ধর্মীয় শিক্ষা বিস্তারে আমাদের চেয়ে বেশি কেউ কাজ করেনি : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ৮:৩১ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৫, ২০২০
শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি। ছবি : প্রধানমন্ত্রীর প্রেস কার্যালয়।
  • বঙ্গবন্ধু ছিলেন ধর্মপরায়ণ, তিনি জনগণের ভাষা বুঝতেন : প্রধানমন্ত্রী

বিজয়ের ৪৯ তম দিবস ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কণ্যা শেখ হাসিনা জাতীর উদ্যেশ্যে বিশেষ একটি ভাষণ দিয়েছেন।

ভাষণে তিনি বলেন – বঙ্গবন্ধু (জাতির পিতা) শুধু একজন খাঁটি মুসলমান ছিলেন না বরং তিনি ধর্মীয় আচারাদি প্রচন্ড নিষ্ঠার সাথে পালন করতেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর ধার্মিকতার উদাহরণ দিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আইন করে মদ, জুয়া ও ঘোড়দৌড়ের মতো কাজ নিষিদ্ধ করেছেন। তিনি ইসলামী ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করা, মাদ্রাসা বোর্ড স্থাপন করা, ওআইসির সদস্য পদ গ্রহণ করা মত কাজগুলো সম্পন্ন করেছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু কন্যা হিসেবে ধর্মীয় দিকগুলোকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করেন জানিয়ে বলেন – আমাদের সরকার ধর্মীয় শিক্ষা প্রচার ও প্রসারে যত কাজ করেছে অতীতে কোনো সরকারই তা করেনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি, আশিটি মাদ্রাসায় অনার্স কোর্স চালু করেছি, কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতি দিয়েছি, দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্স পর্যায়ের মান দিয়েছি, মাদ্রাসা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছি, প্রতিটি জেলা-উপজেলায় দৃষ্টিনন্দন মসজিদ নির্মাণ করেছি, তার সরকারের ব্যবস্থাপনায় ইমাম-মুয়াজ্জিনদের সহায়তার জন্য কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর আওতায় সারাদেশে মসজিদ পাঠাগার স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও লক্ষাধিক আলেম-ওলামাকে গ্রামে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও তিনি উল্যেখ করেন।

এত কিছুর পরেও ১৯৭১ সালের পরাজিত একটি শক্তি মিথ্যা বানোয়াট এবং মনগড়া বক্তব্য দিয়ে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা নিয়ে ইদানিং মাঠে নেমেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তারা সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে বলেও তিনি মনে করেন।

তিনি বলেন – বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালে বলেছিলেন ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ না করতে কিন্তু পরাজিত শক্তির দোসররা দেশকে আবার ৫০ বছরের আগের সেই অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে বলেও তিনি দাবি করেন। একই সাথে রাজনৈতিক শক্তির মদদে তারা সরকারকে ভ্রুকুটি দেখানোর পর্যন্ত ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে বলেও তিনি হুশিয়ারি করেন।

তিনি বলেন – বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ তবে ধর্মান্ধ নয়। ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করবেন না বলেও তিনি সবার প্রতি আহবান জানান।

তিনি বঙ্গবন্ধুর কথা উল্যেখ করে বলেন – তার মত আর কে বাংলাদেশের জনগণের মনের ভাষা বুঝতে পারত তাই তিনি যখন সংবিধান রচনা করেন তখন তিনি মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র এই চারটি মৌলিক বিষয়কে রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় ৭৫ পরবর্তী সরকারগুলো মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত মূল্যবোধ জলাঞ্জলি দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় নিজেদের আসুন চিরস্থায়ী করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলো। তাদের দোসররাই এখন আবার দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘ইতিহাসের এক বিশেষ সন্ধিক্ষণে আজ আমরা বিজয় দিবস-২০২০ উদযাপন করতে যাচ্ছি। এ বছর আমরা আমাদের মহান নেতা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছি। কয়েকদিন পর আমরা আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে পদার্পণ করব।

তিনি বলেন – আমরা স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভ করেছি। গোটা জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমরা করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলা করে সমগ্র বিশ্বের বুকে নতুন উদাহরণ সৃষ্টি করেছি।

পদ্মাসেতুর কথা উল্যেখ করে তিনি বলেন – প্রমত্তা পদ্মার বুক চিরে নিজেদের অর্থায়নে নির্মাণাধীন পদ্মা সেতু মাত্র সপ্তাহ খানেক আগে দেশের দুই প্রান্তকে সংযুক্ত করেছে।

প্রবাসীদের বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন – পৃথিবীর বুকে অন্যতম শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার প্রত্যয় নিয়ে দেশ এবং দেশের বাইরে অবস্থানরত বাংলাদেশের সকল নাগরিককে আমি বিজয় দিবসের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণ বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি), বাংলাদেশ বেতার, বেসরকারি টিভি চ্যানেল এনটিভিসহ অন্যান্য টিভি চ্যানেল ও রেডিও স্টেশনগুলো একযোগে সম্প্রচার করছে।

এর আগে ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০২০’ উপলক্ষে গত ২১ নভেম্বর জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বেসরকারি টেলিভিশন এবং রেডিও চ্যানেলে একযোগে ওই ভাষণ সম্প্রচার করা হয়।

এইচআরআর/পাবলিক ভয়েস

মন্তব্য করুন