বিষাদের ২০ শেষ ; স্বাগত ২১

করোনা বিদায়ে উজ্জল হোক নতুন বছর

প্রকাশিত: ৯:৩৮ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৩১, ২০২০

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘ফোটে যে ফুল আঁধার রাতে/ঝরে ধুলায় ভোর বেলাতে/আমায় তারা ডাকে সাথে- আয় রে আয়।/সজল করুণ নয়ন তোলো, দাও বিদায়…।’

সব বিদায়ের সঙ্গেই লুকিয়ে আছে আনন্দ-বেদনার কাব্য। ২০২০ বছর বিদায়ের ক্ষণেও সেই একই কথা বাজবে সবার অন্তরে। আজ রাত ১২টা পেরোলেই শুরু হবে নতুন খ্রিস্টীয় বছর ২০২১। আর ভোরবেলাতেই উদয় হবে নতুন বছরের নতুন সূর্য।

(১)

আজকের সূর্যাস্তের মধ্য দিয়ে আরেকটি খ্রিস্টীয় বছর ২০২০ বিদায় নিলো। বছরটি পৃথিবীকে দিয়েছে মহামারীর তাণ্ডব, মৃত্যুর মিছিল, কর্মহারা জীবন ও অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। এ পরিস্থিতির মধ্যেই রাত পেরিয়ে ভোরের সূর্য পৃথিবীর বুকে নিয়ে আসবে আরেকটি নতুন বছর। আর নতুন বছর নিয়ে মানুষ আশায় বুক বাঁধবে। করোনামুক্ত ঝলমলে একটি বিশ্ব গড়ার প্রত্যয় নিয়ে পথচলা শুরু করবে।

আমাদের জীবনের সব কর্মকাণ্ড ইংরেজি সালের গণনায় হয়, তাই খ্রিস্টীয় বছর বিশেষ গুরুত্ববাহী। সেই বিবেচনায় বিদায়ী বছরটা কেমন গেল তার হিসাব কষবেন সবাই। ভালো-মন্দ, আনন্দ-বেদনার স্মৃতিগুলো আরও একবার রোমন্থন করবেন। একইভাবে জীবনের সব ধরনের নেতিবাচক বিষয়গুলোকে দূরে ঠেলে সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায় নতুন করে পথচলার প্রত্যয় ব্যক্ত করবেন।

বাস্তবে চলতে গেলে পেছন ফিরতে হয়। করোনার বাইরে ২০২০ সালটি ছিল গতানুগতিক। রাজনীতি ছিল অচঞ্চল।

দুর্নীতি দমন, মাদক নিয়ন্ত্রণ, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান, সড়ক দুর্ঘটনা কমানো, ঢাকায় জলাবদ্ধতা নিরসন, দূষণ কমানো—কোনো ক্ষেত্রেই বলার মতো সাফল্যের উদাহরণ নেই।

তার ওপর করোনাকালে ধর্ষণ, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, সম্পত্তি দখল ও গবাদিপশু চুরির মতো অপরাধ বেড়েছে। বেড়েছে নারী নির্যাতন, বিবাহবিচ্ছেদ।

বাংলাদেশের মুসলমানদের জন্য ২০২০ সালটি আরও বেশি কষ্ট ও কপালে ভাজ ফেলার। এ বছর এ দেশের প্রবীণ অসংখ্য ওলামায়ে কেরামের মৃত্যু হয়েছে। তৈরি হয়েছে ইলম ও মুসলমানদের মধ্যে বিরাট শুণ্যতার। এক বছরে এত আলেমদের ইন্তেকালের ইতিহাস আর নেই বাংলাদেশে।

  • এ বছর উল্যেখযোগ্য যে সব আলেমদের আমরা হারিয়েছি।

১। আল্লামা শাহ আহমাদ শফি রহিমাহুল্লাহ। ইন্তিকালঃ ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ইং।

২। শায়খুল হাদিস আল্লামা আশরাফ আলী (রাহ.), কুমিল্লা। ইন্তেকাল: ৩১-১২-২০১৯ইং।

২। শায়খুল হাদিস আল্লামা হাফিজ তাফাজ্জুল হক শায়খে হবিগঞ্জী (রাহ.)। ইন্তেকাল:  ০৫-০১-২০২০ইং।

৩। শায়খুল হাদিস আল্লামা আজহার আলী আনোয়ার শাহ কিশোরগন্জী (রাহ.)। ইন্তেকাল: ২৭-০১-২০২০ইং।

