মানুষের কাজ (স্পিরিচুয়াল অনুগল্প)

প্রকাশিত: ৩:৪৯ অপরাহ্ণ, মার্চ ২, ২০১৯
ছবি: এনাইকিউ

সাইফ সিরাজ

শোনো জামিল, বাড়ি থেকে ঢাকা আসতে আসতে দশ হাজার টাকা খরচ করে ফেলেছো! আচ্ছা বলো তো কত কিলিমিটার পথ আর কত ঘনণ্টার জার্নি!

– বাবা, তিন শো কিলোমিটার। ছয় ঘণ্টার জার্নি।

– ঢাকায় তোমাকে থাকতে হবে কতদিন? কী কী কাজ করতে হবে জানা আছে?

– জ্বী বাবা, সামনের ছুটি আসতে তেত্রিশ দিন বাকি। মেস ভাড়া দিতে হবে। দু’টো টিউশন ফি দিতে হবে। তেত্রিশ দিনের খাবার খরচ দিতে হবে। সেই সঙ্গে পঁচিশ দিন ক্লাস হবে। আসা যাওয়ার ভাড়া মিটাতে হবে।

– সাকুল্যে কত খরচ তোমার?

– বারো হাজার পাঁচ শো তেতাল্লিশ টাকা।

– অথচ তুমি ছয় ঘণ্টায় দশ হাজার খরচ করেছো! বাকি বত্রিশ দিন আঠারো ঘণ্টা কীভাবে চলবে? আমি কোত্থেকে তোমাকে এতো টাকা দেবো? ছয় ঘণ্টায় দশ হাজার! মানে দৈনিক চল্লিশ হাজার! এই ক্ষুদ্র একটা হিসেব এবং কমন সেন্স যদি তোমার না থাকে তাহলে বাকি জীবন কীভাবে কাটাবে?

– বাবা কয়েকটা টাকাই তো! হয়ে গেছে। এক্সপেরিমেন্ট করতে গিয়ে খরচ হয়ে গেছে।

– কয়েকটা টাকা! কয়েকটা টাকা! স্বগতোক্তি করলেন আদিল সাহেব। সারা শরীরে রাগে কাঁপন ধরে গেছে তার।

– আচ্ছা বাবা ছয় হাজার বছরের তুলনায় ছয় ঘন্টা কত কতটুকু?

– এই প্রশ্ন কেন হঠাৎ? কথা অন্যদিকে নেওয়ার চেষ্টা! যতই কথার চাল চালো আমি তোমাকে আর টাকা দিচ্ছি না। মনে থাকে যেনো!

– আচ্ছা বা সেটা তখন দেখা যাবে। এখন আমার প্রশ্নের জবাবটা দাও না!

– ছয় হাজার বছরের তুলনায় ছয় ঘণ্টা তো ক্ষুদ্র।

– ছয় লক্ষ বছরের তুলনায়! – আরোও ক্ষুদ্র।

– ছয় কোটি বছরের তুলনায়!

– আরোও ক্ষুদ্র। যেন একটা চোখের পলক।

– অগুন্তি বছরের তুলনায়?

– একেবারেই নাথিং!

– এবার বলো তো! তোমার রুহ সৃষ্টি থেকে নিয়ে মায়ের পেট, পৃথিবী, কবর, হাশর পাড়ি দিয়ে জান্নাত বা জাহান্নামের অনন্ত সময়ের তুলনায় তোমার এই ষাট বছরের জীবন কতটুকু? – একেবারেই ক্ষুদ্র। একেবারেই নাথিং!

– দেখো বাবা! ছয় ঘণ্টায় দশ হাজার খরচ আমি করিনি। করেছে আমার বন্ধু। পুরোটা গল্প তুমি না শুনেই রেগে গেলে! অথচ তুমি! পৃথিবীর এই ক্ষুদ্র জীবনে সব খরচ করে ফেলছো! মেধা, প্রজ্ঞা, শক্তি, সম্পদ, জীবন, আয়ু প্রভৃতির সব খরচ করে ফেলছো! কখনও কি ভেবেছো এইটা ছয় ঘন্টার চেয়েও ক্ষুদ্র একটা জীবন তোমার! এই জীবনে তোমাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে অনন্ত যন্ত্রণাময় জাহান্নামের আগুন থেকে। এই ভাবনা কি আছে তোমার! বাবা এই ভাবনাটা জরুর ভাবতে হবে। টাকা পয়সা কিংবা পৃথিবীর সব কিছুর মালিক একজন।

আমরা কেবল এর সঙ্গে কানেক্ট হই আর ডিসকানেক্ট হই। এর বাইরে সবই আমাদের ব্যর্থ প্রচেষ্টা। সুতরাং কানেক্টিভিটিটা যেন সেই পরম একজন পর্যন্ত টানতে পারি সেই প্রচেষ্টাই মূলত মানুষের কাজ! আদিল সাহেব নিশ্চল পাথরের মতো বসে থাকেন। ছেলের দিকে তাকিয়ে নিজের পুরোটা জীবনের ভেতরে ঘুরতে থাকেন আর দেখতে থাকেন তার স্পিরিচুয়াল ব্যর্থতা! ইতোমধ্যেই আসরের আযান ভেসে আসে মিনার থেকে। আদিল সাহেব এই আযানের সুরকে নতুন মাত্রায় আবিষ্কার করেন। অচেনা ভয়ে তার মনোজগতে সৃষ্টি হয় নতুন কাঁপন…

মন্তব্য করুন