‘আনতারা’র আয়োজনে কবি আল মাহমুদ

প্রকাশিত: ৪:৪২ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৯

রাকিবুল হাসান: বিকেল তিনটা বিশ। তোপখানা রোডের শিশুকল্যান মিলনায়তন। চেয়ারগুলো প্রায় ভরে এসেছে। সবার মাথায় টুপি, গায়ে পাঞ্জাবি। টুপির মিছিলে উচ্চকিত হবে বাংলাভাষার অনিবার্য স্তম্ভ আল মাহমুদের কবিতার যিকির। গতকাল রোববার রৌদ্রজ্জ্বল বিকেলে কল্যান চিন্তার কাগজ আনতারার উদ্যোগে আয়োজিত হয় আল মাহমুদ স্মরণে আলোচনাসভা। বিকেল তিনটায় শুরু হয়ে শেষ হয় রাত আটটা ত্রিশে। দীর্ঘ এই সময়ে আল মাহমুদের সৃষ্টি ও কর্ম নিয়ে আলোচনা করেন বিদগ্ধ সব মানুষেরা।

কোরআন তেলাওয়াত ও হামদ নাতের পর মনযূরুল হকের সংক্ষিপ্ত আলোচনা, তারপর স্বাগত ভাষণ দেন ইসলামি পয়গামের সম্পাদক মনযূর আহমাদ। তিনি তুলে ধরেন আল মাহমুদের কবিতায় সারল্যের কথা। সৌন্দর্যের কথা। তিনি বলেন, ‘বড় বড় কবিদের সঙ্গে পরিচিত হতে অানুষ্ঠানিকতার প্রয়োজন হয়। কিন্তু আল মাহমুদ ব্যতিক্রম। তার সঙ্গে পরিচিত হতে কোন আনুষ্ঠানিকতার কোন প্রয়োজন হতো না।’ এরপর আল মাহমুদের কবিতায় ইসলামি ভাবধারা নিয়ে আলোচনা করেন ইফতেখার জামিল, তুহিন খান, রুবায়েত হাসান, আবদুস সাত্তার আইনি, আলী হাসান তৈয়ব, মিরাজ রাহমান, হারূন ইযহার। মাগরীবের পর কলরবের শিশু শিল্পীদের হামদ নাতের মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব। তারপর মঞ্চে উঠেন দৈনিক ইনকিলাবের সহকারী সম্পাদক উবায়দুর রহমান খান নদভী। তার সারগর্ভ আলোচনায়, সহজাত রসবোধে জমে উঠে আয়োজন।

প্রায় দেড় ঘণ্টা শ্রোতাদের আটকে রাখেন তিনি। আল মাহমুদের শ্রেষ্ঠত্ব দারুন উজ্জ্বলতায় ফুটে উঠে তার আলেচনায়। তারপর মঞ্চে আসেন মাওলানা যাইনুল আবিদীন। আল মাহমুদের উচ্চতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘জলবেশ্যা’র মতো, ‘পানকৌড়ির রক্ত’র মতো গল্প, এতটা যুতসই শব্দে, এতটা যুতসই উপমায়, আরেকটি গল্প আপনি দেখাতে পারবেন না।’ সবশেষে আল মাহমুদের জন্য বেহেশত কামনা করে তিনি তার বক্তব্য শেষ করেন। অনুষ্ঠানের মাঝে আগত অতিথিদের আপ্যায়নও করা হয়।

সবশেষে মঞ্চে উঠেন ষাটের দশকের কবি আল মুজাহিদী। বয়সের ন্যুব্জ, তবুও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বললেন। বললেন,’আল মাহমুদের সঙ্গে আমার ৫০ বছরের সম্পর্ক। এই সম্পর্ক কখনো পানসে হয় নি। কত স্মৃতি, কত কথা!” আল মাহমুদের সঙ্গে যাপিত জীবনের স্মৃতিচারণ করলেন আল মুজাহিদী। তারপর তার কণ্ঠে যেন আগুন ধরে গেলো। সেই আগুনকণ্ঠে বললেন, শহীদ মিনার সবার জন্য উন্মুক্ত করা হোক। আমি ভাষা সৈনিক হিসেবে আবেদন করছি। আল মাহমুদকে শহীদ মিনারে নিতে দেয় নি। এরচে দুঃখের আর কিছু হতে পারে না।’

অনুষ্ঠান শেষ হয় মাওলানাজ জুবা্ইর আহমদ আশরাফের দোয়ার মাধ্যমে। এতক্ষণ আল মাহমুদ মুখর ছিলো হল। ধীরে ধীরে নিস্তব্ধতা নেমে আসে সেই হলজুড়ে। যখন বেরিয়ে আসছে সবাই, মঞ্চের টানানো ব্যানার থেকে যেন আল মাহমুদ উচ্চারণ করেন মহাশব্দে–আমি যখন দাঁড়িয়ে থাকি, আমি সবাইকে ছাড়িয়ে যাই।’ আল মাহমুদ সবাইকে ছাড়িয়ে গিয়েছেন। এই কথা সত্য। কল্যান চিন্তার কাগজ আনতারা তারই উচ্চকিত ঘোষণা দিলো আবার।

মন্তব্য করুন