৪। শায়খুল হাদীস আল্লামা নূর হুসাইন কাসেমী রহিমাহুল্লাহ। ইন্তেকাল : ১৩ ডিসেম্বর ২০২০ইং।

৫। শায়খুল হাদিস আল্লামা আব্দুল হাই বংশিবপাশা (রাহ.)।  ইন্তেকাল: ২৮-০৩-২০২০ ইম

৬। খলিফায়ে মাদানী সদরে জমিয়ত শায়খুল হাদিস আল্লামা আব্দুল মুমিন শায়খে ইমামবাড়ী (রাহ.)। ইন্তেকাল: ০৮-০৪-২০২০ইং।

৭। পীরে কামেল আল্লামা সৈয়দ মুজিবুর রহমান পেশওয়ারী (রাহ.) । ইন্তেকাল: ১৪-০৪-২০২০ইং।

৮। বিশ্ব বিখ্যাত দাঈ, তাবলীগ জামাত ইউরোপের জিম্মাদার, বিমান ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল মুকিত সাহেব (রাহ)। ইন্তেকাল: ১১-০৪-২০২০ইং।

৯। আল্লামা মুফতী আব্দুর রহীম বুখারী (রাহ), (পটিয়া মাদ্রাসার বুখারী সাহেব হুজুরের মেঝ ভাই)।  ইন্তেকাল: ১৬-০৪-২০২০ ইং

১০। বিশ্বনদিত মুফাচ্ছিরে কোরআন শায়খুল হাদিস আল্লামা হাফিজ যুবায়ের আহমদ আনসারী (রাহ.)। ইন্তেকাল: ১৭-০৪-২০২০ইং।

  • আরও যেসব উল্যেখযোগ্য ঘটনা ছিলো ২০২০ সালে :

করোনার মধ্যে মে মাসে ঘূর্ণিঝড় আম্পান আঘাত করে। জুন থেকে শুরু হয় দীর্ঘস্থায়ী বন্যা। নারায়ণগঞ্জে মসজিদে আগুনে ৩৪ জন, মুন্সিগঞ্জে লঞ্চডুবিতে ৩২ জন, নেত্রকোনার হাওরে ট্রলারডুবিতে ১৭ জন, জয়পুরহাটে রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনায় ১২ জন—করোনার বাইরেও মৃত্যুর মিছিল ছিল বছরজুড়ে।

চাল, পেঁয়াজ, আলু ও সবজির দামের কশাঘাত সইতে হয়েছে প্রায় সারা বছর। বিদ্যুৎ ও পানির মূল্যবৃদ্ধি এবং ভুতুড়ে বিল মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়িয়েছে।

দেশে গত ৯ মাসে করোনাভাইরাসে মারা গেছেন সাড়ে ৭ হাজারের বেশি মানুষ। আক্রান্ত হয়েছেন ৫ লাখের বেশি। বিশ্বের ২১ দেশে করোনায় মারা যান আরও ২ হাজার ৩৩০ বাংলাদেশি।

৮ মার্চ প্রথম দেশে করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ আক্রান্ত তিন রোগী শনাক্ত হন। ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়।

১৮ মার্চ করোনায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। পরদিন দেশের মানুষ প্রথম ‘লকডাউন’ দেখতে পায় মাদারীপুরের শিবচরে। ২৬ মার্চ থেকে শুরু হয় সাধারণ ছুটি, শেষ হয় ৩০ মে। গণপরিবহন চলাচল শুরু হয় ১ জুন। ৬৬ দিন পর সচল হয় ঢাকা।

তবে কোয়ারেন্টিন বা বিচ্ছিন্ন থাকা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক পরা, জীবাণুনাশকের ব্যবহার, বাসায় থেকে কাজ (হোম অফিস)—এগুলো নতুন স্বাভাবিক জীবনের অংশ হয়ে যায়। জীবাণুনাশক ও সুরক্ষাসামগ্রী কিনতে বাড়তি ব্যয় করতে হয় মানুষকে।

করোনার প্রভাব সুদূরপ্রসারী। রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এমন কোনো জয়াগা নেই যেখানে করোনার প্রভাব পড়েনি। কর্মহীন হয়েছেন দেশের অনেক মানুষ। অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে অনেকে বাধ্য হয়ে বড় বড় শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গেছেন। করোনায় বড় ক্ষতি হয়েছে শিক্ষা ব্যবস্থায়। পুরোটা বছরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। গুরুত্বপূর্ণ এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা হয়নি। নিচের ক্লাসেও পরীক্ষা ছাড়াই অটো প্রমোশনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

