বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকা থেকে বাদ যাচ্ছে বাংলাদেশের সুন্দরবন

প্রকাশিত: ২:৪৮ অপরাহ্ণ, জুন ২৯, ২০১৯

ইউনেস্কো কর্তৃক ২০১৯ সালের বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকা ঘোষণা করা হয়েছে। মনোনীত স্থানগুলোর নাম প্রকাশ করা হয়েছে এ তালিকায়। এই তালিকায় অনেক বছর ধরে শীর্ষস্থানে থাকা বাংলাদেশের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনকে এ বছর এ তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। বিপদাপন্ন ঐতিহ্য স্থান হিসেবে বেশ কয়েকটি জায়গার নাম ঘোষণা করা হলেও সে তালিকায় প্রথমেই রয়েছে বাংলাদেশের সুন্দরবন। যে কারণে ধারণা করা হচ্ছে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকা থেকে সুন্দরবনকে বাদ দেওয়া হতে পারে।

সুন্দরবনসহ ২০১৯ সালে বিপদাপন্ন হিসেবে চিহ্নিত করা অন্য জায়গাগুলো হলো— বুলগেরিয়ার প্রাচীন শহর নেসেবার, নর্থ মেসেডোনিয়া/আলবেনিয়ার অকরিড অঞ্চলের প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, মেক্সিকোর ক্যালিফোর্নিয়া উপসাগরবর্তী দ্বীপ ও সংরক্ষিত এলাকা, নেপালের কাঠমান্ডু ভ্যালি ও ইরাকের ব্যাবিলন।

আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে এ সপ্তাহে একটি কমিটি ১১ দিনের আলোচনা কার্যক্রম শুরু করেছে। আগামী ১০ জুলাই পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া চলবে। এ সময়ের মধ্যে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় থাকা যেসব জায়গা বিপদাপন্ন সেগুলোর সংরক্ষণের চিত্র ঘেঁটে দেখা হবে।

মূলত এক সময়ের বন্যপ্রানীদের অভয়ারন্য ও তাদের প্রিয় জায়গা সুন্দরবনকে এখন বন্যপ্রাণীদের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। এছাড়া এর কাছে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রক্রিয়া, বন উজাড়সহ পরিবেশবিরোধী কাজের অভিযোগ রয়েছে। সব মিলিয়ে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকা থেকে সুন্দরবনকে ইউনেস্কো বাদ দিতে পারে এ বছরই।

তবে সুন্দরবনের সুরক্ষায় সরকারের কার্যকরি উদ্যোগ থাকলে ও উন্নতি দেখা গেলে ইউনেস্কো বিপদাপন্ন তালিকা থেকে ম্যানগ্রোভ বনটির নাম প্রত্যাহার করতে পারে। তখন তাদের কমিটির ভোটে সুন্দরবন বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় ভালো অবস্থানে ফিরে আসবে।

গত বছর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রবাল প্রাচীর বেলিজ ব্যারিয়ার রিফ রিজার্ভ সিস্টেমকে বিপদাপন্ন তালিকা থেকে প্রত্যাহার করা হয়। মধ্য আমেরিকার দেশ বেলিজের সরকার প্রবাল প্রাচীর সংরক্ষণে বেসরকারি দলের সঙ্গে কাজ করেছে।

এ বছর ফিলিস্তিনের বেথলেহেমে যীশুর জন্মস্থান ও তীর্থভূমির গির্জা আর চিলির হাম্বারস্টোন অ্যান্ড সান্তা লরা সল্টপিটার ওয়ার্কস বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে বিপদাপন্ন তালিকা থেকে প্রত্যাহারের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।

সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্য থেকে বাদ দিলে সেখানে নতুন কোনো স্থানকে তারা জায়গা দিতে পারে। তবে নতুন মনোনয়ন তালিকাকে চূড়ান্ত বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা দেওয়া দীর্ঘ প্রক্রিয়ার অংশ। কারণ বিশেষজ্ঞরা এসব জায়গায় সরেজমিন গিয়ে নিজেদের মূল্যায়ন দেবেন। দর্শনীয় এসব স্থান সংরক্ষণের জন্য কী পদক্ষেপ রয়েছে তা নিরীক্ষা করে দেখবেন তারা। এরপর ইউনেস্কো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছালে তাদের টুইটার অ্যাকাউন্টে নতুন তালিকা প্রকাশ করা হবে।

ইউনেস্কোর মহাপরিচালক আইরিনা বোকোভা জানান, ১৯৭৮ সাল থেকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকা তৈরি শুরু করেছে ইউনেস্কো। শুরুর দিকে এতে স্থান পায় যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্ক, ভারতের তাজমহল, জর্ডানের পেত্রা ও ইকুয়েডরের গালাপাগোস দ্বীপের মতো গন্তব্য। এখন পর্যন্ত ১৬৭টি দেশের ১ হাজার ৯২টি স্থান ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় নাম লিখিয়েছে।

জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (United Nations Educational, Scientific, and Cultural Organization) বা ইউনেস্কো (UNESCO) জাতিসংঘের একটি বিশেষ সংস্থা। বিশ্বে শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির প্রসার এবং উন্নয়নের মাধ্যমে মানুষের জীবন মানের উন্নয়ন ঘটানো এই সংস্থার কার্যক্রম। ১৯৪৫ সালের নভেম্বরে লন্ডন সম্মেলনে ইউনেস্কো প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়। ১৯৪৬ সালে এই সংস্থা জাতিসংঘের সহায়ক সংস্থা হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে। প্যারিসে এর সদর দপ্তর অবস্থিত।

জাতিসংঘের সদস্য রাস্ট্রগুলোই ইউনেস্কোর সদস্য হলেও আমেরিকা এবং ইসরাইল ২০১৯ সালের জানুয়ারী মাস থেকে ইউনেস্কোর সদস্যপদ থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে। মজলুম ফিলিস্তিনিদের স্বীকৃতি দিয়ে ইউনেস্কোর পূর্ণ সদস্যপদ দেওয়ায় আমেরিকা ঘোষণা দিয়ে ইউনেস্কো ত্যাগ করেছে। যুগ যুগ ধরে ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্র ইসরাইলও ইউনেস্কো থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে।

মন্তব্য করুন