

ইউসুফ পিয়াস:
পাবলিক ভয়েস
“দিনে মশা রাতেও মশা ঢাকাবাসীর করুণ দশা’’
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পাল্লাদিয়ে বাড়া শুরু করছে মশার উপদ্রব। আর এই মশার অত্যাচরে অসহায় হয়ে পড়েছে নগরের মানুষের জনজীবন। নালা-নর্দমায় ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ছে মশা বাড়ছে যন্ত্রণা। । মহানগরীর অনেক এলাকায় শুধু রাত নয় দিনেও মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হয়। নাহয় নিস্তার পাওয়া যায়না মশার হাত থেকে।
রাজধানীতে সূর্য ডোবার পর যেকোনো খোলা স্থান অথবা রাস্তায় কিংবা চায়ের স্টলে দাঁড়ালেই মাথার ওপর ঝাঁক বেঁধে উড়তে থাকে মশা। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে তা আরো ভয়ানক রূপ নেয় মশার মিছিল। দিনে কিংবা রাত ঘরে আর বাইরে কোন সময় রেহায় পাচ্ছেনা নগরের বাসিন্দারা।
নগরের যেসব এলাকায় মশার উপদ্রব বেশি তার মধ্যে অন্যতম হলো ঢাকার প্রবেশপথ যাত্রাবড়ি, ও ডেমরা এলাকার বাসিন্দারা। এদিকে মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা করতে নাগরিকদের সচেতন করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন বলে জানান ঢাক দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। তবে সিটি করপোরেশনের কাজের কোন সুফল পাচ্ছেনা বলে জানান এ এলাকার মানুষজন।
বেশ কিছু স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকায় এমন কোনো জায়গা নেই যেটিকে মশকমুক্ত এলাকা বলা যায়। বেশির ভাগ এলাকায়ই ডোবা, নালা ও নির্মাণাধীন ভবনের রিজার্ভারে দেখা যায় ঝাঁকে ঝাঁকে মশা উড়তে।
বহুতল ভবনগুলোর মাঝখানের ফাঁকা জায়গায় আর বিভিন্ন স্থানে আবর্জনার স্তূূপে মশার বংশ বৃদ্ধির চিত্র স্পষ্ট। সংশ্লিষ্ট সব এলাকার বাসিন্দারা জানায়, সিটি করপোরেশনের মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ও উদ্যোগের কথা বিভিন্ন সময় শোনা গেলেও বাস্তবে কর্মীদের দেখা মেলে না। অনেক স্থানেই দেখা গেছে মশার অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে বহুতল ভবনের তিন-চারতলা পর্যন্ত ফ্ল্যাটে জানালা ও বারান্দায় নেট লাগানো।
যাত্রাবাড়ি মাতুয়ালের বাসিন্দা আব্দুস সোবহান মিয়া জানান ‘বাসার ছয়তলায় থাকি, কিন্তু মশার যন্ত্রণা থেকে নিস্তার নাই। সিটি করপোরেশন কাজ করে বললেও সে কাজের ফল আমরা পাচ্ছি না। প্রতিনিয়ত বাড়ছে মশার যন্ত্রণা । তিনি জানান এভাবে জীবন চলা কষ্টকর।
রায়েরবাগের এক বাসিন্দা জানান, ‘বদ্ধ জলাশয়সহ মশা জন্মানোর আদর্শ অনেক জায়গা রয়েছে এলাকায়। সেগুলোর দিকে নজর দিচ্ছে না সিটি করপোরেশন। মশক নিধন অভিযান কবে কোথায় তারা করে সেটি বোঝা দায়।
এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিসেম্বর থেকে মার্চ কিউলেক্স মশার প্রজনন মৌসুম। প্রতি বছরের এ সময় প্রায় একই চিত্র দেখা যায়। মশার প্রজননস্থলগুলো পরিষ্কার করে এ উপদ্রব কমিয়ে আনা সম্ভব। অথচ সেটা হচ্ছে না কেন?
