
আগামী রবিবার (১৫ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সম্মেলন (কাউন্সিল)। হেফাজতের একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
হেফাজতের সদর দপ্তর হিসেবে পরিচিতি দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসায় হেফাজতের এ কাউন্সিল হবে বলেও জানা গেছে। হেফাজতের প্রায় সাড়ে ৩’শ জন কেন্দ্রীয় শীর্ষ মুরুব্বিদের উপস্থিতিতে ঠিক করা হবে কে সদ্য ইন্তেকাল করা হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমীর ও বাংলাদেশের সর্বপ্রভাবের আলেম আল্লামা শাহ্ আহমদ শফির স্থলভিষিক্ত হবেন।
তবে আমীর হিসেবে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর নাম এবং মহাসচিব হিসেবে ঢাকার একজন প্রবীণ আলেমের নাম চর্চায় রয়েছে। যদিও ৩ অক্টোবর ঢাকায় হেফাজতের গণসমাবেশের পর অনেক হিসাব পাল্টে গেছে বলেও অনেকের ধারণা। তাছাড়া হেফাজত নেতৃত্ব নিয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামকেন্দ্রীক একটা বিভাজনও রয়েছে।
এসব নিয়ে ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় সম্মেলনকে ঘিরে হেফাজত নেতাদের মধ্যে বিভিন্ন ধরণের তোড়জোড় শুরু হয়েছে বলেও জানিয়েছেন অনেকে। শোনা যাচ্ছে বিভিন্ন গুঞ্জনও।
হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা আমির ও দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার সাবেক মহাপরিচালক শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ. চলতি বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
তারপর থেকে হেফাজতের আমিরের পদটি শূণ্য রয়েছে। মূলত এরপর থেকেই হেফাজত প্রতিষ্ঠার ৮ বছরের মাথায় এসে কাউন্সিলের আলোচনা শুরু হয়।
এদিকে আগামী রবিবার হেফাজতের কেন্দ্রীয় সম্মেলন (কাউন্সিল) উপলক্ষে সারাদেশ থেকে কওমি অঙ্গের শীর্ষ আলেমরা কাউন্সিলে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
জানা যায়, ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি গঠিত হয়েছিল চট্টগ্রাম কেন্দ্রীক কওমী মাদরাসাভিত্তিক অরাজনৈতিক ইসলামী সংগঠন হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশ। যদিও বা পরে অরাজনৈতিক এ সংগঠনটি রাজনৈতিক ফ্যাক্টরও হয়ে দাঁড়ায়।
হটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার প্রধান পরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফিকে আমির ও মাদ্রাসার তৎকালীন সিনিয়র মুহাদ্দিস আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে মহাসচিব করে হেফাজতের ২২৯ সদস্যের মজলিশে শুরা কমিটি গঠন করা হয়েছিল সেই সময়।
তবে একটি সূত্র থেকে জানা যায় – হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব ছিলেন আল্লামা সুলতান যওক নদভী। কিন্তু পরবর্তিতে তেমন কোনো আলোচনা ছাড়াই আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে মহাসচিব বানানো হয়। তার আগে চট্টগ্রামের প্রবীণ আলেম মাওলানা আ. মালেক হালিমও হেফাজতের মহাসচিব ছিলেন বলে একটি তথ্য পাওয়া যায়। তবে আল্লামা শফী ও আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর নেতৃত্বেই হেফাজত অনন্য উচ্চতায় পৌছায়।
আল্লামা আহমদ শফী রহ. এর জীবদ্দশায় শেষ সময়ে হেফাজতের মধ্যে একটি সিন্ডিকেট ছিলো বলে অভিযোগ করা হয়। সে সিন্ডিকেটের আওতায় হেফাজত পথচ্যুত হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়। তবে গত ৩ অক্টোবর ঢাকায় হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরের আয়োজনে বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে বিশাল গণসমাবেশের মাধ্যমে হেফাজতের নতুন জাগরণ হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। তবে এ সমাবেশেও হেফাজত ঢাকা মহানগরীর সেক্রেটারির উপস্থিত না থাকা নিয়ে কিছুটা আলোচনা সমালোচনা শোনা গেছে বিভিন্ন মহলে।
দেশ বরেণ্য শীর্ষ আলেম আহমদ শফি চলতি বছরের গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করার পর হেফাজতের আমিরের পদটি শূণ্য রয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতির বিরোধিতার মধ্য দিয়ে হেফাজতের আত্মপ্রকাশ হলেও সংগঠনটি দেশজুড়ে আলোচনায় আসে ২০১৩ সালে ১৩ দফা দাবিতে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। বিশ্বজুড়ে আলোচনায় আসে ২০১৩ সালে ৫ মে শাপলা চত্বর অবরোধের মাধ্যমে।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ‘আগামী ১৫ নভেম্বর হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
ইতিমধ্যে সম্মেলনকে ঘিরে আমাদের প্রস্তুতি শেষ পযার্য়ে। সারাদেশের ৬৪টি জেলা থেকে হেফাজতের শীর্ষ নেতারা সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন। সেখানে তাদের মতামতের ভিত্তিতে আমাদের আমির নির্বাচিত করা হবে।
আই.এ/

