বাংলাদেশে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সাক্ষী ‘দরবার স্তম্ভ’

প্রকাশিত: ৫:৪৮ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৩, ২০২০

সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলা সদরে অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যতম একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নির্দশন ব্রিটিশ বিরধী আন্দোলনের সাক্ষী ‘দরবার স্তম্ভ’। প্রাচীন এ স্তম্ভটির নিচের দিকে ২ দশমিক ৮ মিটার চৌড়া, ক্রমশ সরু হয়ে উপরের দিকে উঠেছে ৩ দশমিক ৭ মিটার উচ্চতায়। পুরোপুরি ইটের তৈরি গোল স্তম্ভটির মাথার ওপর একটি বড় কলস, তার ওপর আরেকটি ছোট কলসের চিহ্ন দেখা যায়।

সেই সময়কার বয়ে যাওয়া স্মৃতি নিয়ে আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এ ‘দরবার স্তম্ভ’। ১৯৯৫ সালের পর থেকে বিভিন্ন মহল এই স্তম্ভটি সংরক্ষণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্ব অধিদপ্তর এটিকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে নথিভুক্ত করে বলে জানা গেছে।

বিভিন্ন গ্রন্থ ও ইতিহাস সূত্রে জানা যায়, ভারতীয় উপমহাদেশ যখন ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার ঠিক সে সময় ১৯০৫ সালে ব্রিটিশরা বাংলাকে ভেঙে দেয়ার চক্রান্ত করে, যা বঙ্গভঙ্গ নামে পরিচিত। ১৯১১ সাল পর্যন্ত এর বিরুদ্ধে বাংলার বিভিন্ন স্থানে আন্দোলন করা হয়। আন্দোলনের মুখে ব্রিটিশ সরকার বঙ্গভঙ্গ রদের ঘোষণা করতে বাধ্য হয়।

১৯১১ সালের ১২ ডিসেম্বর এই ঘোষণার আনুষ্ঠানিক বাস্তবায়নের জন্য সম্রাট জর্জ দিলি­তে বৈঠকে বসেন। সম্রাটের এই আগমন উপলক্ষ্যে ও ঐতিহাসিক এই বিজয় উদযাপণ করতে তলা উপজেলায় দরবার স্তম্ভটি তৈরি করেন তৎকালীন রাজনীতিবিদ রাজকুমার বসু। সেই আন্দোলনের সাক্ষী ‘দরবার স্তম্ভ’ মাথা উঁচিয়ে জানিয়ে দিচ্ছে তার অতীত ইতিহাস। স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে আন্দোলন-সংগ্রামের অজস্র গল্প।

তালা বাজারে খুলনা-পাইকগাছা সড়কের পাশে নির্মিত দরবার স্তম্ভটি এক সময় ঢেকে পড়েছিল অবৈধ স্থাপনায়। গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করায় বেরিয়ে আসে স্তম্ভটি। এরপর প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এটিকে পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করে। তবে দরবার স্তম্ভের সেই লাল ইটের চিহ্ন আজ অনেকটাই বিলীনের পথে। এছাড়া স্তম্ভের আশপাশে গড়ে উঠেছে অবৈধ দোকান-পাট।

স্থানীয় প্রবীণ ব্যাক্তিরা বলেন, আমরা এটিকে ছোটবেলা থেকে দেখছি গায়ে লেখা আছে দরবার স্তম্ভ। শুনেছি, ইংরেজ আমলে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন হয়েছিল। সেই আন্দোলনের সময় এখান থেকে আলোচনা ও পরিকল্পনা করা হতো কিভাবে ইংরেজ হটানো যায়। এখানে ইংরেজদের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামের পরিকল্পনা হতো। অনেকেই আবার বলেন, রাজারা এখানে দাঁড়িয়ে খাজনা আদায় করতেন। এলাকাবাসি এই পুরাকীতি সংরক্ষণের জোর দাবি জানান।

তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইকবাল হোসেন বলেন, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর স্তম্ভটি সংরক্ষণ করে এটিকে পুরাকীর্তি হিসেবে নথিভুক্ত করেছেন।

আই.এ/

মন্তব্য করুন