করোনার শুরুর হওয়ার পরপরই বিপুলসংখ্যক প্রবাসী দেশে চলে আসেন। এদের বড় একটি অংশ সৌদি প্রবাসী। এরাই পরে সৌদি ফিরতে গিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়ে যান। এ কারণে রাজধানীতে তারা ব্যাপক বিক্ষোভ করেন। অবস্থা কিছুটা স্বাভাবিক হলে ফ্লাইট চালু করে সৌদি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সবার ফেরা নিয়ে জটিলতা না কাটলে রাস্তায় নামেন তারা। সেই অনিশ্চয়তা এখনও পুরোপুরি কাটেনি। করোনার এ সময়ে সরকার নানাভাবে প্রণোদনা দিয়ে, সাহায্য-সহযোগিতা অব্যাহত রেখে সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতি সচল রেখেছে। প্রণোদনা কার্যক্রম এখনও অব্যাহত রয়েছে।

বিশ্ব পরিমণ্ডলে ২০২০ সালের উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল আমেরিকার নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে জো বাইডেনের নির্বাচিত হওয়া। করোনায় বিশ্বের স্থবির হয়ে যাওয়া, যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় সবচেয়ে বেশি মানুষের আক্রান্ত হওয়া ও মারা যাওয়া।

(২)

ইংরেজি নববর্ষের এই শুরু সময়ে লায়ন ডা. বরুণ কুমার আচার্য-র লেখা থেকে ইংরেজি নববর্ষের একটি আলোচনা নেয়া যায়। কিভাবে এলো এই ইংরেজি বর্ষ তা জানা যাবে এ লেখা থেকে।

ইংরেজি নববর্ষের পুরো বারো মাসের নাম গণনার একটি ইতিহাস রয়েছে। বছরের বারটি মাসের বেশির ভাগই নামকরণ করা হয়েছে রোমান দেবতা বা সম্রাটের নামানুসারে।

জানুয়ারি- রোমান দেবতা জানো’স এর নামানুসারে

ফেব্রুয়ারী- ল্যাটিন শব্দ ফেব্রুয়া থেকে নেয়া হয়েছে, যার অর্থ পবিত্র

মার্চ- রোমানদের যুদ্ধ দেবতা মার্সের নামানুসারে

এপ্রিল- ল্যাটিন শব্দ এপ্রিলিস নামানুসারে, যার অর্থ খোলা

মে- বসন্তের দেবী মায়া’স নামানুসারে

জুন- বিবাহ এবং নারী কল্যাণের দেবী জুনো’র নামানুসারে

জুলাই- রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার-এর নামানুসারে

আগষ্ট- জুলিয়াস সিজারের পুত্র অগাস্টাস সিজারের নামানুসারে

সেপ্টেম্বর- ল্যাটিন সপ্তম সংখ্য সেপ্টেম এর নামানুসারে

অক্টোবর- ল্যাটিন অষ্টম সংখ্যা অক্টো এর নামানুসারে

নভেম্বর- ল্যাটিন নবম সংখ্যা নভেম এর নামানুসারে

ডিসেম্বর- ল্যাটিন দশম সংখ্যা ডিসেম এর নামানুসারে

বছর ঘুরে আবার দ্বারপ্রান্তে এই বারোমাস গননার নতুন বছর ২০২১। পুরাতনকে ঝেড়ে ফেলে নতুন উদ্যমে নতুনকে স্বাগত জানানোর যে রীতি চলে আসছে তাই নববর্ষ হিসেবে সামনে আসে। বাংলাদেশে সাধারণত তিনটি বর্ষের প্রচলন রয়েছে, যা হলো- ইংরেজি, বাংলা ও হিজরী তথা আরবি মাস। এসব বর্ষের আবার সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। ইংরেজি নববর্ষকে সামনে রেখে তাই এই বর্ষ কিভাবে এলো একটু জেনে নেওয়া যাক।

প্রকৃত অর্থে আমরা যে ইংরেজি সাল বা খ্রিস্টাব্দ মেনে চলি তা হলো গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার। এই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ইংরেজি নববর্ষ পালন করা হয়। এই ক্যালেন্ডার নিয়েও রয়েছে নানা বিতর্ক। বর্তমানে মতো অনেক আগে সার্বজনীনভাবে পহেলা জানুয়ারি নববর্ষের প্রচলন ছিলো না। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার প্রকৃতভাবে একটি সৌর বছর। আর বর্তমানের যে ক্যালেন্ডার তাতে পৌঁছাতে কয়েক’শ বছর সময় লেগেছে।

