

সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতে ইসলামের ঘোষণা : ইসলাম বিদ্বেষীদের নিয়ন্ত্রণ না করলে ধর্মপ্রাণ মানুষ রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতারা বলেছেন, ‘সেক্যুলার’ শব্দের আড়ালে আশ্রয় নেয়া ইসলাম বিদ্বেষীদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ এই কুচক্রী মহলকে রুখে দিতে রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে।
বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে ঈমান-আক্বিদাভিত্তিক দেশের সর্ববৃহৎ অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের নেতারা এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মাওলানা নূরুল ইসলাম জেহাদী।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “সাম্প্রতিক হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমেদ্বীন হাটহাজারী মাদ্রাসার সম্মানিত শাইখুল হাদিস আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী, হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর নায়েবে আমীর মাওলানা সৈয়দ ফয়জুল করিমের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ও জননেত্রী পরিষদ নামক দুটি সংগঠনের পক্ষ থেকে আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহ ও মানহানির মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট বিচারক অভিযোগ তদন্তের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন৷ আমির-এ হেফাজতের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার আর্জিতে মদীনা সনদের প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়েছে, যা এক ভয়াবহ ও সুদূরপ্রসারি চক্রান্তের সুস্পষ্ট আলামত৷ যা শুধু হেফাজতে ইসলাম ও এর আমীর পর্যন্তই সীমাবদ্ধ বলে আমরা মনে করি না, বরং এটা সরাসরি প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গভীর চক্রান্ত বলে মনে হচ্ছে৷ সুতরাং আমরা সকল মিথ্যা মামলার তীব্র প্রতিবাদ ও অনতিবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি ৷ সেই সাথে চক্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ারও আহ্বান জানাচ্ছি”৷
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, “আমরা আরো উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, ইসলাম বিদ্বেষী চিহ্নিত মহল সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেমসমাজের বিরুদ্ধে লাগামহীন ভাবে অভদ্র ও অশোভন বক্তব্য দিচ্ছেন এবং বিষোদগার করছেন৷ তারা মরহুম শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক ও মরহুম সৈয়দ ফজলুল করীম পীর সাহেব চরমোনাইসহ দেশের শীর্ষ ওলামায়ে কেরামের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও জঘণ্য কটূক্তি করছে এবং ঘৃণা ছড়াচ্ছে। এতে দেশে শান্তি-শৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে৷ আজকের সাংবাদিক সম্মেলন থেকে ‘স্যেকুলার’ শব্দের আড়ালে আশ্রয় নেয়া ইসলাম বিদ্বেষীদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ এই কুচক্রী মহলকে রুখে দিতে রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে, ইনশাআল্লাহ”৷
হেফাজত নেতারা বলেন, “শান্তির ধর্ম ইসলামের বিস্তার, মানুষের নৈতিক উৎকর্ষতা বৃদ্ধি ও ঈমান-আমলের উন্নতি সাধনে আবহমানকাল থেকে শীতের মৌসুমে দেশের সর্বত্র অনুষ্ঠিত ওয়াজ মাহফিলের ভূমিকা সর্বজনবিদিত৷ এই সময়ে কওমী মাদ্রাসাগুলো তাদের বার্ষিক মাহফিল অনুষ্ঠান করে থাকে৷ মানুষকে হিদায়াতের পথে চলার আহ্বান ও সৎ-সুন্দর-শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবন যাপনে উদ্বুব্ধকরণে উলামায়ে কেরাম তাদের ধর্মীয় কর্তব্য পালন করে থাকে৷ অথচ নানা অজুহাতে এই সকল আয়োজনে বাধা দেয়া হচ্ছে৷ আজকের এই সাংবাদিক সম্মেলন থেকে নির্বিঘ্নে ওয়াজ মাহফিল আয়োজনের পথে ইসলাম বিদ্বেষী প্রশাসনিক বাধা বিপত্তিসমূহ তুলে নেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি”৷
