

ভূমিকা:/অডিও
‘যিকরুল্লাহ’। আল্লাহর জিকির। জিকির কী? জিকির দ্বারা কি উদ্দেশ্যে (?) জিকিরের ফজিলত কি; এই আলোচনা আমরা একটু পরে করি।
আপাতত ‘যিকরুল্লাহ’ গান নিয়ে কিছুটা আলোচনা করা যাক-
সংগীত: ‘যিকরুল্লাহ’
কথা: সাইফ সিরাজ
সুর: মুহাম্মদ বদরুজ্জামান
কণ্ঠ: মুহাম্মদ বদরুজ্জামান এবং অন্যান্য
প্রডিউস: হলিটিউন
জাতীয় সাংস্কৃতিক সংগঠন কলরব‘র শ্রোতাপ্রিয় সংগীত; ‘সাল্লিআলা মুহাম্মাদিন’/’হাসবি রাব্বি জাল্লাল্লাহ’/’শুকরিয়া’/’সালাত’/’রাসুলে খোদা’-এর ধারাবাহিকতায় কলরবের এবারের আয়োজন ছিল জিকির নিয়ে ‘যিকরুল্লাহ’। এই শিরোনামে এর আগে সম্ভবত কোনো গান হয়নি। কবি সাইফ সিরাজের অসাধারণ সব কথামালা দিয়ে সাজানো হয়েছে ‘যিকরুল্লাহ’। বরাবরের মতো সাইফ সিরাজ তার সবটা ঢেলে দিয়েছেন যিকরুল্লাহের লিরিকে। শুরুতেই তাকে জাযাকাল্লাহ।
’যিকরুল্লাহ’ শিরোনামের সংগীত আসবে এবং বিশাল প্লান প্রোগ্রাম করে সেটি রিলিজ হবে জামান ভাইয়ের কল্যাণে সেটি জানতাম বেশ কিছুদিন আগ থেকেই। শুধু আমি না; কলরবের অনেক নিয়মিত শ্রোতা, অভিভাবক, ভক্তবৃন্দও সে সম্পর্কে অবগত ছিল। যেহেতু আয়োজনটা ছিল পরিকল্পিত এবং তাদের লক্ষ্যটা ছিল সুদূরপ্রসারী তাই তাদের এ আয়োজন নিয়ে কলরবপ্রেমী এবং সকল ইসলাম সঙ্গীতপ্রেমী শ্রোতাদের মাঝে কৌতূহলেরও শেষ ছিল না। সবাই অপেক্ষায় ছিল, কেমন হতে পারে যিকরুল্লাহ। শুনতে ‘যিকরুল্লাহ’ কতটা মধুরতা দেবে আমাদের (?) ‘যিকরুল্লাহ’ কি পারবে আমাদের জং ধরা হৃদয়কে বরফে রুপান্তরিত করতে? প্রভুর প্রেম সাগরে সাঁতরাতে?
তো তাদের প্ল্যান অনুযায়ী জাহিদ নীরবের পরিচালনায় প্রথমে অডিও রিলিজ হয় জিপি মিউজিকে। রিলিজ হওয়ার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশংসায় ভাসছিল সঙ্গীতটি। লিরিক, টিউন ও সাউন্ড ইফেক্ট নিয়েও সন্তুষ্টি প্রকাশ করতে দেখা যায় শ্রোতাদের। জিপি মিউজিক থেকে প্রায় মাসখানেক বিভিন্ন লাউড স্পিকার আর ভ্রমনের গাড়িতে বাজতেও শোনা যায় ‘যিকরুল্লাহ’র জিকিরের ধ্বনি। ফলে অডিওর পর ভিডিও নিয়ে আগ্রহী হতে দেখা যিকরুল্লাহপ্রেমীদের। গান শোনার জিনিস শোনাতেই ভালো এবং শোনার মধ্যেই এর আসল স্বার্থকথা। তারপরও এখন বাড়তি চেষ্টা করা হয়; গানের সাথে মিল রেখে ভিডিও ক্লিপ’র মাধ্যমে ভালো কোনো ম্যাসেজ দেয়ার। এটারও অবশ্যই ভালোর দিক আছে। অস্বীকার করার সুযোগ নেই। মানুষ শোনে বদলায় দেখেও বদলায়।
কিন্তু ইদানীং ইসলামী সংগীতের ভিডিওগুলোকে এতোটাই আধুনিক করে উপস্থাপন করার চেষ্টা করা হচ্ছে, দেখার পর মনে হয় বোধয় এটা কোনো সিনেমার ইসলামিক ভার্সন। যেটা ইসলামী সংস্কৃতির জন্য কখনও মানানসই না। এত্থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। এখনি। এই মুহুর্তে।
