ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ : কী বলছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম

প্রকাশিত: ৩:০৩ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৯

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে পুলয়ামায় শ্রীনগর-জম্মু জাতীয় সড়কের ওপর ভারতের সিআরপিএফের জওয়ানদের বহনকারী দুটি গাড়ি লক্ষ্য করে চালানো আত্মঘাতি হামলায় ভারতের প্রায় ৪০ জওয়ান নিহত হয়। হামলার দায় স্বীকার করে কাশ্মীরে স্বাধীনতা আন্দোলনরত জঈশ-ই-মুহাম্মদ সংগঠন বিবৃতি দেয়ার পর হামলার সাথে পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতা টেনে ভারত ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখায়। সে হামলার জবাবে ২৬ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার ভোর রাতে পাকিস্তানের সিমান্তরেখা অতিক্রম করে বালাকোটে হামলা চালায় ভারতীয় সৈন্যবাহিনী। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের সূত্র অনুসারে এ হামলায় প্রায় তিনশ লোক নিহত হয়েছে কিন্তু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এবং পাকিস্তান এ হামলায় নিহত সংখ্যা এবং হামলার তীব্রতা অনেকাংশেই অস্বীকার করছে।

আরও পড়ুন : পাকিস্তানে ভারতের হামলায় তিনশ নিহতের দাবি

দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিবেশী দেশ পরস্পর আর কথায় থেমে নেই। বালাকোট হামলার জবাবে পাকিস্তানের সৈন্যবাহিনীও কড়া আক্রমনে যাবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এসব বিবেচনায় দুই পরমানু শক্তিধর দেশের মধ্যে কী তবে চূড়ান্ত যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হবে? আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এ নিয়ে চলছে চুলচেড়া বিশ্লেষণ।

গালফ নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতীয় হামলার জবাবে তাৎক্ষণিক সামরিক হামলা এখন করতে চাইছে না পাকিস্তান। মঙ্গলবার দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (এনএসসি) বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। জঙ্গি আস্তানা ধ্বংসের যে দাবি ভারত তুলেছে, বৈঠকে তা এককথায় নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। এনএসসি বলছে, ভারত এলওসি লঙ্ঘনের যে ঘটনা ঘটিয়েছে, তা বিশ্বসম্প্রদায়ের কাছে উপস্থাপন করবে পাকিস্তান। পাকিস্তান ‘ভারতের দায়িত্বজ্ঞানহীন নীতি’ সম্পর্কে বিশ্বকে জানাতে চায়। এক বিবৃতিতে এনএসসি বলেছে, ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির হিস্যা হিসেবে এই হামলা করা হয়েছে। নির্বাচনী হাওয়া নিজেদের দিকে নিতেই মোদি সরকার এমন কাজ করেছে।

বিবিসি বলছে, লাইন অব কন্ট্রোল থেকে পাকিস্তানের ৫০ মাইল ভেতরে বালাকোটের অবস্থান। বিশ্লেষকেরা বলছেন, পাকিস্তানের সীমানার ভেতরে ভারতীয় বিমানবাহিনীর আক্রমণ অত্যন্ত গুরুত্ববহ। এর আগে এই দুই দেশের মধ্যে যতবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো থেকে সর্বশেষ দুটি ঘটনা একেবারেই আলাদা। ২০১৬ সালে যখন মোদি সরকার সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালানোর দাবি করেছিল, সেটিও হয়েছিল পাকিস্তানের সীমানার মধ্যে। এবার কয়েক ধাপ এগিয়ে সরাসরি বিমান আক্রমণও চালাল ভারত। একটি দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রশ্নে এ ধরনের হামলা একটি বড়সড় হুমকি।

ভারতের দাবি নিহত ৩০০ : রয়টার্স বলছে একজন আহত

দিল্লিভিত্তিক সংস্থা অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের গবেষক খালিদ শাহ দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে চলা উত্তেজক পরিস্থিতিতে এই হামলা পুরো ঘটনার গতিপথ পাল্টে দিতে পারে।’

ওদিকে পাকিস্তানের সিনেটর ও সাবেক রাষ্ট্রদূত শেরি রহমান গার্ডিয়ানকে বলে দিয়েছেন, নির্বাচনকে উপলক্ষ হিসেবে নিয়েই নরেন্দ্র মোদি এমন হামলায় অনুমোদন দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এই হামলার মধ্য দিয়ে ভারত তার জনগণকে একটি বার্তা দিয়েছে: এটি তাদের নির্বাচনের জন্য, ভোটারদের জন্য।’

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্ট অনলাইনের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, সম্প্রতি অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাঁর দল ভারতীয় জনতা পার্টিও (বিজেপি) কিছুটা বেকায়দায় ছিল। তবে বিমান হামলার ঘটনার পর ফের সুবিধাজনক অবস্থায় পৌঁছে গেছে মোদি ও তাঁর দল। এখন আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে জাতীয়তাবাদের ট্রাম্প কার্ড ব্যবহারের সুবিধা পাবেন তাঁরা। একই সঙ্গে বিরোধীদের কোণঠাসা করতে পুলওয়ামার আত্মঘাতী হামলার ‘শোধ’ নেওয়ার কৃতিত্বও দাবি করতে পারবেন।

নিউইয়র্ক টাইমসের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ভারত-পাকিস্তানের পুরো মাত্রার যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা খুবই কম। দুটি দেশই আদতে এটি চায় না। কারণ ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই পারমাণবিক শক্তিধর দেশ এবং তাদের মধ্যকার পরিপূর্ণ যুদ্ধ পুরো বিশ্বকে সংকটে ফেলে দিতে পারে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের মতো পশ্চিমা শক্তিধর দেশগুলোও ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ চায় না। মার্কিনরা এরই মধ্যে দুই পক্ষকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

পাকিস্তানের গবেষক সংস্থা জিন্নাহ ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ গবেষক জাহিদ হুসেইন বলছেন, বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ভারতের প্রভাব ক্রমশ বাড়ছে। সুতরাং ভারতের পক্ষে যে কোনো বিপজ্জনক নীতি গ্রহণ করা এবং পরিস্থিতি চূড়ান্ত খারাপ হওয়ার আগ পর্যন্ত তা চালিয়ে যাওয়া সহজ। কিন্তু এ ধরনের বেপরোয়া কর্মকাণ্ড যেকোনো সময় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে। তখন কিন্তু আর পিছু হটার উপায় রইবে না।

কাশ্মীর নিয়ে সেই যে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ঝগড়া শুরু হলো, এখনো তা চলছে। ১৯৬৫ সালে, ১৯৭১ সালো ফের এই ইস্যুতেই যুদ্ধে জড়ায় দুটি দেশ। এরপর সময়ভেদে বিভিন্ন ইস্যুতে সংঘাতে জড়িয়েছে ভারত-পাকিস্তান। ভারত সব সময়ই পাকিস্তানের দিকে সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার অভিযোগ তুললেও পাকিস্তান তা অস্বীকার করে আসছে।

শেষ পর্যন্ত বর্তমান সময়ে দুই দেশের এমন পরিস্থিতিতে শেষ ফলাফল কী হবে তা জানতে অপেক্ষা করা ছাড়া গতি নেই।

আরও পড়ুন : 

কাশ্মীরের স্বাধীনতা হবে ভারত স্বাধীনতার স্বপ্নরেখা

ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্ব : তৃতীয় চোখের কিছু হিসাব-নিকাশ

 

মন্তব্য করুন