তারা বলেন, “বাংলাদেশের সংবিধানে নাগরিকদের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। সুতরাং ধমের্র সঠিক ব্যাখ্যাদান ও গোমরাহীর পথ পরিহারের আহ্বান জানানো আলেম সমাজের সাংবিধানিক অধিকার এবং ধর্মীয় কর্তব্য। কোন ব্যক্তি বিশেষ, সংগঠন বা সরকার আলেমদের এই কর্তব্য পালনে হস্তক্ষেপ করার বৈধতা রাখে না। আমরা আশাবাদী যে, কুরআনের শিক্ষা ও দ্বীনের তালিমের বরকতে দেশে আল্লাহর খাস রহমত নাযিল হবে এবং যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দুর্বিপাক থেকে আল্লাহপাক আমাদেরকে হেফাজত করবেন” ৷
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, “বাংলাদেশের যোগাযোগব্যবস্থার ইতিহাসে সর্ববৃহৎ প্রকল্প পদ্মা সেতু ও এর সংযোগ সড়কের গোড়ায় রাজধানীর ধোলাইপাড়ে নির্মিতব্য ভাস্কর্য দেশের সর্বত্র ব্যাপক বিতর্ক তৈরি করেছে৷ সেই পরিপ্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে শীর্ষ ওলামায়ে কেরামের পক্ষ থেকে যে কোন প্রাণীর ভাস্কর্য নির্মাণের বিষয়টি ইসলাম সম্মত নয় বলে সর্বসম্মত ফতোয়া প্রদান করা হয় ৷ যা একটি পত্র দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়েছে”৷
আরো বলা হয়, “বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ জনতা এবং আলেমসমাজের সর্ববৃহৎ ধর্মিয় সংগঠন হেফাজতে ইসলাম ভাস্কর্য নির্মাণ বিষয়ে সরকারকে ইসলামের আকিদা, ঈমান ও শিক্ষার বিরুদ্ধে গিয়ে পৌত্তলিকতা প্রসারের রাষ্ট্রীয় গোমরাহির পথ পরিহার করার আহ্বান জানাচ্ছে”।
আরো বলা হয়- “দেশবরেণ্য আলেমদের এই শান্তিপূর্ণ ও যৌক্তিক উপদেশ এবং দাবিকে বিতর্কিত করার জন্য কুষ্টিয়ায় কে বা কারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার মাধ্যমে একটি ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করেছে৷ হেফাজতে ইসলাম এভাবে নিজ হাতে আইন হাতে তুলে নেয়া কিংবা গোপন তৎপরতার পথ অনুসরণ ও অনুমোদন করে না৷ এটা জানা থাকার পরও সরকার, ক্ষমতাসীন দল ও তাদের সমর্থকদের মধ্যকার ইসলাম বিদ্বেষী একটি মহল কুষ্টিয়ার ঘটনার দায় ওলামায়ে কেরাম ও হেফাজত নেতৃবৃন্দের উপর চাপিয়ে দিয়ে তাদেরকে ঘায়েল করার অপচেষ্টা করছে৷ আমরা ষড়যন্ত্রের এমন ঘৃণিত পথ পরিহার করার জন্য সংশিষ্টদের প্রতি অনুরোধ করছি”।
বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে বলা হয়, “আমরা আশা করব আজকের সাংবাদিক সম্মেলনের পর উদ্ভূত পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রাখার স্বার্থে ও দেশের অগ্রগতি অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে উল্লেখিত সমস্যাগুলো সমাধানে সরকার যথাযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করবে”। লিখিত বক্তব্য পাঠ শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমীর মাওলানা নূরুল ইসলাম জেহাদী ও মাওলানা মাহফুজুল হক।
সহকারী মহাসচিব মাওলানা ফজলুল করিম কাসেমীর পরিচালনায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- নায়েবে আমীর মাওলানা নূরুল ইসলাম জেহাদী, মাওলানা আবুল কালাম, মাওলানা আব্দুল হামিদ (পীর সাহেব মধুপুর), মাওলানা আব্দুল আউয়াল, মাওলানা মাহফুজুল হক, ড. আহমদ আবদুল কাদের, এডভোকেট আবদুর রাকিব, মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া, যুগ্মমহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব, মাওলানা মামুনুল হক, সহকারী মহাসচিব- মাওলানা খুরশিদ আলম কাসেমী, মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, মাওলানা জালাল উদ্দিন আহমদ, মাওলানা শফিক উদ্দিন, মাওলানা জসীম উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজী, মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন, মাওলানা মাসউদুল করীম, মাওলানা সানাউল্লাহ মাহমূদী, কেন্দ্রীয় অর্থসম্পাদক মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী, সহকারী দাওয়াহবিষয়ক সম্পাদক মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, সহকারী প্রচার সম্পাদক মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান, মাওলানা মুহাম্মদ ফয়সাল, কেন্দ্রীয় নেতা মুফতি এনামুল হক, মাওলানা তোফাজ্জল হোসাইন মিয়াজী, মাওলানা আবদুল কুদ্দুস, মুফতি বশিরুল্লাহ, মাওলানা হারুনুর রশীদ, মুফতি রূহুল আমীন, মাওলানা শরিফুল্লাহ, মাওলানা আজিজুর রহমান হেলাল প্রমুখ।