যাইহোক, যিকরুল্লাহর প্রচার-প্রচারণায়ও ছিল এবার ভিন্ন মাত্রা। অনেকেই যিকরুল্লাহ গজলের অপেক্ষায় ফেসবুকে একাধিক পোস্ট করেন। কেউ ‘যিকরুল্লাহ’র থাম্বেল দিয়ে ফ্রেম বানিয়ে নিজের প্রোফাইল রাঙ্গাতেও দেখা যায়। একসময় ভার্চুয়াল’র ফেসবুক প্রোফাইলগুলো হয়ে যায় ‘যিকরুল্লাহ’র আবহে আবৃত। আবার ওদিকে ইউটিউবে ‘যিকরুল্লাহ’ লিখে সার্চ দিলেও পাওয়া ডজন ডজন ইউটিউব চ্যানেল থেকে পাবলিশ করা যিকরুল্লাহ’র অডিও ভার্সনটি। যদিও এটা কোনোভাবেই ঠিক না। কলরবও সমম্ভবত এরকম গটা করে সবাইকে পাবলিশ করার অনুমতি দেয়নি। এদিকে সাধারণ ইউটিউবারিদের সতর্ক হওয়া দরকার।
এবার আলোচিত ভিডিও ক্লিপ নিয়ে কিছুটা আলোকপাত করা যাক-
ভিডিও:/
যিকরুল্লাহ’র ইন্ট্রোটা দর্শকদের মুগ্ধ করবে সেটা ছিল কল্পনাতীত। শিল্পী বদরুজ্জামান আল্লাহর জিকিরের ধ্বনি তুলে মসজিদ থেকে বের হচ্ছেন। আল্লাহ নামের সুরের মূর্ছনা। হৃদয় আন্দোলিত করবে; এটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া মসজিদ জিকিরের জায়গায়। আর মসজিদের আঙিনা সবসময় মাওলার জিকিরের মুখরিত থাকবে সেটাই তো নিয়ম। সেটাই দেখানো হল সুন্দর করে। যাক, ইন্ট্রোতে আমি সন্তুষ্ট। শুরু হল এবার স্ক্রিপ্ট বা মূল কাহিনী। যেটার উপর ভিত্তি করেই আমরা সামনে আগাবো যিকরুল্লাহকে নিয়ে।
সিন-১
একটি ছেলেকে অসহায়ের আবয়বে উপস্থাপন করা হয়েছে। পরনে আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের জার্সি। ভাল্লাগেনি এমন ড্রেসাপ। টিশার্টের কি এতোই অভাব ছিল (?) আজকের শিশুরা এমনেই এগুলাতে মজে আছে। সাধারণ টিশার্ট ব্যবহার করা যেত। যাইহোক, অসুস্থ সে; পথের দ্বারে মানবতার আকুতি নিয়ে আনমনে তাকিয়ে আছে দানবীরদের হাত চেয়ে। একা না। দুঃখনী ভাইটিও সাথে। অসুস্থ ভাইয়ের জীবন বাঁচাতে থলে নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে সবার দ্বারে। উদ্দেশ্য- ভাইয়ের প্রতি মানবতার হাত প্রসারিত করা।
সিন-২
গুটিকয়েক শিশু ছেলে-মেয়েদের উপস্থাপনা করা হয়েছে তাদের নিজ প্রফেশসহ। তাদের কেউ কেউ তরিতরকারি বিক্রি করছে। আবার তাদের একজন হাতুড়ি নিয়ে হয়তোবা কোনো রাজপ্রাসাদ নির্মানের ছক আঁকছে। ছেলেটা অনেক ট্যালেন্ট। বিষয়টা সুন্দরে ফুটিয়ে তুলেছে। পরবর্তী কাহিনীর জন্য শটটা বেস্ট ছিল।
সিন-৩
একটি শিশু তুলির আঁচড়ে ‘আল্লাহ’ নামের ক্যালিগ্রাফি আঁকতে যারপরনাই চেষ্টা করছে একটি কাগুজে পাতায়। আঁকাআঁকি করা অনন্য একটি শিল্প। সবাই চাইলেই এটা পারে না। করে শিখতে হয়। ইসলামি ক্যালিগ্রাফি সবসময় তার দর্শককে মুগ্ধ করে। এরকম একটা কাহিনী উপস্থাপন করে শিশু-কিশোরদের ক্যালিগ্রাফির প্রতি আগ্রহী করার জন্য এই ম্যাসেজটি আমাকে মুগ্ধ করেছে।
