

একদিকে পাকিস্তান, অন্যদিকে চীন- দুই সীমান্তেই স্বস্তিতে নেই ভারত। পাকিস্তানকে কখনও কখনও চাপে রাখা গেলেও চীনকে আক্ষরিক অর্থে মোকাবেলা করতে পারছেন না ভারতীয় সেনারা। এরসঙ্গে যোগ হয়েছে অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ মোকাবেলা।
সন্ত্রাসবাদের পরিধি বাড়ায় বাড়ছে অভিযানও। সব মিলিয়ে ক্লান্ত ভারতীয় সেনারা। এ ক্লান্তি রূপ নিয়েছে মানসিক সমস্যায়। সমীক্ষায় উঠে এসেছে, মানসিক চাপ ও অবসাদ তৈরি হওয়ায় ভারতীয় সেনাদের আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে।
ইউনাইটেড সার্ভিস ইন্সটিটিউট অব ইন্ডিয়া (ইউএসআই)-এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো কর্নেল এ কে মুর ২০১৯-২০২০ সালে এ নিয়ে একটি সমীক্ষা চালান। ইউএসআই-এর ওয়েবসাইটে সম্প্রতি এ সমীক্ষা প্রকাশ করা হয়।
সমীক্ষায় বলা হয়, প্রচণ্ড মানসিক চাপের মধ্যে থাকা এসব সেনাসদস্য অনেক সময় আত্মহত্যা করছেন। কখনও পরিবারের সদস্যকে হত্যা করছেন।
কখনও বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনায় জড়িয়ে পড়ছেন। প্রতি বছর শত্রুর হামলায় যত না সেনাসদস্য মারা যাচ্ছেন, তার চেয়ে বেশি মারা যাচ্ছেন মানসিক চাপের কারণে। এটা দেশটির সেনাবাহিনীর জন্য জটিল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত দুই দশকে সেনাসদস্যদের মধ্যে মানসিক চাপ তৈরির হার বেড়েছে। যারা বিভিন্ন ধরনের অভিযানে অংশ নিয়েছেন শুধু তারাই নন, যারা অভিযানে অংশ নেননি, তাদেরও অনেকে এ সমস্যায় ভুগছেন।
বর্তমানে সেনাবাহিনীর মোট সদস্যের অর্ধেকেরও বেশি মানসিক চাপে ভুগছেন বলে সমীক্ষায় বলা হয়। সেনা সদস্যদের এ মানসিক সমস্যা দূর করতে গত ১৫ বছরে ভারতীয় সেনাবাহিনী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, সেনাবাহিনীর যেসব ইউনিট ও উপ-ইউনিটের সদস্যরা মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছেন, সেখানে শৃঙ্খলা না মানার প্রবণতা, প্রশিক্ষণ নিয়ে অসন্তোষ, সরঞ্জামের অপর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণ ও মনোবল কমে যাওয়া ইত্যাদি কারণে যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ ও অভিযানের পারফরমেন্সে বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
সমীক্ষা প্রতিবেদনে মানসিক চাপ সৃষ্টির যেসব কারণ উল্লেখ করা হয়েছে, এর মধ্যে রয়েছে, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নেতৃত্বের মানের ঘাটতি, অঙ্গিকারের ভারি বোঝা, সম্পদের অপর্যাপ্ততা, পদোন্নতি ও পোস্টিং দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার অভাব, বাসস্থানের সংকট ও ছুটি মঞ্জুর না করা ইত্যাদি।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, যে সমস্যাগুলোর কারণে জুনিয়র কমিশনড অফিসার ও অন্যান্য র্যাঙ্কের কর্মকর্তারা মানসিক চাপের মধ্যে পড়েন, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, ছুটি না দেওয়া বা ছুটি মঞ্জুরে অহেতুক বিলম্ব, মাত্রাতিরিক্ত প্রশিক্ষণ বা অন্য কাজে জড়িত করে রাখা, বাসস্থানের সমস্যা, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হওয়া, মর্যাদার অভাব, মোবাইল ফোন ব্যবহারে মাত্রাতিরিক্ত বিধিনিষেধ আরোপ, বিনোদন সুবিধার অভাব এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও অধঃস্তনদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব।