কওমী মাদরাসায় কমিটি করতে ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র ঠিক করতে বললেন মুফতী ফয়জুল করীম

প্রকাশিত: ৫:২৬ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৭, ২০২০

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই বলেছেন – ছাত্রলীগ আওয়ামীলীগের গঠনতন্ত্র অনুসারে অসাম্প্রদায়িক দল এবং তারা কওমী মাদরাসাকে বলে সাম্প্রদায়িক শক্তি। তাই আগে গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করে তারপর কওমী মাদরাসায় ছাত্রলীগের কমিটি করার কথা বলুক তারা।

সম্প্রতি কওমী মাদরাসাগুলোতে ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করার ইচ্ছাপোষণ করা নিয়ে দেয়া বিভিন্ন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এ কথা বলেন।

আজ বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) ‘জাহিলিয়াতের অবসান ঘটিয়ে সভ্য পৃথিবী বিনির্মানে বিশ্বনবী স. এর অবদান’ শীর্ষক ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন চরমোনাই কওমীয়া শাখার আয়োজনে চরমোনাইতে অনুষ্ঠিত জাতীয় সেমিনারের বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন চরমোনাই কোন শাখার সভাপতি মোঃ মোশাররফ হোসেন দিনাজপুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন দলের আমীর মুফতী সৈয়দ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই। তিনি ছাত্র জনতাকে পড়াশোনার সাথে সাথে রাজনীতিতে আরও সক্রিয় হওয়ার আহবান জানান এবং নব্য জাহিলিয়াত দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সবাইকে ভূমিকা রাখার কথা বলেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মুফতী ফয়জুল করীম আরও বলেন – কওমি মাদ্রাসায় ছাত্রলীগের কমিটি করবে বলে তারা ঘোষণা দিয়েছে। আমি তাদেরকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। কারণ আমি মনে করি তাদের উচিত কওমি মাদ্রাসা ছাত্রদের সংস্পর্শে আশা। কারন তাহলে ছাত্রলীগের হাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ১০০ ধর্ষণের ঘটনা ঘটবে না। এমসি কলেজে স্বামীর থেকে ছিনিয়ে নিয়ে স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটবে না। ফরিদপুরের ছাত্রলীগের এক নেতার মত দুই হাজার কোটি টাকা পাচার করার ইতিহাস তৈরি হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অস্ত্রের মহড়া হবে না। ছাত্রলীগ নেতা কর্মীদের দ্বারা অস্ত্র চোরাচালানে চলবে না, ইয়াবা খাওয়ার মহড়া চলবেনা, ফেনসিডিল চলবে না, মদ পান করবে না, খুন হবেনা। কারণ কওমী মাদরাসার ছাত্রদের সংস্পর্শে এলে তাদের চরিত্র ঠিক হবে।

একই সাথে তিনি আহবান জানিয়ে বলেন – তবে আমি ছাত্রলীগের সভাপতিকে বলবো – আপনি আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র জানেন না। আওয়ামী লীগ কিন্তু ওলামালীগকে সাম্প্রদায়িক আখ্যা দিয়ে স্বীকৃতি দেয় না! কারণ আওয়ামী লীগ হল নন সম্প্রদায়িক দল। এজন্যই তোমরা ওলামালীগ স্বীকার করতে পারো না। তাই তোমরা কওমি মাদ্রাসায় কমিটি গঠন করতে আসার আগে তোমাদের নীতিমালা সংশোধন করে আসো।

তিনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ধর্মভিত্তিক ছাত্র সংগঠনকে নির্বিঘ্নে কাজ করার আহবান জানিয়ে বলেন – তোমাদেরকে যেহেতু আমরা কওমি মাদ্রাসায় আসার জন্য ওয়েলকাম জানাচ্ছি তেমনি ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আমাদেরকে বাধা না দিয়ে সেখানেও আমাদেরকে স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে দাও। এরপর যাদের আদর্শ ভালো হবে, যাদের চরিত্র ভালো হবে ছাত্র-জনতা তাদেরকেই গ্রহণ করবে এবং যাদের চরিত্র খারাপ হবে ছাত্র জনতা তাদেরকে গ্রহণ করবে না।

সেমিনারে প্রধান মেহমান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নিউইয়র্ক এর ম্যানহাটন মসজিদের ইমাম ও খতিব হাফেজ মাওলানা ইউসুফ আব্দুল মজিদ। প্রধান বক্তা ছিলেন ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি এম হাসিবুল ইসলাম।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর প্রেসিডিয়াম এর অন্যতম সদস্য মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব হাফেজ মাওলানা অধ্যক্ষ ইউনুছ আহমাদ। দলের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর ছাত্র ও যুব বিষয়ক সম্পাদক, চরমোনাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ আবুল খায়ের। ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আল্লামা নুরুল হুদা ফয়েজী। ওমরগণি এমইএস কলেজের সাবেক অধ্যাপক ড. আ ফ ম খালিদ হোসাইন। দৈনিক ইনকিলাবের সহকারী সম্পাদক মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী। বাংলাদেশ কুরআন শিক্ষা বোর্ডের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুজিবুর রহমান। চরমোনাই কওমি মাদ্রাসার নাজেমে তা’লীমাত মাওলানা মোঃ আব্দুল কাদের। জামিয়া সাঈদিয়া কারীমিয়া মুহাদ্দিস মুফতি রেজাউল করিম আবরার।

বিশেষ বক্তা হিসেবে ছিলেন শেখ মোহাম্মদ আল-আমিন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইশা ছাত্র আন্দোলন। ইশা ছাত্র আন্দোলনের কওমি মাদ্রাসা বিষয়ক সম্পাদক নুরুল বশর আজিজি। মাওলানা মোঃ আবু বক্কর সিদ্দিক, মাওলানা রহমত উল্লাহ চাঁদপুরী, ইসমাইল হোসেন লক্ষ্মীপুরী প্রমূখ।

মন্তব্য করুন