

শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর অন্যায়ভাবে দেশটির মুসলিম নারীদের জন্য বোরকা ও হিজাবসহ মুখ ঢেকে রাখা যায় এমন সব পোশাক নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
শ্রীলঙ্কার এমন সিদ্ধান্ত বিশ্বব্যাপী সমালোচিত হলেও এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে গোটা বিশ্বে বোরকা নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছেন ইসলামবিরোধী লেখালেখি করে বাংলাদেশ থেকে বিতারিত হওয়া তসলিমা নাসরিন। দেশ থেকে বিতারিত হওয়ার সময় জনরোষ থেকে বাঁচতে বোরকা পড়েই বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন তসলিমা এমন কথাও প্রচলিত রয়েছে।
ভারতে নির্বাসিত তসলিমা নাসরিন শ্রীলঙ্কায় বোরকা নিষিদ্ধ হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে একটি পোস্ট করেন। সেখানে তিনি পর্দার বিরোধিতা করে বোরকা নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেন।
বিষয়টি নিয়ে এর আগেও একাধিকবার তিনি বলেছেন, বোরকা নিষিদ্ধ করা উচিত। এমন দাবি জানিয়ে বারবার তিনি সমালোচনার মুখে পড়েছেন। তবে শ্রীলঙ্কায় বোরকা নিষিদ্ধের ঘটনার পর এ নিয়ে নতুন করে মুখ খোলার সুযোগ পেয়েছেন তিনি।
ভারতে নির্বাসিত এই নারী এর আগেও বিভিন্ন ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি পর্যায়ের সমালোচনা করে কয়েকবার মার খেয়েছেন। ভারতের কয়েকটি অনুষ্ঠানে হিন্দুরাও তাকে চেয়ার দিয়ে পেটানোর ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছিলো। তাছাড়া অ্যাসাইলাম পেতে ইসলামবিরোধী লেখালেখি করেও তিনি বেশ সমালোচিত সর্বমহলে।
ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘শ্রীলঙ্কা বোরখা নিষিদ্ধ করেছে জনমানুষের নিরাপত্তার জন্য। বোরখা পরে আত্মঘাতী বোমা হেঁটে বেড়াচ্ছে আর আমরা তাকে নিরীহ মেয়েমানুষ ভেবে তার আশেপাশে নিরাপদ বোধ করছি, এই বোকামোর দিন শেষ হয়েছে।’
তিনি অতিরঞ্জিত করে আরও লিখেছেন, ‘বোরখা কয়েক ধরনের মানুষ পরে। প্রথমত- দোযখে যাওয়ার ভয়ে ধর্ম দ্বারা মগজধোলাই হওয়া মেয়ে, দ্বিতীয়ত- আত্মীয় স্বজনের চাপে বাধ্য হওয়া মেয়ে, তৃতীয়ত- আত্মঘাতী বোমা, চতুর্থত- জেল পালানো দাগি আসামি, চতুর্থত- অপরাধী, যার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি হয়েছে পঞ্চমত- চোর, ষষ্ঠ- ডাকাত, সপ্তমত- খুনী। বোরখা পৃথিবীর সব জায়গায় নিষিদ্ধ হওয়া উচিত।’
প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহে ইস্টার সানডের দিন শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোয় ধারাবাহিক বিস্ফোরণ ও আড়াই শতাধিক মানুষের প্রাণহানির নেপথ্যে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের মদদ থাকার তথ্য উঠে আসার পর অন্যায়ভাবে সেখানকার মুসলিম জাতিগোষ্ঠি নিপিড়নের শিকার হচ্ছে যদিও আইএস কখনও ইসলাম ধর্মীর্ কোনো সংগঠন ছিলো না এবং বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের ধর্মীয় ব্যাক্তিত্বরা আইএসকে ইসলাম নয় বরং ইসরাইলের তৈরি করা দল হিসেবেই দেখে থাকে এবং তাদের কর্মকান্ডে মুসলমানদের ওপর নিপিড়নকেও একটি নীল নকশার অংশ হিসেবে দেখা হয়।
সাধারণত মুসলিম নারীদের অনেকে ধর্মীয় রীতি মেনে বোরকা পড়েন। কিন্তু শ্রীলঙ্কা প্রশাসন মনে করছে, মুখ ঢেকে রাখার কারণে অপরাধীকে চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে পড়ছে৷ যা এই সন্ত্রাস পরবর্তী তদন্তের জন্য বেশ কঠিন একটা ব্যাপার। তাই গত সোমবার থেকে দেশটির সরকার বোরকা নিষিদ্ধ করেছে। লঙ্কান প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা বিবৃতি দিয়ে জানান, ‘জাতীয় সুরক্ষার স্বার্থে বোরকার ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ মুখ ঢেকে প্রশাসনের পক্ষে অপরাধীকে শনাক্ত করার কাজটি কঠিন করে দেবেন না।’ সৌদি আরবসহ কয়েকটি দেশ শ্রীলংকার এই দাবি সাময়িক সময়ের জন্য মেনে নিলেও এটি ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বলেই মনে করছে অনেকে।