আমিই আফগান তালেবান শান্তি আলোচনার পথ তৈরি করেছি : ট্রাম্প

প্রকাশিত: ৪:৪১ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২০

কাতারের রাজধানী দোহায় আফগান সরকার ও তালেবানের মধ্যে আগামিকাল (১২ সেপ্টেম্বর) শুরু হতে যাওয়া শান্তি আলোচনা বিষয়ে মূল ভূমিকা রেখেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমনটাই দাবি করেছেন তিনি।

এর আগে আফগানিস্তানে তালেবানের কাছে পরাজিত হয়ে সে দেশ থেকে সরে যেতে তালেবানের সাথে করা আমেরিকার শান্তিচুক্তি বিষয়েও ট্রাম্প সকল ভূমিকা রেখেছেন বলে দাবি করেছিলেন। যদিও কয়েক দফা তিনি আলোচনা বানচালের চেষ্টা করেছিলেন এবং বলেছিলেন, তালেবানের সঙ্গে শান্তি আলোচনার ‘মৃত্যু’ ঘটেছে।

পরবর্তিতে তালেবান কর্তৃক যুদ্ধ পরিস্থিতি জোরদার করায় আমেরিকা শান্তি আলোচনায় বসতে বাধ্য হয় এবং গত ২৯ ফেব্রুয়ারি কাতারেই তালেবানের সাথে শান্তি আলোচনায় বসে। এরপর আফগানিস্তান থেকে সকল সৈন্য ফিরিয়ে নেবে বলে রাজি হয়ে শান্তিচুক্তি করে।

অপরদিকে দোহায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই শান্তি আলোচনায় কাতার সরকারের প্রতিনিধি দলের সাথে সাথে উপস্থিত থাকবেন আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পাম্পেও। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও শুক্রবার দোহায় যাবেন আন্তঃ আফগান আলোচনায় অংশ নিতে।

তিনি বলেন – “আমি অত্যন্ত গর্বের সাথে ঘোষণা করতে পারি যে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও আন্তঃ-আফগান শান্তি আলোচনার সূচনার জন্য আজ (শুক্রবার) সন্ধ্যায় কাতারের দোহায় শান্তি আলোচনার জন্য ঐতিহাসিক সফরে যাবেন”।

ট্রাম্প আরও বলেছিলেন যে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র খুব অল্প সময়ে আফগানিস্তানে তার সেনাবাহিনীর সংখ্যা হ্রাস করে ৪ হাজারে নামিয়ে আনবে।”

তিনি স্পষ্ট করে বলেন – “আফগানিস্তানের যুদ্ধ পরিস্থিতির প্রচুর অগ্রগতি হচ্ছে। তবে আমরা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আমাদের সৈন্য সংখ্যা ৪০০০ এর নীচে নামিয়ে আনবো।

ট্রাম্প বলেছিলেন, “আমরা বেশ কিছুদিন ধরে তাদের সাথে আলোচনা করেছি, তাদের সাথে শর্ত অনুসারে অনেক সৈন্যকে সরিয়ে নিয়েছি”।

কাতারের রাজধানী দোহায় আগামিকাল (১২ সেপ্টেম্বর) আফগান সরকারের প্রতিনিধি ও তালেবানের প্রতিনিধিদের মধ্যে এ শান্তি আলোচনা শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট সব মহল।

আলোচনা দলে তালেবানের নেতৃত্বে থাকবে মাওলানা আবদুল হাকিম এবং আফগান সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব থাকবে জাতীয় পুনর্মিলন কমিটির হাই কাউন্সিলের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ ও দেশটির ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল সালাম রহিমী।

অপরদিকে আফগানিস্তানের সাথে তালেবানের এই শান্তি আলোচনাকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়ে আন্তর্জাতিক মহল উভয় দলকেই সুন্দরভাবে এই শান্তি আলোচনা সমাপ্ত করার আহবান জানিয়েছেন।।

এক বিবৃতিতে, মাইক পম্পেও এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন – ১২ই সেপ্টেম্বর আফগানিস্তানের শান্তি আলোচনা শুরু হবে। তিনি বলেন, এই আলোচনার শুরুটি আফগানিস্তানের পক্ষে চার দশকের যুদ্ধ ও রক্তপাতের অবসান ঘটাবার ঐতিহাসিক একটি সুযোগ হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে।

পম্পেও আলোচকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন – “এই প্রক্রিয়াটি সফল হওয়ার জন্য উভয় পক্ষকেই সুন্দর ব্যবহার, সংযম এবং নমনীয়তা প্রদর্শন করতে হবে।” তিনি বলেন, আফগানিস্তানের মানুষ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ আলোচনাকে ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করবে এবং তাদের অনুরোধ অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদেরকে সকল ধরণের সমর্থন করতে প্রস্তুত রয়েছে”।

অপরদিকে এই শান্তি আলোচনায় বিশেষ ভুমিকা রাখা আমেরিকার বিশেষ দূত জালমাই খলিলজাদ (যিনি দোহায় তালেবানদের সাথে ১৮ মাস ধরে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন) বলেছেন – এই মুহুর্তটি একটি সুন্দর সময়। তালেবান ও আফগান সরকারের মধ্যে শান্তি আলোচনা সফল হলে আফগানিস্তানে স্থিতিশীলতা ফিরবে।

এছাড়াও আফগান প্রেসিডেন্টের ভবন থেকেও বিষয়টিকে সাধুবাদ জানিয়ে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। এই আলোচনাকে স্বাগত জানিয়ে তারা বলেছেন – তালেবানদের সাথে ১২ সেপ্টেম্বর আলোচনা শুরু করার ঘোষণাটি একটি ভালো মুহুর্ত। “চল্লিশ বছরের যুদ্ধের অবসান করার এটি একটি ঐতিহাসিক সুযোগ, শান্তি আলোচনা ছাড়া এর আর কোনও সামরিক সমাধান নেই বলেও জানান আফগান সরকার।

অপরদিকে তালেবানের কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত ন্যাটো জোটের সেক্রেটারি জেনারেল জেনস স্টলটেনবার্গও আলোচনা শুরুর বিষয়ে এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং বলেছেন, “সকল পক্ষের ঐতিহাসিক সুযোগটি কাজে লাগানো উচিত এবং এত ত্যাগের মাধ্যমে যে লাভ হয়েছিল তা অর্জন করা উচিত।

মন্তব্য করুন