

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী স্টাডিজ বিভাগের এক ছাত্রী কর্তৃক নুরুল হক নুরকে ধর্ষণ সহযোগী বানিয়ে ছাত্র অধিকার পরিষদের আহবায়ক মামুন ও আর এক দায়িত্বশীল সোহাগের নামে ধর্ষণ মামলা বিষয়ে ফেইসবুক লাইভে এসে ধর্ষণ মামলার বাদীকে ‘দুশ্চরিত্রা’ আখ্যায়িত করায় এবার ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূরের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে।
তবে এ মামলাকেও সরকারী পৃষ্টপোষকতায় করা হয়েছে দাবি করে নুরুল হক বলেছেন – “উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়েই আসলে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় আমাদের রাজনীতিকে নষ্ট করার জন্য আমাদের হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য তিনি এই কাজগুলো করছেন। যে মামলাগুলো করছেন, আমি মনে করি, কোনটার আইনগত ভিত্তি নেই। তাই মামলাগুলো আইনগতভাবে মোকাবেলা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। রাজনৈতিক মামলা আমরা রাজনৈতিকভাবেই মোকাবেলা করবো। এগুলো একেবারেই ভিত্তিহীন।”
তবে অভিযোগকারী ওই শিক্ষার্থী বলেছেন – গত ১১ই অক্টোবর নুরুল হক নূর পেজ থেকে ফেসবুক লাইভে এসে আমার সম্পর্কে বেশ কিছু ”কুরুচিপূর্ণ কথা” বলেছেন।
আজ বুধবার ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আস সামছ জগলুল হোসেনের আদালতে এ মামলাটি করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্বের সেই শিক্ষার্থী, যিনি এর আগে নূরসহ ছাত্র অধিকার পরিষদের ছয় নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণ, ধর্ষণে সহযোগিতা, চরিত্র হনন ও সাইবার বুলিংয়ের অভিযোগে তিনটি মামলা করেছিলেন।
এ আদালতের পেশকার শামীম আল মামুন জানান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫, ২৯ ও ৩১ ধারায় করা মামলার আরজিতে দুইজনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
“বিচারক ওই শিক্ষার্থীর জবানবন্দি নিয়েছেন তবে এখনও কোনো আদেশ দেননি।” আদালতের নিয়ম অনুযায়ী, আদালত মামলা গ্রহণ করে তদন্তের আদেশ দিতে পারেন অথবা খারিজও করে দিতে পারেন।
মামলার আরজিতে ওই শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন, আসামি নুরুল একজন আইন অমান্যকারী, বাকপটু ও ধূর্ত ব্যক্তি। তিনি প্রায়ই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের মনগড়া, আইনবহির্ভূত, সরকার-রাষ্ট্রবিরোধী অসত্য, অর্থহীন ও উসকানিমূলক বক্তব্য কোনো কারণ ছাড়াই নিজেকে ভাইরাল করার জন্য প্রকাশ করে থাকেন। ১২ অক্টোবর বেলা আড়াইটায় তিনি নিজের ফেসবুক আইডি থেকে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন, যেখানে তিনি তাঁকে (ছাত্রী) দুশ্চরিত্রা বলেন, যা একটি মেয়ের জন্য অপমানজনক শব্দ। এ ধরনের উসকানিমূলক বক্তব্য সমাজে ঘৃণা-শত্রুতা-অস্থিরতা-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটায়। তাঁর (ছাত্রী) সুনাম ক্ষুণ্ন ও মানহানি করে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এগুলো শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এই মামলায় পরোয়ানা জারি করে নুরুলকে গ্রেপ্তার করে ন্যায়বিচার করতে ওই ছাত্রী আদালতের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।
এর আগে ওই শিক্ষার্থীর দায়ের করা ধর্ষণ মামলার আসামিদের ধরতে রোববার মধ্যরাতে বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের অভিযানের মধ্যে ফেইসবুক লাইভে এসে ঘণ্টাখানেকের বেশি সময় কথা বলেন ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নূর।
সেখানে বক্তব্যের এক পর্যায়ে মামলার বাদীর ‘চরিত্র’ নিয়ে প্রশ্ন তুলে নূর বলেন, “একেবারেই হাস্যরসাত্মক, ছিঃ! আমরা ধিক্কার জানাই যে, এত নাটক করছে, যেই দুশ্চরিত্রাহীন। যে ধর্ষণের নাটক করছে। স্বেচ্ছায়…।”
তবে এ বিষয়ে আগেই নিজের বক্তব্য ফেসবুকে দিয়ে রেখেছেন নুরুল হক। তিনি লাইভে ‘দুশ্চরিত্রাহীন’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন যার উদ্দিশ্য মেয়েটি দুশ্চরিত্রা নয়।
অপরদিকে ধর্ষণ ও ধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগে গত ২০ ও ২১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর লালবাগ ও কোতোয়ালি থানায় পৃথক দুটি মামলা করেন ওই ছাত্রী।
মামলায় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সাময়িক অব্যাহতি পাওয়া আহ্বায়ক হাসান আল মামুনসহ ছয়জনকে আসামি করা হয়। আসামিদের মধ্যে নুরুলও আছেন। পরে সাইবার বুলিংয়ের অভিযোগে আরও একটি মামলা করেন ছাত্রী।
ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় পরিষদের দুই নেতাকে গ্রেপ্তার করে দুই দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। তাঁরা হলেন মো. সাইফুল ইসলাম ও মো. নাজমুল হুদা। সাইফুল সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক। আর নাজমুল সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহসভাপতি।
আগের দুই মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনশন করছেন ওই ছাত্রী। তিনি বলছেন, সব আসামি গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত তাঁর অনশন চলবে।
এদিকে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যা রয়েছে তা হলো – আইনের ২৫ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কেউ কোনো ডিজিটাল মাধ্যমে ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে, এমন কোনো তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ করেন, যা আক্রমণাত্মক বা ভীতি প্রদর্শক অথবা মিথ্যা; কোনো ব্যক্তিকে বিরক্ত, অপমান, অপদস্থ বা হেয় প্রতিপন্ন করার অভিপ্রায়ে তিনি যদি তা প্রকাশ বা প্রচার করেন, তাহলে তিনি সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড বা তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
২৯ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কেউ কোনো ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে মানহানিকর তথ্য প্রকাশ বা প্রচার করেন, তাহলে তিনি সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
৩১ ধারায় বলা হয়েছে, কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা কোনো ডিজিটাল বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন বা করান, যা বিভিন্ন শ্রেণি বা সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা বা বিদ্বেষ সৃষ্টি করে বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে বা অস্থিরতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে অথবা আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটায় বা ঘটবার উপক্রম হয়, তাহলে তিনি সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড, বা সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।