জানতে চাইলে দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, আমরা আগের ওষুধই ব্যবহার করছি। যেসব ওষুধ ইমপোর্ট করা আছে সেগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে। নতুন ওষুধ এখনও আসেনি।আর মশার ওষুধ; কিন্তু আমরা টেস্ট করি না। এই কাজটা করে থাকে আইইডিসিআর, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারের প্লান্ট প্রটেকশন। তারা যে ওষুধ সার্টিফাইড করে আমরা সেটাই ব্যবহার করি। বাতাস না থাকলে কিউলেক্স মশা একটু বাড়ে। মশা আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এরপরেও আমরা বিশেষ ক্র্যাশ প্রোগ্রাম হাতে নিচ্ছি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় মশার ওষুধের কার্যকারিতা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন সংস্থাটির একজন কাউন্সিলর। ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে বিশেষ নজর দেওয়ার জন্য মেয়রের কাছে লিখিত আবেদনও করেছেন। তার দাবি আগে তার ওয়ার্ডের মানুষ মশারি ছাড়া রাত কাটাত। এখন মশার ওষুধেও কাজ হচ্ছে না।
এদিকে মশা বাড়লেও ডিএসসিসি মশা নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত কর্মী কমিয়েছে। সংস্থার বিভিন্ন অঞ্চলের ওয়ার্ডে নিয়োজিত নির্দিষ্ট সংখ্যক কর্মী রেখে বাকিদের সচিব দফতরে বদলি করা হয়েছে। ডেঙ্গুর এই মৌসুমে কর্মী কমানোকে চরম অবহেলা হিসেবে দেখছেন কীটতত্ত্ববিদ ও নাগরিকরা। তারা বলছেন, যেখানে অর্ধেকের চেয়েও কম জনবল নিয়ে কাজ করছে সিটি কর্পোরেশন, সেখানে কর্মী কমানো হয়েছে।
ডিএসসিসির স্বাস্থ্যবিভাগ সূত্র জানিয়েছে, সংস্থাটির প্রতিটি ওয়ার্ডে ১৩ থেকে ১৮ জন করে কর্মী রয়েছে। এ থেকে ৩ থেকে ৭ জন করে কর্মী কমিয়ে সচিব দফতরে বদলি করা হয়। সবকটি ওয়ার্ড থেকে প্রায় ৩০০ জন কর্মীকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে বিভিন্ন অঞ্চলে অফিস সহকারী হিসেবে পদায়ন করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, ‘অধিকাংশ ওয়ার্ডে অতিরিক্ত জনবল থাকায় তাদের প্রত্যাহার করে ভিন্ন কাজে খাটাচ্ছি।’ অথচ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মশক নিধনে ওয়ার্ড পর্যায়ে সিটি কর্পোরেশনের যে জনবল রয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল।
বিশিষ্ট কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণে সিটি কর্পোরেশনকে সমন্বিতভাবে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এক জায়গায় যদি ওষুধ দেওয়া হয় নির্দিষ্ট সময় পর সেই জায়গায় আবার ওষুধ দিতে হবে। এক জায়গায় দিলাম, আরেক জায়গায় দিলাম না তা হলে চলবে না।
তিনি আরো বলেন, একেকটি ওয়ার্ডকে ৮-১০টি সেক্টরে ভাগ করে প্রতি সেক্টরে কমপক্ষে ৪ জন করে জনবল রাখতে বলেছি। এক্ষেত্রে একটি সেক্টরে একজন লারভিসাইডিং, একজন অ্যাডাল্টিসাইডিং এবং একজন পরিস্থিতি কতটা উন্নতি বা অবনতি হয়েছে তা দেখভাল করবে। এলাকার নাগরিকদের সঙ্গে সম্পর্ক বা যোগাযোগ রাখবে আরেকজন। যেন তারাও মশক নিয়ন্ত্রণকাজে যুক্ত থাকতে পারে। এ প্রক্রিয়া অবলম্বন করলে মশার উৎপাদনস্থল টিকতে পারবে না। এতে প্রতিটি ওয়ার্ডে কমপক্ষে ৩২ থেকে ৪০ জন লোক লাগবে। কিন্তু সেখানে আছে ১২ থেকে ১৩ জন।
ওয়াইপি/পাবলিক ভয়েস