ইতিহাসে রয়েছে, মানুষ প্রথমদিকে চাঁদের হিসেবেই নতুন বর্ষ গণনা শুরু করে। চাঁদের হিসেবে ১০ মাসে বছর হতো। সেখানে ঋতুর সাথে কোনও সম্পর্ক ছিলো না। সূর্যের হিসাবে বা সৌর গণনার হিসাব আসে অনেক পরে। সৌর এবং চন্দ্র গণনায় আবার পার্থক্য রয়েছে। সৌর গণনায় ঋতুর সঙ্গে সম্পর্ক থাকে।

প্রায় ৪০০০ বছর আগে, খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে মেসোপটেমীয় (ইরাক) সভ্যতায় প্রথম বর্ষবরণ উৎসব চালু হয়েছিলো। মেসোপটেমিয়ান সভ্যতার আবার ৪টি আলাদা ভাগ আছে, সুমেরীয় সভ্যতা, ব্যাবিলনীয় সভ্যতা, আসিরীয় সভ্যতা ও ক্যালডীয় সভ্যতা। এদের মধ্যে বর্ষবরণ উৎসব পালন করা শুরু হয় ব্যাবিলনীয় সভ্যতায়।

সে সময় বেশ জাঁকজমকের সঙ্গেই পালন করা হতো এই বর্ষবরণ। তবে সেটা কিন্তু এখনকার মতো জানুয়ারির ১ তারিখে পালন করা হতো না। তখন নববর্ষ পালন করা হতো বসন্তের প্রথম দিনে। বসন্তকালে প্রকৃতির নতুন করে জেগে ওঠাকেই তাঁরা নতুন বছরের শুরু বলে চিহ্নিত করেছিলো। তখন তাঁরা চাঁদ দেখেই বছর গণনা করতো। যেদিন বসন্তের প্রথম চাঁদ উঠত, শুরু হতো তাদের বর্ষবরণ উৎসব, চলতো টানা ১১ দিন। এই ১১ দিনের আবার আলাদা আলাদা তাৎপর্যও ছিল।

ব্যাবিলনীয় সভ্যতার পর জাঁকজমক করে নববর্ষ পালন করা শুরু করে রোমানরা। রোমের উপাখ্যান খ্যাত প্রথম সম্রাট রোমুলাসই ৭৩৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমান ক্যালেন্ডার চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। অবশ্য এই ক্যালেন্ডারও রোমানরা চাঁদ দেখেই বানিয়েছিলেন। আর সেই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নববর্ষ ছিলো ১ মার্চ। সেই ক্যালেন্ডারে মাস ছিল মাত্র ১০টা। পরে সম্রাট নুমা পন্টিলাস জানুয়ারি আর ফেব্রুয়ারিকে ক্যালেন্ডারে যোগ করেন। সমস্যা ছিল আরও, রোমানদের ক্যালেন্ডারে তারিখও ছিল না। ধীরে ধীরে চাঁদের বেড়ে উঠার ছবি দিয়ে তারা মাসের বিভিন্ন সময় চিহ্নিত করতো। চাঁদ ওঠার সময়কে বলা হতো ক্যালেন্ডস, পুরো চাঁদকে বলতো ইডেস, চাঁদের মাঝামাঝি অবস্থাকে বলতো নুনেস। পরে সম্রাট জুলিয়াস সিজার এই ক্যালেন্ডারের পরিবর্তন ঘটান। তিনি ক্যালেন্ডস, ইডেস, নুনেসের ঝামেলা শেষ করে বসিয়ে দেন তারিখ। ফলে বছরে মোট ৩৫৫ দিন হয়। যেহেতু চাঁদের হিসাবে প্রতিমাসে দিন হয় সাড়ে ২৯। আর তাই চাঁদের হিসাব করায় তাদের বছরে ১০ দিন কম থেকে গিয়েছিলো। এইভাবে বছর হিসাবের ফলে চাষীরা সমস্যায় পড়ে যায়। পরে অনেক চিন্তা ভাবনা করে সম্রাট সিজার চাঁদের হিসাব না করে, সূর্য দিয়ে হিসাব করে বছরকে ৩৬৫ দিনে এনে এই সমস্যার সমাধান করেন।