সিন-৪
বেশ কিছু শিশুরা পরস্পরে মিলেমিশে বারবিকিউ’র রেসিপি করছে। মিলেমিশে খাবে৷ ভালোলাগার মতো একটি সিন। এই সিন দেখলে শিশুরা পরস্পরে মিলেমিশে থাকার, পরস্পর পরস্পরকে ভালোবাসার, কাছে টানার একটি সুন্দর শিক্ষা পাবে। শেখার মত একটি সিন।
সিন-৫
পরের আরেকটি সিনে দেখা যায় একটা ছেলে বড়শী নিয়ে মাছ ধরছে। হাতের মুঠোয় থাকা মোবাইলের স্কিনে পাতা নেড়ে নেড়ে তেলাওয়াতও করছে। মাআশাল্লাহ! বেশ সুন্দর আইডিয়া স্ক্রিপ্ট রাইটারের। আমরা কর্মবস্থতায় আল্লাহকে ভুলে যাই৷ জিকির থেকে গাফিল হয়ে যাই। অথচ সদিচ্ছা থাকলে কাজের ফাঁকেফাঁকে আমরা জিকির করতে পারি। মুখ নেড়ে কোরআন তেলাওয়াত করতে পারি। তাসবিহ জপতে পারি। এদিকে মনযোগী হওয়া দরকার। আল্লাহ সবাইকে তাওফিক দিন।
ভিডিও’র ক্লিপ মিনিট আড়াইয়ের মাথায় আবার জামান ভাইকে দেখা গেল। জুব্বা-পাগড়ী পরে মসজিদে যাচ্ছেন। তিনি শুধুই একা (?) না বিষয়টি এমন না। আসা-যাওয়ার পথে দ্বারে নিজ কাজকর্মে ব্যস্ত থাকা মানুষগুলোকেও মসজিদে নেয়ার প্রয়াসে দ্বারেদ্বারে যাচ্ছেন দাওয়াতের মশাল নিয়ে। প্রত্যেকের কাছে উপস্থিত হচ্ছেন এবং ঘড়ির টাইম দেখিয়ে ইশারা করে বলছেন সবাইকে, আসো! নিজ কর্ম ব্যস্ততা থেকে ফারেগ হও। মসজিদে যাই। নামাজের সময় নিকটবর্তী।
মাশাআল্লাহ, তারাও প্রত্যেকেই তার দাওয়াতে সাড়া দিয়ে কালবিলম্ব না করে সঙ্গে সঙ্গেই নিজ কর্ম ব্যস্ততা থেকে ফারেগ হয়ে জুব্বা-পাগড়ি পরে মসজিদের দিকে রওনা হচ্ছে। এভাবেই দাওয়াতে দাওয়াতে মসজিদগুলো আবাদ হোক। নামাজী হোক উম্মতে মুসলিমা।
এবার সবাই জামাতবন্দী হয়ে রবের সামনে হাজির। কাতার সোজা। ইমাম সাহেবেও রেডি। জামানের ভাইয়ের ইমামতিতে কিউটের ডিব্বাগুলো পিনপতন নীরবতায় নামাজে মগ্ন। এ যেনো এক নুরের ঝলক। দর্শনে এবং অনুভবে। ভালোলাগায় এবং ভালোবাসায়। নীরবে নিভৃতে। এমন দৃশ্যে ভালোলাগার কোনো আন্ত নেই। পৃথিবীতে এতো সুন্দর আর ফ্রেম নেই।
নামাজ শেষ। সবাই এক বৈঠকে বসা৷ দেখেই বুঝা যাচ্ছে স্ক্রিপ্ট রাইটার কাহিনী শেষ করতে যাচ্ছেন। আবারও উপস্থিত অসহায় সেই দুটো ভাই। এদের দেখা মাত্রই ইশারা করে জামান তার মুসল্লীদের কি যেনো বললেন। হয়তো সবাইকে বললেন, যার যা আছে তা নিয়ে ওদের পাশে দাঁড়াও। সবাই পকেট হাত দিল এবং নিজ তাওফিক অনুযায়ী মানবতার হাত বাড়িয়ে দিল তাদের প্রতি। মানুষ মানুষের জন্য। মানুষের পাশের দাড়ানো একটি মহৎ গুন। তাই সবাই কিছু না কিছু দেয়ার চেষ্টা করল।
সবাই সামর্থ্য অনুযায়ী অর্থ দিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ালো। কিন্তু একজনের পকেট ফাকা। তারপরও বসে নেই সে। আর সেজন্যই হয়ত সেটা বুঝিয়ে দিল সে…৷
