

ইসমাঈল আযহার
পাবলিক ভয়েস
২০২০ সালে বহুসংখ্যক আলেমে দ্বীন হারিয়েছে বাংলাদেশ। এ ধর্মপ্রচারকগণ যুগ যুগ ধরে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন মানুষের কাছে। তারা শান্তির বাণী প্রচার করেছেন। এক বছরে অনেক আলেমে দ্বীন পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। তাদের এ শূন্যতা কখনোই পূরণ হওয়ার নয়। ২০২০ সালে যেসব আলেমদের হারিয়েছে বাংলাদেশ (পর্ব-২)
আল্লামা আশরাফ আলী রহ
জামিয়া শারঈয়্যাহ মালিবাগের প্রিন্সিপাল ও শায়খুল হাদিস আল্লামা আশরাফ আলী রহ. ৩১ ডিসেম্বর (সোমবার) রাজধানীর আসগর আলী হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় তার ইন্তিকাল করেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
মাওলানা আশরাফ আলী ছিলেন দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমদের একজন। তিনি বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের (বেফাক) সিনিয়র সহ-সভাপতি, জামিয়া শারঈয়্যাহ মালিবাগের প্রিন্সিপাল ও শায়খুল হাদিস এবং কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ সংস্থা আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশের কো-চেয়ারম্যান পদে আসীন ছিলেন।
মাওলানা যুবায়ের আহমদ আনসারী
প্রখ্যাত বক্তা ও মুফাসসিরে কোরআন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র সহ-সভাপতি আল্লামা জুবায়ের আহমদ আনসারী হাফেজ মাওলানা যুবায়ের আহমদ আনসারী ১৭ এপ্রিল শুক্রবার বাক্ষ্মণবাড়িয়া নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন। (ইন্না লিল্লাহি… রাজিউন)। তিনি দীর্ঘদিন ধরে দুরারোগ্য ক্যন্সারে আক্রান্ত ছিলেন । ক্যান্সার ছাড়াও তার শারিরীক অন্য জটিলতা ছিল।
দীর্ঘ তিন যুগের বেশি সময় ধরে তিনি দেশ-বিদেশে ওয়াজ করেছেন। আকর্ষণীয় কোরআন তেলাওয়াত ও কোরআনের তাফসিরের জন্য তিনি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। জামিয়া রাহমানিয়া বেড়তলা, সরাইল মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপালের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি প্রচুর মসজিদ-মাদরাসা প্রতিষ্ঠা ও সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
মাওলানা মুহাম্মদ ইদ্রিস
জামিয়া আরাবিয়া নাছিরুল উলুম নাজিরহাট বড় মাদরাসার মোহতামিম মাওলানা মুহাম্মদ ইদ্রিস ২৮ মে (বৃহস্পতিবার) ইন্তেকাল করেন। মাওলানা মুহাম্মদ ইদ্রিস রহ. একজন মুখলিছ, আল্লাহ ওয়ালা ও বুজুর্গ আলেম ছিলেন। প্রয়োজন থাকা সত্বেও জীবনের শেষ দুই বছর তিনি মাদরাসা থেকে কোন বেতন ভাতা গ্রহণ করেননি।
তিনি ছিলেন প্রথিতযশা আলেম। একজন আদর্শ উস্তাদ। হাদীসের সর্বোচ্চ কিতাব বুখারী শরীফ সহ আরো বহু কিতাবের পাঠদান করতেন তিনি। দরস-তাদরীস পাশাপাশি মুসলিম উম্মাহর ঈমান আকিদা রক্ষায় ওয়াজ-নসিহতের ময়দানেও অসাধারণ খেদমত করে গেছেন। তিনি সর্বদা হকের উপর অটল-অবিচল ছিলেন।
মাওলানা ইসহাক নুর
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ও ইসলামী ঐক্যজোটের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা ইসহাক নুর ২৩ মার্চ (সোমবার) বেলা ১টার দিকে চট্টগ্রামের স্থানীয় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিয়ুন।
মাওলানা ইসহাক নুর হেফাজত ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফির মেয়ের জামাতা। তিনি রাঙ্গুনিয়া জামেয়া মেহেরিয়া মাদরাসার পরিচালক ছিলেন। বিদগ্ধ এ আলেম আরবি ও উর্দু ভাষায় বিশেষ পাণ্ডিত্যের অধিকারী ছিলেন।
মাওলানা আবদুর রহিম বুখারি
আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারীস বাংলাদেশে-এর পরিদর্শক ও কক্সবাজারের চকরিয়া ইমাম বোখারী মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আবদুর রহিম বুখারি ১৬ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) বেলা ২ টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
মাওলানা আবদুর রহিম বুখারি লোহাগড়া উপজেলার রাজঘাটা হোসাইনিয়া মাদরাসায় প্রাথমিক পড়াশোনা শেষে জামিয়া পটিয়ায় উচ্চ শিক্ষা লাভ করেন। পরে ঢাকা লালবাগ ও দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে ডাবল দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করেন। তিনি জামেয়া ইসলামিয়া পটিয়ার মুহতামিম মুফতী আব্দুল হালীম বোখারীর ছোটভাই।
আল্লামা খলিলুর রহমান হামিদী
আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির ও জামিয়া লুৎফিয়া আনোয়ারুল উলুম বরুণা মৌলভীবাজার’র মুহতামিম, উপমহাদেশের প্রখ্যাত শায়খুল হাদিস আল্লামা শায়খ খলিলুর রহমান হামিদী পীর সাহেব ৮ অক্টোবর ( বৃহস্পতিবার) রাত পৌনে ২টায় মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।
দীর্ঘদিন এ্যাজমার কারণে ফুসফুসের সমস্যায় আক্রান্ত, ডায়াবেটিস এবং হাই প্রেসারসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। তিনি শায়খুল হাদিস আল্লামা খলিলুর রহমান হামিদী আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলামের আমির, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ (বেফাকের) সহ সভাপতিরও দায়িত্ব পালন করেছেন।
আল্লামা আব্দুল মুমিন শায়খে ইমামবাড়ি
উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা শায়খুল ইসলাম হজরত মাওলানা সায়্যিদ হোসাইন আহমদ মাদানি (রহ.)-এর খলিফা ও বাংলাদেশের প্রাচীন ইসলামি রাজনৈতিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি, শায়খুল হাদিস আল্লামা আব্দুল মুমিন শায়খে ইমামবাড়ি ৭ এপ্রিল (মঙ্গলবার) হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় নিজ বাড়িতে বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল আনুমানিক ১০০ বছর। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ৬ ছেলে ও ২ মেয়ের পিতা ছিলেন। তার জীবদ্দশায় ৬ ছেলের ২ জন ইন্তেকাল করেছেন। এরমধ্যে একজন পাকিস্তানে শীয়াদের হামলায় শহীদ হন। মৃত্যুকালে স্ত্রী, ৪ ছেলে ২ মেয়েসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন, ভক্ত-গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
আই.এ/