

পহেলা বৈশাখ আমার কাছে খুব বিরক্তিকর একটি আইটেম। চৈত্র মাস এলেই শহরের কিছু লোকজন, বিশেষ করে মিডিয়াগুলো খুব চেইতা উঠে। এরা ইতিহাসকে বিকৃত করে। মুসলমানিত্বের স্বকীয়তা লুন্ঠন করে। এরা পরগাছার ন্যায় ভিন্ন সংস্কৃতির পদলেহন করে। একই পহেলা বৈশাখ কোলকাতায় যে রং ও ঢংয়ে পালিত হয়, এখানেও অনুরূপ হবে কেন? একটা মজার তথ্য দেই, কোলকাতা বা ইন্ডিয়ার সাথে বাংলাদেশের সময়ের ব্যবধান মাত্র আধা ঘন্টা অথচ নববর্ষ পালিত হয় ভিন্ন ভিন্ন দিনে।
কেন আমাদের হীনমন্যতা? ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির নামে নিজ ধর্মের আদর্শকে কেন বিসর্জন দিতে হবে? একজন মুসলমান হিসেবে অন্য ধর্মের আচার কেন আমরা পালন করবো?
সম্রাট আকবর বাংলা সালের হিসাব শুরু করেছিলেন সিম্পলি একটা বিষয়কে কেন্দ্র করে। তাঁর প্রজা তথা কৃষকদের থেকে নিদৃষ্ট খাজনা সংগ্রহের লক্ষ্যে নতুন বাংলা বর্ষের সূচনা করেছিলেন।
ঐ সময়ে হিজরী পঞ্জিকা অনুসারে কৃষি পণ্যের খাজনা আদায় করা হতো। কিন্তু হিজরী সন চাঁদের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় তা কৃষি ফলনের সাথে মিলত না। এতে অসময়ে কৃষকদেরকে খাজনা পরিশোধ করতে বাধ্য করতে হত। খাজনা আদায়ে সুষ্ঠুতা প্রণয়নের লক্ষ্যে মুঘল সম্রাট আকবর বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। সম্রাটের আদেশ মতে তৎকালীন বাংলার বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদ ফতেহউল্লাহ সিরাজি সৌর সন এবং আরবী হিজরী সনের উপর ভিত্তি করে নতুন বাংলা সনের নিয়ম বিনির্মাণ করেন।
১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ই মার্চ বা ১১ই মার্চ থেকে বাংলা সন গণনা শুরু হয়। তবে এই গণনা পদ্ধতি কার্যকর করা হয় আকবরের সিংহাসন আরোহণের সময় (৫ই নভেম্বর, ১৫৫৬) থেকে। প্রথমে এই সনের নাম ছিল ফসলি সন, পরে “বঙ্গাব্দ” বা বাংলা বর্ষ নামে পরিচিত হয়।
বাংলা সালের মাস ও ঋতু ভিত্তিক হিসেব-নিকেশ সে সময় হতে চললেও ঘটা করে নববর্ষ পালন ১৯৬৭ সনের পূর্বে ছিল না। আর ১৯৮৯ ইং সাল থেকে পহেলা বৈশাখে “মঙ্গল যাত্রা” নামে অদ্ভুত এক অপসংস্কৃতি জাতির কপালে ঝাঁকিয়ে বসে।
এই সব আমদানিকৃত ও উদ্ভট টাইপের প্রথা অপসংস্কৃতি ছাড়া আর কিছু নয়। আজকাল যুবক যুবতীদের কাছে নববর্ষ একটি ফ্যাশন হিসেবে দেখা দিয়েছে। শতভাগ ভিন্ন ধর্ম ও ভিন্ন সংস্কৃতি থেকে চেপে বসা মঙ্গল যাত্রা ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে শিরক ছাড়া আর কিছু নয়।
“মুসলমানের বাচ্চারা ওখানে কেন যাবে? নববর্ষ উপলক্ষ্যে কারো ঘরে একটি ডিমও ভাজা যাবে না”- এ কথাগুলো বলছিলেন দেশের অন্যতম আধ্যাত্মিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম হাফিজাহুল্লাহ। ইসলামী অনুশাসনকে উপেক্ষা করে এমন উৎসবে যোগ দেয়া কোন মুসলমানের কর্ম হতে পারে না। আল্লাহভীরুতার নমুনা যেখানে নাই, সেখানে মুসলমানরাও নাই, ভাবনাটা এমন থাকা দরকার।
নববর্ষের দিন যুবক যুবতীরা যেন বাড়তি স্বাধীনতা পায়। অভিভাবকরা থাকে ঢিলেঢালা। কিন্তু উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েরা যে আজ কৌমার্য হারানোর ঝুঁকিতে থাকে, সে খবরটা রাখা দরকার। আপনি ধার্মিক না হলেও তো চাইবেন না যে, আপনার মেয়েটা আজ একটা ছেলের সাথে জায়গা বেজায়গায় সময় কাটাক! কোন বিদূষী মা তাঁর কুমারী মেয়ের বেলায় এমনটা চান না বলেই বিশ্বাস করি।
সুতরাং; নববর্ষ পালনের উছিলায় এ দিনে আমরা পাপাচার না করি!
লেখক, এক্টিভিস্ট, বিশ্লেষক