চলে গেল কৃতিকা, রেখে গেল তিন পাতার করুণ সুইসাইড নোট

প্রকাশিত: ৮:০০ অপরাহ্ণ, জুন ২২, ২০১৯

ইসমাঈল আযহার

জিডি বিড়লার দশম শ্রেণির কৃতী ছাত্রী কৃতিকা পাল চলে গেল পাহাড় সমান কষ্ট নিয়ে। কিন্তু রেখে গেল তিন পাতার সুইসাইড নোট।

ভারতের কলকাতার একটি স্কুলের টয়লেটে আত্মহত্যা চেষ্টা করে এক ছাত্রী।  পরে তকে উদ্ধার করে আশঙ্কাজনক অবস্থায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে, চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।

মুখে প্লাস্টিক ঢাকা, হাতের শিরা কাটা, রক্তে ভেসে যাচ্ছে মেঝে। পাশে পড়ে রয়েছে সার্পনারের ব্লেড, তিনপাতার সুইসাইড নোট আর রক্তমাখা পেন। নাহ! এ কোনও সিনেমার প্লট নয়, বাস্তব ঘটনা।

ঘটনার সঙ্গে হুবহু মিল রয়েছে সম্প্রতি প্রকাশিত একটি ওয়েব সিরিজের। শুক্রবার জিডি বিড়লা স্কুলের শৌচাগার থেকে এভাবেই উদ্ধার হয় দশম শ্রেণির ছাত্রী কৃত্তিকার মৃতদেহ।

শুক্রবার ক্লাস চলাকালীন ১:৪৫ নাগাদ শৌচাগারে গিয়েছিল ওই ছাত্রী। প্রায় আধঘণ্টা ছাত্রীকে দেখতে না পাওয়ায় সন্দেহ হয় শিক্ষিকাদের।

এরপর স্কুলের শৌচাগার থেকে উদ্ধার হয় তার মৃত দেহ। প্লাস্টিকে ঢাকা ছিল মুখ। দেহের পাশেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল ব্লেড, রক্তে মাখা পেন, তিন পাতার সুইসাইড নোট। রক্তে ভেসে যাচ্ছিল শৌচাগারের মেঝে।

স্কুলের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে জানা গিয়েছে, ঘটনার কিছুক্ষণ আগেও সহপাঠীদের সঙ্গে হেসেই কথা বলছিল সে, স্বাভাবিক ছিল তার আচরণ।

এরপর পঞ্চম পিরিয়ড শেষ হতেই সে তার সহপাঠীদের বলে তার মাথা যন্ত্রণা করছে, তাই সে সিক রুমে যাচ্ছে। কিন্তু ১:২৯-এ সিক রুমে যাওয়ার বদলে সে সোজা বাথরুমে চলে যায়।

স্কুলের টয়লেটে মুখে প্লাস্টিক জড়িয়ে, বাঁ হাতের শিরা কাটা অবস্থায় পাওয়া যায় তাকে। তার দেহের পাশে তিন পাতার একটি সুইসাইড নোট পাওয়া যায়।

আর সেই সুইসাইড নোটের ছত্রে ছত্রে মানসিক যন্ত্রণা, বাবা-মায়ের প্রতি অভিমান, একাকীত্ব, দূরত্ব এবং সফল হওয়ার চাপ লিখে যায়।

প্রকৃতির মতো সুন্দর জীবনটা তালগোল পাকানো জীবন হয়ে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত মৃত্যু হয়ে ওঠেছিল তার মুক্তির পথ।

মৃত্যু উপত্যকায় হারিয়ে যাওয়ার আগে কৃতিকা পাল লিখে গিয়েছে, রূঢ় বাস্তবতার আখ্যান। যে আখ্যান বেদনাদায়ক এবং স্বপ্নের অপমৃত্যুর।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, চিঠির শুরুতেই বাবা-মার সঙ্গে তার দূরত্বের কথা লিখেছে ওই ছাত্রী।

কৃতিকা আর পারছিল না। এর আগেও মেট্রো স্টেশনে গিয়েছিল আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে। কিন্তু পারেনি।

কৃতিকা লিখেছে, এই চিঠি যেন সংবাদমাধ্যমের হাতে না যায়। তাকে যেন সুন্দর শেষ বিদায় দেওয়া হয়।

তার মৃত্যু নিয়ে মাতামাতি হোক, সে চায় না। বিদায় দেওয়া হোক তাকে। তবে চিঠিটির উপসংহার বোধহয় কয়েকটা শব্দেই বর্ণনা করে গিয়েছে।

কৃতিকা লিখেছে ,‘যদি এটা মনে করতে কষ্ট হয় তোমাদের, আমি আত্মহত্যা করেছি। তাহলে নিজেদের বুঝিও আমাকে খুন করা হয়েছে। কে বলবে আমি খুন হইনি?’

সে আরও লিখেছে, ‘আমাকে আর ঝাঁকিয়ে লাভ নেই, আমি আর উঠব না।’, ‘অক্সিজেন নিতে পারছি না, আমার ভাল লাগছে।’ ‘আমার মৃত্যুর জন্যে কেউ দায়ী নয়’। পুলিশ যেন বাবা-মাকে বিরক্ত না করে তাও লিখেছে সে। আবার তাদেরই উদ্দেশ্যে লেখা রয়েছে, ‘আমি যখন থাকব না বুঝতে পারবে…’।

কৃতিকা এও লিখেছে যে, ‘পুলিশেরও জানার অধিকার নেই যে আমি কেন এমন চরম সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

কৃতিকার আত্মহত্যার কারণ নিয়ে এখনও দ্বন্ধে পুলিশ। মানসিক চাপে অবসাদে ভুগছিল কৃতিকা, সুইসাইড নোটে তা স্পষ্ট। কিন্তু কী কারণে মানসিক চাপ? পারিবারিক না ক্যারিয়ারের কারণে?

আইএ/পাবলিক ভয়েস

মন্তব্য করুন