বলছিলাম ক্যালিওগ্রফার ছেলেটার কথা। হয়তো পকেটশূন্য তার। কিন্তু তার হৃদয়টা ভরাট মানবপ্রেমে। মানবতার কল্যানে। তাই সে তার শখের ‘আল্লাহ’ ক্যালিগ্রাফিটা হাদিয়া দিয়ে দিল তাদেরকে হাসিমুখে। আমারা কিছুদিন আগেও দেখেছি বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনায় আক্রান্ত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে কয়েকজনকে ক্যালিগ্রাফার তাঁদের মূল্যবান ক্যালিগ্রাফি নিয়ে মানবতার ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন। এবং এই ক্যালিওগ্রাফিগুলো নিলামে উঠিয়ে তার থেকে অর্জিত অর্থ অসহায়দের পরিবারে দান করা হয়েছিল। আল্লাহ তাদের কবুল করুন।
ভিডিও’র কাহিনী শেষ। দর্শকরা এবার একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলেন। আগের এলোমেলো সিনগুলোর সারমর্ম নিয়ে একত্র করে ভাবতে লাগলেন। দেখলাম তো। দেখা শেষ। এবার আসুন নিজেকেও এর আদলে বদালাই……ভিডিও চলে গেলো আবার লিভ সিনে…। পরিচালক হয়তো বুঝালেন এভাবেই শেষ হয়ে যাবে। এমটাই হলো…।
যাইহোক, সব মিলিয়ে সঙ্গীতের ভিডিও মেকিং আকর্ষিত করেছে দর্শকদের। ভিডিও স্পেশালিস্ট, চলচ্চিত্র নির্মাতা ‘অহনিশ ফিল্মের’ সিইও হাসান আল বান্নার সেটের প্রশংসা করতেই হয়। ঢাকার মনোরম লোকেশনগুলকে তিনি এতো সুন্দর করে ফ্রেমে নিয়ে এসেছেন; এককথায় অসাধারণ।
জিকির:
সংগীতটি আমি শোনলাম। ভিডিও দেখলাম। অন্তত আমি এতে তৃপ্ত না। এতো সুন্দর একটা বিষয়ের উপর রচিত এই সংগীতটি। তাই বিষটা নিয়ে কিছুটা লেখা দরকার। আসুন জিকির নিয়ে কিছু আলোচনা করি-
জিকির। অর্থ- স্বরণ করা, মনে করা, উল্লেখ করা, বর্ণনা করা।
শরিয়তের আলোকে জিকির বলা হয়, মুখে বা অন্তরে আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা এবং প্রশংসা করা, পবিত্র কুরআন পাঠ করা, আল্লাহর কাছে চাওয়া, তার আদেশ-নিষেধ পালন করা, তার প্রদত্ত নেয়ামত ও সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা।
ইমাম নববি রহ. বলেন, জিকির কেবল তাসবিহ , তাহলিল, তাহমিদ ও তাকবির ইত্যাদিতে সীমাবদ্ধ নয়, বরং আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আনুগত্যের সাথে প্রত্যেক আমলকারীই জিকিরকারী হিসেবে বিবেচিত।
আল্লাহর জিকির এমন এক মজবুত রজ্জু, যা সৃষ্টিকে স্রষ্টার সাথে সম্পৃক্ত করে। তাঁর সান্নিধ্য লাভের পথ সুগম করে। মানুষকে উত্তম আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত করে। সরল ও সঠিক পথের উপর অবিচল রাখে।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন-
‘হে মুমিনরা! তোমরা অধিক পরিমাণে আল্লাহর জিকির কর।’ ( সুরা আহযাব:৪১)
