

… এরপর আমরা ২৬ মার্চ বিকেল সাড়ে ৪টায় ষোলশহর ২নং গেইটে মেজর জিয়াউর রহমানের সাথে দেখা করে তাকে একজন সৈনিক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা বেতারে পাঠ করার অনুরোধ করি এবং বলি যে, তিনি যদি এ ঘোষণা পাঠ করেন, তাহলে বহির্বিশ্বে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের গ্রহণযোগ্যতা বহুগুনে বৃদ্ধি লাভ করবে। কিন্তু মেজর জিয়া জানি না কোন কারণে ও কোন মানসিকতার বশবর্তী হয়ে প্রথমে এ দায়িত্ব পালনে অস্বীকৃতি জানান।
এম ওমর ফারুক আজাদ:
১৯৭১ সালের ২৬মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের পক্ষ থেকে মেজর জিয়াউর রহমান কর্তৃক ঘোষণাকৃত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি রচিত হয় চট্টগ্রামের বৃহত্তম উপজেলা ফটিকছড়িতে। ফটিকছড়ির কৃতি সন্তান মির্জা আবু মনসুর (জোনাল কমান্ডার, সেক্টর-১, প্রাক্তন গণপরিষদ সদস্য ও প্রক্তন সভাপতি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি) পরামর্শক্রমে এ ঘোষণাপত্রের বিষয়ে ফটিকছড়িতে বসে সিদ্ধান্ত নেন। যা ওই উপজেলাবাসীর জন্য অত্যন্ত গৌরবের।
২০১২ সালের ২৬ মার্চ দৈনিক আজাদীর স্বাধীনতা দিবস সংখ্যায় বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা মির্জা আবু মনসুর এমপির “মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম : স্মৃতি বিস্মৃতি” শিরোনামে লিখেন,
আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে গঠিত মুক্তিযুদ্ধে যৌথ কমান্ড থেকে নির্বাচিত এমপি হিসেবে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় চট্টগ্রামে কর্মরত বাঙ্গালী সৈনিক,পুলিশ ও ইপিআর বাহিনীর সাথে যোগাযোগ করার। আমি তাৎক্ষনিকভাবে ইপিআর সেক্টর অধিনায়ক ক্যাপ্টেন রফিকের সাথে যোগাযোগ করে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা বেতারে প্রচারের জন্য অনুরোধ জানালে তিনি বলেন ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অনেক সিনিয়র কর্মকর্তা চট্টগ্রামে কর্মরত আছেন। তাদের কাউকে দিয়ে ঘোষণা প্রচার করলে গ্রহণযোগ্যতা আরো বহুগুনে বৃদ্ধি পাবে।
তারপর আমরা ক্যাপ্টেন চৌধুরী খালেকুজ্জামানের মাধ্যমে মেজর শওকতের সাথে যোগাযোগ করলে তিনিও জানান যে, তার সিনিয়র মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর ঘোষাণায় সাড়া দিয়ে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে ষোলশহর ২নং গেইটে অবস্থান করছেন। এরপর আমরা ২৬ মার্চ বিকেল সাড়ে ৪টায় ষোলশহর ২নং গেইটে মেজর জিয়াউর রহমানের সাথে দেখা করে তাকে একজন সৈনিক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা বেতারে পাঠ করার অনুরোধ করি এবং বলি যে, তিনি যদি এ ঘোষণা পাঠ করেন, তাহলে বহির্বিশ্বে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের গ্রহণযোগ্যতা বহুগুনে বৃদ্ধি লাভ করবে।
কিন্তু মেজর জিয়া জানি না কোন কারণে ও কোন মানসিকতার বশবর্তী হয়ে প্রথমে এ দায়িত্ব পালনে অস্বীকৃতি জানান। তখন আমরা এক প্রকার বাক্যিক বল প্রয়োগ করে তাকে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে নিয়ে যাই। সে সময় তার সাথে ক্যাপ্টেন অলি আহমদ, ক্যাপ্টেন সুবেদ আলী ভূঁইয়া, হারুর প্রমুখ ছিলেন।
বেতার কেন্দ্রে পৌঁছে তিনি কারো সাথে কোন প্রকার আলাপ আলোচনা না করে সন্ধ্যা ৭ টায় বেতার ঘোষণা দেন; I major ziaur rahman,do hereby declare the independence of Bangladesh. তার এ ঘোষণায় সারাবিশ্বে দেখা দেয় চরম বিভ্রান্তি। তার এহেন স্বকল্প ঘোষণায় আমরাও হতভম্ব হয়ে পড়ি। এ ব্যাপারে তাকে এহেন বিভ্রান্তিকর ঘটনা সৃষ্টির কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি নিজেকে বাঁচানোর জন্য ঘোষণার মুসাবিদা প্রস্তুত করে দিতে অনুরোধ জানান। তখন আওয়ামীলীগের দুই শীর্ষ নেতা এম.আর.সিদ্দিকী ও জহুর আহমদ চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারি যে, তারা দুজনেই তখন আগরতলায় অবস্থান করছেন। তখন আমরা নিরূপায় হয়ে যোগাযোগ করি এম আর সিদ্দিকীর শ্বশুর প্রখ্যাত শিল্পপতি এ.কে.খানের সাথে। জানতে পারি তখন তিনি ও আগরতলার পথে ফটিকছড়ির দৌলতপুরে অবস্থান করছেন। সেদিনই রাত দেড়টায় আমরা দৌলতপুরে পৌঁছে তার সাথে দেখা করি এবং আমাদের অনুরোধে অনুরুদ্ধ হয়ে তিনি নিম্ন মুসাবিদা তৈরি করে দেন। I,major ziaur rahman, on behalf of our great leader bangabandhu sheikh mujibur rahman do hereby the independence of Bangladesh. মেজর জিয়া পরদিন ২৭ মার্চ সকাল ১১ ঘটিকায় কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে এ ঘোষণা পাঠ করেন। এরপর, সেদিন আরো কয়েক দফা ৫ মিনিট পর পর এ ঘোষণা পাঠ করা হয়(যা রেকর্ডকৃত)।
স্বাধীনতা যুদ্ধে ফটিকছড়ি নানা কারনে অত্যান্ত গুরত্বপূর্ণ স্থান ছিল। তাই এ অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যও কম নয়। মির্জা আবু মনসুরও ফটিকছড়িরই সন্তান। বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে উপরে উল্লেখিত স্বাধীনতা ঘোষণাটি ফটিকছড়িতে লেখা হয়েছে বলে ফটিকছড়ি আরো বেশি গৌরবান্বিত।
আরও পড়ুন:
২৬ মার্চ : নতুন করে দেশ গড়ার শপথ নেওয়ার দিন
রক্তে রঞ্জিত স্বাধীনতা, এ জাতির অনন্য গৌরব