অনেকে বলেন সেই সময়ে সূর্য দেখে প্রথমে ৩৬৫ দিনের নয়, ৪৪৫ দিনের ক্যালেন্ডার বানিয়েছিলেন! রোমান সম্রাট জুলিয়ান সিজার লিপইয়ার বছরেরও প্রচলন করেন। জুলিয়াস সিজার আলেকজান্দ্রিয়া থেকে গ্রিক জ্যোতির্বিদ মোসাজিনিসকে নিয়ে আসেন ক্যালেন্ডার সংস্কারের জন্য। মোসাজিনিস দেখতে পান পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে প্রদক্ষিণ করতে সময় নেয় ৩৬৫ দিন ৬ ঘন্টা। ৩৬৫ দিন বছর হিসাব করা হলে এবং প্রতি চতুর্থ বছরে ৩৬৬ দিনে বছর হিসাব করলে হিসাবের কোন গড়মিল হয় না। আর তাই মোসাজিনিস অতিরিক্ত একদিন যুক্ত করে এ বছরটির নাম করেন ‘লিপিইয়ার’।

যিশু খ্রিস্টের জন্মের ৬০০ বছর আগে, অর্থাৎ খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ অব্দে ঠিক করা হয়েছিলো বর্ষবরণ হিসেবে পালন করা হবে ২৬ মার্চ তারিখটি। কিন্তু সেটা ঠিকভাবে মানা হচ্ছিলো না। পরে সম্রাট নুমা পন্টিলাস যখন জানুয়ারি আর ফেব্র“য়ারিকে ক্যালেন্ডারে স্থান দেন, তিনি ঠিক করে দেন জানুয়ারির ১ তারিখ হলো বছরের প্রথম দিন। ওইদিনই হবে বর্ষবরণ। কিন্তু সে কথাও মানা হলো না। রোমানরা সেই আগের মতো মার্চের ১ তারিখেই বর্ষবরণ উৎসব করতে লাগলেন। পরে জুলিয়াস সিজার যখন ৩৬৫ দিনে বছরের ঘোষণা দেন, তখন আবার বলে দেন মার্চে নয়, বছর শুরু হবে জানুয়ারির ১ তারিখে। উৎসবও সেইদিনই হবে। এরপরই বর্ষবরণ উৎসব মার্চ মাস থেকে চলে এলো জানুয়ারিতে। সেইসময়ে রোমান সাম্রাজ্যে এই ক্যালেন্ডার নিয়ে অনেক রকম ঝামেলা হয়েছিলো। আর তাই কবে যে নতুন বছর শুরু হবে, সেটা ঠিকই করা যাচ্ছিল না। একেক সময় একেক জায়গায় একেক দিন নতুন বছরের প্রথম দিন হিসেবে পালিত হতো।

সিজারের ক্যালেন্ডারেও বেশকিছু সমস্যা ছিলো। এই সমস্যার সমাধানে মাত্র ৪০০ বছর আগে ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দে রোমের পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরী জ্যোতির্বিজ্ঞানীগণের পরামর্শ নিয়ে ক্যালেন্ডারটির সংস্কার করেন। তারই নাম অনুসারে ক্যালেন্ডারটির নামকরণ করা হয়েছে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার। আর এটি বের করার পর এর সুবিধার কারণে আস্তে আস্তে সকল জাতিই গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ব্যবহার শুরু করে। ফলে আগে যারা নিজস্ব ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বর্ষবরণ উৎসব পালন করতো, তারাও এখন গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী জানুয়ারির ১ তারিখই নববর্ষ হিসেবে পালন করে।

একই দিনে নতুন বছরকে স্বাগত জানালেও বিভিন্ন দেশে নববর্ষ পালনের রীতিনীতিও ভিন্ন ভিন্ন। কিছু কিছু মিল থাকলেও নববর্ষের অনুষ্ঠানের সঙ্গে যোগ হয় দেশীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। গ্রেট ব্রিটেনে এই গ্রেগরীয়ান ক্যালেন্ডার প্রচলিত হয় ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে। আর এই ক্যালেন্ডার আমাদের দেশে নিয়ে আসে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে। আমরাও পহেলা বৈশাখের পাশাপাশি প্রতিবছর ১লা জানুয়ারিতেও বর্ষবরণ করি। এদিনও আমরা সারারাত আনন্দে মেতে উঠি। মেতে উঠি ভালোবাসা ও সৌহার্দ্যতায়।

সবিশেষে বলা যায়, কিছু ভালো-মন্দ আর প্রচুর বিষাদ নিয়ে সব মিলিয়ে বিদায় নিচ্ছে ২০১৮। আসছে ২০১৯। ভালো কাটুক এ বছর। সৌন্দর্যের সাথে।

  • বিষাদ ভুলে নতুন বছরের এই নতুন সময়ে পাবলিক ভয়েস টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে সকল পাঠক এবং শুভানুধ্যায়ীদের জানাই আন্তরিক সম্ভাষণ।

মন্তব্য করুন