এ আয়াতে বলা অধিক পরিমাণে জিকির বলতে কি উদ্দেশ্য আল্লাহ তায়ালা অপর আরেক আয়াতে বলেন –
‘যখন তোমরা নামাজ আদায় করবে, তখন আল্লাহর জিকির কর দাঁড়িয়ে, বসে এবং কাত হয়ে। (সুরা নিসা:১০৩)
এ কারণে আল্লাহ তাআলা মুসলিম ব্যক্তিকে দিবা-রাত্রি গোপনে-প্রকাশ্যে জিকির করার আদেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন-
‘তোমরা প্রতিপালককে মনে মনে সবিনয় ও সশংকচিত্তে অনুচ্চস্বরে প্রত্যুষে ও সন্ধ্যায় স্মরণ করবে এবং তুমি উদাসীন হবে না।’ (সুরা আরাফ:২০৫)
অন্য আয়াতে বলেন—
‘মুমিনগণ তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর। এবং সকাল বিকাল আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা কর।’ (সুরা আহযাব: ৪১-৪২)
‘নিশ্চয় আসমান জমিন সৃজনে আর রাত-দিনের পরিবর্তনে নিদর্শন রয়েছে জ্ঞানীদের জন্য, যারা আল্লাহর জিকির করে দাঁড়িয়ে বসে এবং শুয়ে। ‘(সুরা আলে ইমরান: ১৯০-১৯১)
আবুদ্দারদা রা. থেকে বর্ণিত: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন-
‘আমি কি তোমাদেরকে এমন এক আমল সম্পর্কে অবহিত করবো না, যা তোমাদের অধিপতির নিকট সবচেয়ে উত্তম ও পবিত্র, এবং তোমাদের মর্যাদা অধিক বৃদ্ধিকারী, এবং তোমাদের জন্য স্বর্ণ-রূপা দান করা ও দুশমনের মুখোমুখি হয়ে তোমরা তাদের গর্দানে বা তারা তোমাদের গর্দানে আঘাত করার চেয়ে উত্তম ?
সাহাবায়ে কেরাম বললেন, হ্যাঁ ইয়া রাসূলুল্লাহ!
বললেন- যিকরুল্লাহ (আল্লাহর জিকির বা স্মরণ)।(তিরমিজি : ৩২৯৯)
জিকির অন্তর দ্বারা হতে পারে, জিহ্বা দ্বারা হতে পারে, বা এক সঙ্গে উভয়টা দ্বারাও হতে পারে। এর বিভিন্ন প্রকার রয়েছে, যেমন-
১. কোরআনে কারীম পাঠ করা;
১. মৌখিক জিকির : যেমন, তাসবিহ, তাহলিল, তাহমিদ ও তাকবির ইত্যাদি;
৩. প্রার্থনা; এটা বিশেষ জিকির, কেননা এ-দ্বারা আল্লাহ তা’আলার নৈকট্য লাভ হয়, ইহকাল ও পরকালের প্রয়োজন পূরণ হয়।
৪. ইস্তিগফার করা; আল্লাহ তাআলা নূহ আ.-এর কথা উল্লেখ করে বলেন-
‘বলেছি, তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা প্রার্থনা কর, তিনি তো মহা ক্ষমাশীল।’ (সুরা নূহ: ১০)
৫. অন্তর দিয়ে আল্লাহ তা’আলার সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করা। এটা অন্যতম বড় জিকির;
৬. রকমারি ইবাদতের অনুশীলন করা ; যেমন সালাত কায়েম, জাকাত প্রদান, পিতা-মাতার সাথে অমায়িক আচরণ, আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখা, জ্ঞানার্জন ও অপরকে শিক্ষাদান-ইত্যাদি।
কেননা, সৎকর্মের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহকে স্মরণ করা।
আল্লাহ আমাদেরকে সবকাজে সবসময় তাকে স্মরণ করার তাওফিক দিন। আমিন।