ঝড় বৃষ্টির গল্প

প্রকাশিত: ১২:২৮ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৮, ২০১৯

আব্দুল্লাহ আফফান

এখন সকাল গড়িয়ে দুপুর। বৃষ্টি থেমেছে কিন্তু বাতাস বইছে। পুরুষরা নিরাপদ আশ্রয় ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছে। চারপাশে তাকিয়ে একেকজন নানা ধরনের মন্তব্য করছে। একজন বলে উঠল, ঝড়ে সবকিছু উলডাইয়া লাইছে, এক্কেবারে চিননই যায় না।তার কথায় সাই দিয়ে আরেকজন বলল, হ রে ভাই, দেখছোসনি কারবার। গাছ-পালা ভাইঙ্গা হইছে কী! একজন কৃষক বলল, আরে মিয়া তোমরা আছো গাছ লইয়া ক্ষেতের কি অবস্থা আল্লায় জানে।

কথা বলতে বলতে তারা ফসলি জমির দিকে গেলো। ইতোমধ্যে শিশুরা হাড়ি নিয়ে নেমে পড়েছে আম কুড়োনোতে। পাড়ার কয়েকজন মেয়ে এলো তাহেরার বাড়িতে।

তাহেরা তার মেয়েকে নিয়ে আম কুড়োচ্ছে। মেয়েদের দেখে বলল, ঘরের থেইক্যা বালতি আইন্যা আমগুলা ল তো বইন। কুড়াতে কুড়াতে একটি মেয়ে বলে উঠল, বুবু সব আমই তো পইড়া গেছে।

-হ রে বইন। এত বছর পর আম আইল, ঝড়ে সবডি আম পইড়া গেছে। তয় সবই আল্লার ইচ্ছা বুঝলি। আল্লাহ একেক সময় একেক জিনিস দিয়া মানুষরে পরীক্ষা লয়। তহন সবুর করতে হয়। আল্লা যা দেয় তাই লইয়া খুশি থাকতে হয়।

মেয়েরা আম কুড়োচ্ছে। নিজেদের মধ্যে কথা বলছে। কখনও ইশারায়, কখনও মুখে। একজনের কথা শুনে অন্যজন হাসছে মুখ টিপে। উঠতি বয়সি মেয়েরা খুব বেশি আবেগি হয়। এরা সামান্য কৌতুকে মুখ টিপে হাসে। আবার কখনও সামান্য কথায় রেগে লাল হয়, আড়ালে চোখের জল ফেলে।

আম কুড়োনো শেষ। সবাই আমের চারপাশে বসে আছে। তাহেরা বেগম আমগুলো ভাগ করে ঝুড়িতে রাখছেন। কে কাকে আম দিয়ে আসবে সেই ফরমায়েশ দিচ্ছেন। মেয়েরা বেশ আনন্দে কাজ করছে। কাউকে কিছু দেওয়ার মধ্যে একধরনের আনন্দ আছে। প্রশান্তি অনুভব হয়। হোক সেটা অন্যের পক্ষ থেকে অথবা নিজের।

তাহেরা এক ঝুড়ি আম রেখে সব আম বিলি করে দিয়েছে। মেয়েরা বসে আছে, আমের আচার বানানোর জন্য। কিন্তু কেউ মুখে কিছু বলছে না। তাহেরা মেয়েগুলোকে জিজ্ঞেস করলো, আমের ভর্তা বানাবি না?

মেয়েদের একজন বলে উঠল, হ বুবু।

-যা দা লইয়া আয়। পাকের ঘরে আছে দেখ। মেয়েটা দা এনে আম কুটতে বসলো। একজন গল্প বলছে। অন্যরা সেটা শুনছে আর হো হো হাসছে। তাহেরা বেগম তাদেরকে ছেড়ে বেড়িয়ে গেলেন বাড়ির পেছনের অংশে।। তার চিন্তা নিজের ছোট্ট ক্ষেত নিয়ে। ভাল ফলন হয়েছিলো।

শিল পড়ে ঝাল বেগুনসহ সব গাছগুলো পড়ে আছে। একটা গাছও ঠিক ভাবে নেই, নষ্ট হয়ে গেছে। ধান গাছে সবে মাত্র শিষ এসেছে। কিন্তু ঝড় আর শিল পড়ে ধান গাছগুলো নষ্ট হয়ে গেছে।

এমন অবস্থা দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে তাহরো গাছগুলো নেড়ে দেখছে কোনটা বাঁচবে, কোনটা বাঁচবে না। তাহেরা নির্বাক। ঘোলা চোখে তাকিয়ে আছে নষ্ট  ধানি জমির দিকে। এ শুধু নষ্ট ধান নয়, বরং কৃষকের নষ্ট হওয়া বহু স্বপ্ন, নষ্ট হওয়া ঘাম, নষ্ট হওয়া আশা-আকাঙ্খা।

(এটা গল্পের দ্বিতীয় অংশ,  প্রথম অংশ পড়তে ক্লিক করুন)

লেখক: সাংবাদিক, গল্পকার

আইএ/পাবলিক ভয়েস

মন্তব্য করুন