আলেমদের কটাক্ষ করে পুলিশ সুপারের সহিংস বক্তব্য, ভিডিও ভাইরাল

প্রকাশিত: ৬:৪৯ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৩, ২০২০

ইসমাঈল আযহার
পাবলিক ভয়েস


বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় কুষ্টিয়ার কুমারখালীর কয়া মহাবিদ্যালয়ে কুমারখালী নাগরিক পরিষদের ব্যানারে সমাবেশ হয়েছে। এ সমাবেশে দেশের আলেম ওলামাদের নিয়ে সহিংস বক্তব্য দিয়েছেন কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম তানভীর আরাফাত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার বক্তব্যের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।

বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় যুবলীগ সভাপতি কয়া ফুলতলা গ্রামের বাসিন্দা মহিরুদ্দিন সেখের ছেলে আনিচুর রহমান আনিচসহ (৩৫) আরও দু’জনের সম্পৃক্ততার অভিযোগে মামলা হয়েছে। বাকি দুইজন হলেন, নাসির উদ্দিনের ছেলে সবুজ হোসেন (২০) এবং বুদ্দিন মন্ডলের ছেলে হৃদয় হোসেন (২০)।

সোমবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে কুষ্টিয়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সেলিনা খাতুন শুনানি শেষে এই তিন আসামিকে তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

প্রাথমিক তদন্তে যুবলীগের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়ার পরও আলেম সমাজকে নিয়ে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপারের সহিংস বক্তব্য দেওয়ায় অনেকেই সামাজিগ যোগাযোগ্য মাধ্যমে প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক ও ইসলামী সংগঠনগুলো কর্মীরা ভিডিও ক্লিপটি আপলোড করে তার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা বলছেন, একজন পুলিশ সুপারের নিরপেক্ষ থাকার উচিত ছিল। তা ছাড়া যুবলীগ নিয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করেননি। কিন্তু বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুরের মামলায় যুবলীগ নেতাসহ  তিন জনকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনার প্রতিবাদের সমাবেশে দেখা যায়নি কয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল ইসলামকে।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, কয়া ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা ও ভাস্কর্য ভাঙচুর মামলার আসামি আনিচুর রহমান তার সঙ্গে রাজনীতি করেন। ঘটনার দিন সকালে জিয়াউল ইসলাম যখন গণমাধ্যমে বক্তব্য দেন, তখনো আনিচুরকে তার সঙ্গে দেখা গেছে।

কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম তানভীর আরাফাত বলেন, মৌলবাদীদের এদেশে দরকার নেই। আমার বাবার জানাজা আমি নিজেই পড়াতে পারবো। আমি ৪ বার কুরআন খতম করেছি। নিয়মিত নামাজ পড়ি। সুতরাং দেশের সংবিধান মেনেই আপনাকে এদেশে থাকতে হবে। যদি সংবিধান না মানেন তাহলে আপনাদের জন্য তিনটি অপশন।

‘এক. উল্টাপাল্টা করবা হাত ভেঙে দেব, জেল খাটতে হবে। দুই. একেবারে চুপ করে থাকবেন, দেশের স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস নিয়ে কোনো প্রশ্ন করতে পারবেন না। তিন. আপনার যদি বাংলাদেশ পছন্দ না হয়, তাহলে ইউ আর ওয়েলকাম টু গো ইউর পেয়ারা পাকিস্তান।’

তিনি বলেন, যারা যে উদ্দেশ্যে এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকুক না কেন, প্রত্যেকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্য দল থেকে অনুপ্রবেশকারী কাউকে দলের পদ দেওয়া হলে যেসব নেতা পদ দেবেন, তাদের বিরুদ্ধেও সংগঠন থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অসাম্প্রদায়িক বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে কোনো মৌলবাদী বা দুষ্কৃতকারীর ঠাঁই হবে না।

প্রসঙ্গত,  গত বৃহস্পতিবার রাতে কুমারখালী উপজেলার কয়া গ্রামে বাঘা যতীনের ভাস্কর্যটি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গত শুক্রবার বিকেলে কয়া কলেজের অধ্যক্ষ হারুন অর রশীদ বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেন।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে, আনিচুর রহমানের নেতৃত্বে কয়েকজন যুবক সরাসরি ভাস্কর্য ভাঙচুরে অংশ নিয়েছেন। কয়া মহাবিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বে এ ঘটনা ঘটানো হয়।

আই.এ/

মন্তব্য করুন