে যায় উত্তরবঙ্গের জেলা শহর দিনাজপুর।

গত বৃহস্পতিবার রাত এবং শুক্রবার দিনের প্রথমভাগ পর্যন্ত চেষ্টা চালায় হিলি বর্ডারের চোরাপথ ধরে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার। কিন্তু এরই মধ্যে সীমান্তে রেড অ্যালার্ট জারি হওয়ায় পালাতে ব্যর্থ হয় সে। আত্মীয়পরিজনের সঙ্গে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ ছিল নয়ন বন্ডের। নিরাপত্তার স্বার্থে এরপর সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় সে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নয়ন বন্ডের বাড়ি যে পটুয়াখালী জেলার দশমিনা থানায় সে ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানান বরগুনা সদর থানার ওসি আবীর হাসান মাহমুদ। দিনাজপুরের হিলি সীমান্ত দিয়ে তার দেশ ত্যাগের চেষ্টার ব্যাপারেও তার কাছে কোনো তথ্য নেই বলে জানান তিনি।

স্থানীয়রা বলছেন, পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করত নয়ন বন্ড। ধানসিঁড়ি রোড, কেজি স্কুল রোড এবং ডিকেপি রোডের লোকজনও জানতেন এটা। যখন-তখন নয়নের ফোন কলে চলে আসত পুলিশের টহল গাড়ি। পুলিশের মাঠপর্যায়ের কতিপয় কর্মকর্তার সঙ্গেও ছিল তার দারুণ সখ্য। ডিকেপি রোডের এক বাসিন্দা বলেন, ‘সুনাম দেবনাথের (বরগুনা সদর আসনের এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথের ছেলে) লোক হিসেবে নয়ন বন্ডের পরিচিতির কারণে এমনিতেই সবাই তাকে সমঝে চলত। তার কোনো অপরাধে পুলিশকে খবর দিলেও খুব একটা লাভ হতো না।’

সোর্স হিসেবে কাজ করা প্রসঙ্গে বরগুনা কলেজ এবং সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা বলেন, ‘পাইকারি মাদক বিক্রেতা হিসেবে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে ইয়াবা, হেরোইন, ফেনসিডিল বিক্রি করত নয়ন বন্ড। যাদের কাছে বিক্রি করত তাদেরই দু-একজনকে মাঝে-মধ্যে ধরিয়ে দিত সে। যার কাছে বিক্রি করত তার ব্যাপারে থানা পুলিশে ফোন দিয়ে তথ্য জানাত। এরপর মাঠপর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তারা ওই খুচরা ব্যবসায়ী অথবা সেবনকারীকে ধরে হয় টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দিত নয়তো মামলা করে চালান দিত আদালতে। এমন অনেক ঘটনা আছে যে, নয়ন বন্ড থানা পুলিশের কথা বলে ভয় দেখাত বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজনকে।’

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করা হলে বরগুনা সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবীর হোসেন মাহমুদ বলেন, ‘আমি এ থানায় নতুন যোগদান করেছি। নয়ন বন্ড পুলিশের সোর্স ছিল এমন কোনো কিছু আমার জানা নেই। আমি তাকে শুধু একজন সন্ত্রাসী হিসেবেই চিনি।’এদিকে শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, মামলার সব আসামিকে ২ দিনের মধ্যে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।

রিফাত হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হল- চন্দন, হাসান, রকিবুল ইসলাম রিফাত, নাজমুল হাসান ও সায়মন। তাদের মধ্যে ৩ জনকে শুক্রবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। রিফাত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১২ জনকে আসামি করে মামলা করেন তার বাবা দুলাল শরীফ। মামলায় ১২ জনের নাম উল্লেখ ছাড়াও আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে। সর্বশেষ শনিবার মামলার এজাহারভুক্ত (১১ নম্বর) আসামি রকিবুল ইসলাম রিফাতকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

জিআরএস/পাবলিক ভয়েস

মন্তব্য করুন