বাংলাদেশ ইলিশ দিলো, ভারত পেঁয়াজ দেওয়া বন্ধ করলো

প্রকাশিত: ১১:৫৭ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২০

এ বছর ভারতে বিগত বছরের তুলনায় তিনগুন বেশি ইলিশ পাঠানোর অনুমোদন দিয়েছে সরকার বিপরিতে ভারত থেকে পেঁয়াজ পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে ভারত।

সম্রাজ্যবাদী ভারত গরু নিয়ে নাটক এবং পিঁয়াজ ইস্যুতে নাস্তানাবুদ করলেও ভারতে এবারও শারদীয় দুর্গাপূজায় শুভেচ্ছা হিসেবে বাংলাদেশ থেকে সীমিত আকারে ইলিশ রফতানি হবে।

ইতোমধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। জানা গেছে, এবছর দুর্গাপূজায় উপহার হিসেবে ১০ অক্টোবরের মধ্যে ১৪৫০ মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে পাঠাবে বাংলাদেশ। ২২ অক্টোবর দুর্গাপূজার সপ্তমী।

গত বছরও ৫০০ মেট্রিক টন ইলিশ পাঠিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এবার ইলিশের উৎপাদন বেশি হওয়ায় মোট নয়টি সংস্থাকে সর্বনিম্ন ১৫০ মেট্রিক টন করে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ।

বিপরিতে একই ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ার অজুহাতে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে ভারত।

তবে বেনাপোল কাস্টম হাউসের সহকারী কমিশনার কল্যাণ মিত্র চাকমা জানান, ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের কোনো নির্দেশনার খবর তিনি জানেন না। একই কথা বলেন ভোমরা কাস্টম হাউসের সহকারী কমিশনার পারভেজ আমান।

অন্যদিকে সোনামসজিদ স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মেসবাহ বাংলানিউজকে জানান, রোববার আমদানি অর্ডারের বিপরীতে ভারত থেকে ৪৪টি পেঁয়াজের ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করলেও সোমবার নতুন করে কোনো আমদানি অর্ডার নেয়নি ভারত। তিনি আরও জানান, কাস্টমস অ্যাসিসট্যান্ট কমিশনার স্বাক্ষরিত এক আদেশে ভারতের পক্ষ থেকে সোনামসজিদ বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

বাংলাদেশ থেকে ভারতে ইলিশ রফতানি বিষয়ে জানা যায় – গত বছর শারদীয় দুর্গাপূজায় শুভেচ্ছা হিসেবে ৫০০ টন ইলিশ ভারতে রফতানির অনুমতি দিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। তবে বাংলাদেশের মানুষ চায় না ভারতে ইলিশ রফতানি করা হোক। এমনকি কয়েক বছর আগে দেশের বুদ্ধিজীবীরা পরামর্শ দিয়েছিল তিস্তা চুক্তি না করা পর্যন্ত ভারতকে ইলিশ দেয়া যাবে না। দেশে ‘আগে তিস্তা চুক্তি পরে ইলিশ’ শ্লোগান উঠেছিল।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, ইলিশ রফতানি করতে হলে সরকারের অনুমতি নিতে হয়। দেশে ইলিশের উৎপাদন ও চাহিদার কথা বিবেচনায় নিয়ে ২০১২ সালের ১ আগস্ট থেকে ইলিশ রফতানি বন্ধ করে দেয় সরকার। তবে গত বছর শারদীয় দুর্গাপূজায় শুভেচ্ছা হিসেবে ৫০০ টন ইলিশ ভারতে রফতানির অনুমতি দেয়া হয়।

২০১২ সালের পহেলা আগস্ট ইলিশসহ সব ধরনের মাছ রফতানি নিষিদ্ধ করে সরকার। পরে ওই বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর ইলিশ ছাড়া অন্য সব মাছ রফতানিতে অনুমতি দেয়া হয়। ফলে ভারতে বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের কোলকাতায় ইলিশের জন্য হাহাকার পড়ে যায়। এদিকে ইলিশ রফতানি বন্ধ থাকলেও পাচার হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। নানাভাবে ইলিশ ভারতে পাচার হচ্ছে।

পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করা বিষয়ে আরও জানা যায় – হঠাৎ করেই বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। দেশের তিনটি প্রধান স্থলবন্দর দিয়ে সোমবার ভারত থেকে কোনো পেঁয়াজ আসেনি।
পূজা উপলক্ষে বাংলাদেশ থেকে ইলিশ রপ্তানির প্রথম দিনেই ভারত থেকে পেঁয়াজ আসা কেন বন্ধ হলো সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো কারণ কেউ বলতে পারেননি।

ভারত থেকে মূলত সাতক্ষীরার ভোমরা, দিনাজপুরের হিলি ও যশোরের বেনাপোল দিয়ে বেশি পেঁয়াজ আমদানি হয়।

সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের সিএন্ডএফ এজেন্ট শংকর দাস জানান, কয়েকদিন ধরে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টি ও বন্যা দেখা দিয়েছে। এ কারণে ভারতের সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদিত হওয়া অঞ্চলগুলো তলিয়ে গেছে।

তবে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের কোনো নির্দেশনা ভারতীয় সংশ্লিষ্ট সংস্থার দপ্তরের ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়নি। সাধারণত আনুষ্ঠানিকভাবে রপ্তানি বন্ধ করা হলে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়। এর আগেও পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছিল ভারত। তখন দেশে পেঁয়াজের দাম ৩০০ টাকা কেজি পর্যন্ত উঠেছিল। মার্চ মাসে পেঁয়াজ রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় ভারত।

মন্তব্য করুন