
ভারত পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধাবস্থা প্রকট আকার ধারণ করেছে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দেশের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে একের পর এক উসকানীমূলক বার্তা প্রকাশ করা হচ্ছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক কথা বলছেন তো তা খণ্ডন করে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আরো দুই কথা শুনিয়ে দিচ্ছেন।
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে স্বাধীনতাকামী সংগঠন জইশ-ই-মুহাম্মদের যোদ্ধারা গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে পুলয়ামায় শ্রীনগর-জম্মু জাতীয় সড়কের ওপর সিআরপিএফের জওয়ানদের বহনকারী দুটি গাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালায়। এতে ভারতের প্রায় ৪০ জওয়ান নিহত হয়। হামলার দায় স্বীকার করে কাশ্মীরে স্বাধীনতা আন্দোলনরত জঈশ-ই-মুহাম্মদ সংগঠন বিবৃতি দেয়ার পর হামলার সাথে পাকিস্তানের সংশ্লিষ্ঠতা টেনে ভারত ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখায়।
সে প্রতিক্রিয়ার অংশ হিসেবে ২৬ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার ভোর রাতে পাকিস্তানের সিমান্তরেখা অতিক্রম করে বালাকোটে হামলা চালায় ভারতীয় সৈন্যবাহিনী।
আরও পড়ুন : সেনাবাহিনীকে পাল্টা আক্রমণের ছাড়পত্র দিলেন মোদি
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের সূত্র অনুসারে এ হামলায় প্রায় তিনশ লোক নিহত হয়েছে কিন্তু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এবং পাকিস্তান এ হামলায় নিহত সংখ্যা এবং হামলার তীব্রতা অনেকাংশেই অস্বীকার করছে।
মঙ্গলবার সকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল আসিফ গফুর টুইট করে জানিয়েছিলেন, তাদের যুদ্ধবিমান ভারতীয় জেটগুলোকে তাড়া করার পর ‘বালাকোটের কাছে’ তারা নিজেদের পেলোড ফেলে পালিয়ে গেছে।
এ ঘটনার বিবরণ দিয়ে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে কেবল একজন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে বালাকোটের এক বাসিন্দা। বালাকোট একটি ছোট শহর। এরই পাশের ছোট একটি গ্রামের বাসিন্দাদের তথ্য দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। নাম প্রকাশ না করার শর্তে হামলা হওয়া ওই এলাকার লোকজন জানিয়েছে ওই একজন বাদে এতে আর কোনো হতাহতের খবর তারা জানে না।

রয়টার্সের সংবাদ
গ্রামের নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক অপর এক বাসিন্দা রয়টার্সকে জানান, এলাকাটিতে বেশ কয়েক বছর ধরে সশস্ত্র গোষ্ঠীর উপস্থিতি রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি এই এলাকাতেই থাকি। আমি জানি এখানে একটি প্রশিক্ষণ শিবির আছে, যেটি জইশ-ই-মোহাম্মদ চালায়। কয়েক বছর আগে প্রশিক্ষণ শিবিরটি মাদ্রাসায় রূপ নেয়। তবে স্থানীয়দের মাদ্রাসাটির ধারেকাছে যেতে দেওয়া হয় না। সেখানে বেশকিছু শিক্ষার্থী সব সময় থাকে।
গ্রামটি বিবদমান ভারতীয় সীমান্ত থেকে নয়নাভিরাম কাগান ভ্যালির দিকে যেতে ৪০ কিলোমিটার অভ্যন্তরে খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে অবস্থিত। ২০০৫ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে এখানকার বহু শহরের সাথে এই বালাকোটও বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে।
মঙ্গলবার সকালে গ্রামবাসী দেখতে পায়, ভারতীয় হামলা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে এবং মাদ্রাসাটি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে বোমার বিস্ফোরণ ঘটেছে।
গ্রামের ঠিক যেখানটায় বোমা বিস্ফোরণ ঘটেছে সেই ‘জাবা টপ’ এলাকার ২৫ বছর বয়সি মোহাম্মদ আজমল জানান, তিনি ভোররাত ৩টার দিকে পরপর চারবার বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা বুঝিনি যে আসলে কী হচ্ছে। সকালে আমরা টের পাই যে এখানে হামলা চালানো হয়েছে। আমরা সকালে সেখানে গিয়ে চারটি গর্ত দেখতে পাই। আর কিছু গাছ মাটিতে পড়ে রয়েছে এবং একটি বাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে।’
৪৬ বছর বয়সি কৃষক ফিদা হুসেন শাহ বলেন, ‘গ্রামের লোকেরা স্প্লিন্টার পেয়েছেন। তবে কেবল এক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, যিনি তার ঘরে ঘুমাচ্ছিলেন। বিস্ফোরিত বোমার স্প্লিন্টার ওই ব্যক্তির ঘরের জানালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ে।’ তবে কোথাও ৩০০ ব্যক্তি নিহত হওয়ার খবর তারা জানে না।
আরও পড়ুন —
ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্ব : তৃতীয় চোখের কিছু হিসাব-নিকাশ
কাশ্মিরের স্বাধীনতা হবে ভারত স্বাধীনতার স্বপ্নরেখা

